১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আমেরিকার দুজন রাজনৈতিক নেতা পিস্তল হাতে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। উক্ত দুই ভদ্রলোকের নাম ছিল মেজর জেমস জ্যাকসন ও রবার্ট ওয়াটকিন্স। দুই যোদ্ধাই গুলি ছুড়লেন, দুজনের লক্ষ্যই হল ব্যর্থ। আবার পিস্তলে গুলি ভরার চেষ্টা না-করে দুজনেই তিরবেগে ছুটে পরস্পরের নিকটবর্তী হয়ে পিস্তলের নীচে লাগানো ছোটো সঙিনের সাহায্যে শত্রু নিপাতের চেষ্টা করতে লাগলেন। ধারালো সঙিনের খোঁচায় দুজনেরই পোশাক-পরিচ্ছদ হল ছিন্নভিন্ন, দেহ হল রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত এবং একসময়ে দেখা গেল শ্রান্ত ক্লান্ত যোদ্ধাদের শিথিল মুষ্টি থেকে অস্ত্র দুটি পড়ে গেছে মাটির উপর। লড়াই তখনও শেষ হল না। জ্যাকসন আর ওয়াটসন এবার প্রয়োগ করলেন মুষ্টিযুদ্ধ হস্তে মুষ্টিযোগ শুরু হল দারুণ ঘুসোঘুসি। প্রায় ঘণ্টাখানেক মারামারি করার পর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই জ্ঞান হারিয়ে ধরাশায়ী হলেন।
এমন সাংঘাতিক লড়াইয়ের পরেও জয় পরাজয়ের নিষ্পত্তি হল না। ওই দ্বন্দ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার বেশ কয়েক বৎসর পরেও যোদ্ধাদের কে বড়ো এই নিয়ে ভীষণ তর্কের সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই বাগযুদ্ধ কখনো কখনো রূপান্তরিত হয়েছে প্রচণ্ড মুষ্টিযুদ্ধে।
রব রয় ম্যাকগ্রেগর ও স্টুয়ার্ট যোদ্ধা
ডিউক অবমন্টরোজ স্কটল্যান্ডের রব রয় ম্যাকগ্রেগরকে তার নিজস্ব জমি থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। উক্ত ডিউক ছিলেন অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী ও অসাধু প্রকৃতির এক ইংরেজ। রব রয়ের জমি থেকে চালাকি করে তাকে উৎখাত করার পর জায়গাটা নিজেই দখল করে নিয়েছিলেন ডিউক অব মন্টরোজ। ফলে স্কটল্যান্ডের মাটিতে জন্ম নিল এক ইংরেজ-বিদ্বেষী দস্যু–রব রয় ম্যাকগ্রেগর।
১৭৩১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাকগ্রেগর গোষ্ঠী তার প্রতিবেশী স্টুয়ার্ট বংশের সঙ্গে কলহে লিপ্ত হয়ে পড়ল। স্টুয়ার্টদের দলপতি জানাল উভয়পক্ষ থেকে একজন করে নির্বাচিত যোদ্ধা যদি পরস্পরের বিরুদ্ধে অসিহস্তে অবতীর্ণ হয়, তাহলে বহু মানুষের হতাহত হওয়ার সাংঘাতিক সম্ভাবনাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়, কারণ দ্বন্দ্বযুদ্ধের ফলাফল থেকেই সমস্ত বিবাদের নিষ্পত্তি হতে পারে অনায়াসে। ধূর্ত স্টুয়ার্ট দলপতি জানত তার দলের নির্বাচিত যোদ্ধার সমকক্ষ কেউ নেই ম্যাকগ্রেগরদের মধ্যে। রব রয়কে সে গণ্য করেনি। সে ভেবেছিল বৃদ্ধ বয়সে রব রয় আর তলোয়ার ধরতে এগিয়ে আসবে না।
স্টুয়ার্ট দলপতির ধারণা ভুল; স্টুয়ার্টদের নির্বাচিত যোদ্ধার সম্মুখীন হল অসিহস্তে স্বয়ং রব রয় ম্যাকগ্রেগর। বয়স তার যুদ্ধের উদ্যমকে থামিয়ে দিতে পারেনি। ষাট বৎসর বয়সেও রব রয় ছিল ম্যাকগ্রেগর গোষ্ঠীর শ্রেষ্ঠ অসিযোদ্ধা।
