একদিন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার টাকা লুঠ করার চেষ্টা করল তিনটি চোর। তাদের চেষ্টা অবশ্য সফল হয়নি, কিন্তু চোরদের তো গ্রেপ্তার করা দরকার?–তবে বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধে কে? প্রত্যেকটি অপরাধী যেখানে খুন করতে অভ্যস্ত, সেখানে চোরের পিছনে তাড়া করা আর আত্মহত্যার চেষ্টা করায় তফাত কিছু নেই–অতএব শেরিফের দায়িত্ব নিয়ে শান্তিরক্ষার কর্তব্যপালন করার আগ্রহ কেউ দেখাল না।
কিন্তু কমোডার ওয়েন্সকে যখন আত্মহত্যার সহজ পথ দেখানো হলো, অর্থাৎ শেরিফের পদে নিয়োগ করার প্রস্তাব দেওয়া হল, সে রাজি হয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। বিভিন্ন অঞ্চলের অপরাধীদের পাকড়াও করে সেন্ট জন নামক ছোটো শহরের বিচারালয়ে উপস্থিত করার দায়িত্ব নিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে হলব্রুক শহরে এসে পৌঁছোল কমোডোর ওয়েন্স।
তাবৎ হলব্রুক শহর ওয়েন্সকে দেখে হাসাহাসি করতে লাগল–লম্বা সোনালি চুল আর উলটোদিকে ফেরানো রিভলভার নিয়ে এই মেয়েমুখো শেরিফটা যে অতি শীঘ্রই গুলি খেয়ে মরবে, সে-বিষয়ে শহরবাসীর সন্দেহ ছিল না কিছুমাত্র।
নূতন শেরিফ শান্তভাবে তার বাহিনীকে দাঁড় করাল ব্রাউন অ্যান্ড কাইন্ডার নামে ভাড়াটে আস্তাবলের কাছে, তারপর ঘোড়াটাকে যথাস্থানে রেখে অফিসের ভিতর প্রবেশ করল।
একটি ছোকরা এতক্ষণ অফিসে বসে ভাঙা বেহালা মেরামত করছিল। সে ওয়েন্সকে দেখে উঠে দাঁড়াল, তারপর বাইরে বেরিয়ে গেল ধীর পদক্ষেপে।
ওই ছোকরা হচ্ছে জন ভোন্স, ব্রেভান্স ভাইদের চতুর্থ ভ্রাতা। সে আগে কখনো ওয়েন্সকে দেখেনি, কিন্তু লোকের মুখে মুখে লম্বা চুলওয়ালা নূতন শেরিফের বর্ণনা তার শ্রুতিগোচর হয়েছিল। এখন ওয়েন্সকে দেখেই সে তার পরিচয় আন্দাজ করে নিল এবং ওইসঙ্গে এ-কথাও ভেবে নিল যে, নূতন শেরিফের হঠাৎ উপস্থিতির সঙ্গে তার বড়ো ভাই অ্যান্ডি কুপারের একটা অশুভ যোগসূত্রের কার্যকারণ সম্বন্ধ থাকা বিচিত্র নয়–হয়তো অ্যান্ডিকে গ্রেপ্তার করার জন্যই আবির্ভূত হয়েছে শেরিফ ওয়েন্স। অতএব কনিষ্ঠের কর্তব্য হিসাবে সে চটপট যাত্রা করল জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অ্যান্ডির সন্ধানে, তাকে এখনই সাবধান করে দিতে হবে যে!