শুরু হল লড়াই। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাল আর তলোয়ার নিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করল। এক ঘণ্টার উপর লড়াই চলল–অভিজ্ঞতা ও নৈপুণ্যের বিরুদ্ধে যৌবন-উদ্ধত শক্তির লড়াই। অবশেষে একসময়ে রব ক্লান্ত হয়ে পড়ল; তার বলিষ্ঠ বাহুকে আক্রমণ করল বয়সের ক্লান্তি অনিবার্যভাবে, ঘূর্ণিত অসির চমক হয়ে পড়ল মন্থর। সুযোগ বুঝে আঘাত হানল স্টুয়ার্ট যোদ্ধা বিদ্যুদবেগে তার হাতের শানিত তরবারি প্রতিদ্বন্দ্বীর অসিধারী দক্ষিণ বাহুর মাংস ভেদ করে হাড় পর্যন্ত কেটে বসে গেল। রক্তসিক্ত বিদীর্ণ হস্তে আর অসিধারণ করতে পারল না রব, তার শিথিল মুষ্টি থেকে তলোয়ার খসে পড়ল। অবিচলিত প্রস্তরমূর্তির মতো স্থির হয়ে রব রয় অপেক্ষা করতে লাগল চরম আঘাতের জন্য। কিন্তু আঘাত পড়ল না। বৃদ্ধ রব রয়ের বীরত্ব দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল স্টুয়ার্ট যোদ্ধা। নিজের হাতে কাপড় ছিঁড়ে সে প্রবীণ যোদ্ধার ক্ষতস্থান বেঁধে দিল।
ওই যুদ্ধই রব রয়ের জীবনের শেষ যুদ্ধ। পূর্বোক্ত দ্বন্দ্বযুদ্ধের পর মাত্র তিন বৎসর বেঁচে ছিল। তারপর তার মৃত্যু হয়।
সিনোরিতার শেষ শিকার
ছিপছিপে লম্বা, নিখুঁত মুখ-চোখ, কাকের পাখার মতো কালো কুচকুচে একমাথা চুল–এক কথায় যাকে বলে অপূর্ব সুন্দরী, একবার তাকালে চট করে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।
কিন্তু রে বেনেট নামে যে-মানুষটি উত্তর আমেরিকার একটি পানাগারের মধ্যে গেলাসের তরল পদার্থে চুমুক দিচ্ছিল, সে মেয়েটির দিকে বিশেষ মনোযোগ দিল না–কারণ, সেই মুহূর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর চাইতেও একজন শক্তসমর্থ অভিজ্ঞ গাইড বা পথপ্রদর্শকের সাহায্য ছিল তার কাছে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।
রে বেনেটের সঙ্গে একই টেবিলে বসেছিল তার বন্ধু ফ্রেড ও মেক্সিকান অনুচর কালো। পূর্বোক্ত মেয়েটি পানাগারের দরজা খুলে একবার রে-র দিকে দৃষ্টিপাত করল, তারপর এগিয়ে গেল কার্লোর দিকে।
চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠল কার্লো : সিনর! আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সিনোরিতা জেসুসিতা লোপেজ!
সুন্দরী হাসল। অতঃপর উভয়পক্ষের করমর্দন, পরিচয়ের পালা শেষ। মেয়েটি এবার চেয়ারে বসে কার্লোর সঙ্গে বাক্যালাপ শুরু করল। কয়েক মিনিট পরেই অস্বস্তি বোধ করতে লাগল রে কার্লো এবং জেসুসিতা যে-ভাষায় কথা বলছিল সেই স্প্যানিশ ভাষা ছিল দুই বন্ধুর কাছে দুর্বোধ্য। অবশেষে ধৈর্য হারিয়ে রে বলে উঠল, ওহে কার্লো, এবার কাজের কথা বলো। যে গাইডটির এখানে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল, তার কী হল?