সত্যি কথা বলতে কী, ওয়েন্সের কাছে অ্যান্ডি কুপারের নামে একটা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। কিন্তু পরোয়ানায় তাকে খুনি বলে অভিযুক্ত করা হয়নি, সেটা ছিল ঘোড়া চুরির অভিযোগ। ওয়েন্স আর অ্যান্ডি ছিল পূর্বপরিচিত। ওই ঘোড়া চুরির ব্যাপারটা নিয়ে আগেও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। এর মধ্যে চুরির অভিযোগ আদালতে উঠেছে, আর অভিযুক্ত অ্যান্ডি কুপারকে গ্রেপ্তার করার ভার নিয়ে হলব্রুক শহরে উপস্থিত হয়েছে কমোডোর ওয়েন্স। কিন্তু আসল ব্যাপারটা ছিল সকলের কাছেই অজ্ঞাত। তাই জন ব্লেভান্স যখন ভ্রাতৃবর অ্যান্ডিকে শেরিফের আগমন-সংবাদ পরিবেশন করতে ছুটল, সেও ভেবে নিল যে, সদ্য-সংঘটিত জোড়া খুনের তদন্ত করার জন্যই এই অঞ্চলে শেরিফ ওয়েন্সের শুভাগমন–অতএব অ্যান্ডি কুপারের অস্তিত্ব এখন বিপন্ন।
হলব্রুক পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকটি বন্ধুর সঙ্গে খোশমেজাজে আড্ডা দিচ্ছিল অ্যান্ডি কুপার। অকস্মাৎ হন্তদন্ত হয়ে সেখানে জন ব্লেন্সের আবির্ভাব!
ওহে অ্যান্ডি, শহরে ওয়েন্স এসেছে।
জানি। অ্যান্ডি বলল।
অ্যান্ডি আগেই অশ্বারোহী ওয়েন্সকে দেখতে পেয়েছিল। তখন সে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু এখন ভাইয়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সে হঠাৎ অনুভব করল, আবহাওয়া মোটেই সুবিধের নয়।
অ্যান্ডি কুপার ছিল চোর এবং খুনি। অনেকবারই সে গোরু ঘোড়া চুরি করেছে। বহু চৌর্যবৃত্তির মধ্যে যেকোনো একটি চুরির অভিযোগ তার নামে থাকতে পারে, তার চেয়েও মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে সদ্য সদ্য দুটি মানুষ খুন করে সে শহরময় তার কীর্তির কথা প্রচার করেছে নিজমুখে এখন সেই খুনের অভিযোগে যদি ওয়েন্স তাকে গ্রেপ্তার করতে এসে থাকে তাহলে তো সময় থাকতে সাবধান হওয়া দরকার।
মুহূর্তের মধ্যে সংকল্প স্থির করল অ্যান্ডি কুপার।
আমি র্যঞ্চে যাচ্ছি, জনকে উদ্দেশ করে বলল অ্যান্ডি।
ক্যানিয়ন ক্রিক নামক স্থানে ব্লেভান্স পরিবারের একটি গোশালা ছিল। কয়েকটা গোরু ওখানে থাকত। অনেকে বলে, গোরু ঘোড়া চুরি করে পাচার করার জন্য লোকের চোখে ধুলো দিতে ওই গোশালাটি রেখেছে ব্লেন্স পরিবার। ওই জায়গাটিরই উল্লেখ করেছিল অ্যান্ডি বন্ধুদের সামনে।
ভাইকে তার পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিয়ে অ্যান্ডি তার ঘোড়াটাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলল। যে-বাড়িতে ব্লেভান্সরা থাকত, সেই বাড়িটা ছিল পূর্বে উল্লিখিত ব্রাউন অ্যান্ড কাইন্ডার নামে আস্তাবলটির কাছে। বন্ধুদের শুনিয়ে সে বলল বটে র্যাঞ্চই হচ্ছে তার গন্তব্যস্থল, কিন্তু ভাইকে আস্তাবল থেকে ঘোড়াটাকে নিয়ে যেতে বলে সে রওনা দিল বাড়ির দিকে কমোডোর ওয়েন্সকে সে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল।
আগেই বলেছি অ্যান্ডি এবং ওয়েন্স পরস্পরের পরিচিত ছিল। কাজেই হলব্রুক শহরের লোক ওয়েন্সের চেহারা ও হাবভাব দেখে যতই হাসাহাসি করুক, অ্যান্ডি ভালো করেই জানত কমোডোর ওয়েন্স কোন ধরনের মানুষ অতএব তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মোটেই ইচ্ছুক ছিল না অ্যান্ডি।