রজার্স তাচ্ছিল্য জানিয়ে বলল, ছাই করবে! তোমার ভাই ক্লারেন্স আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
নোয়াটা শহরে এসে রজার্স বিলকে তুলে দিল বিল স্মিথ নামক ডেপুটির হাতে। সশস্ত্র রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে ক্রফোর্ড গোল্ডসবি ওরফে চেরোকি বিলকে নিয়ে যাত্রা করল ডেপুটি বিল স্মিথ এবং তিনদিন ভ্রমণ করে পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে আরকানসাস নদী পেরিয়ে উপস্থিত হল ফোর্ট স্মিথ বিচারশালায়। পূর্বোক্ত বিচারশালাটি ছিল ওই অঞ্চলের একমাত্র আদালত।
বিচারক আইজ্যাক পার্কার কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত উনষাট জন অপরাধী যে-কারাগারে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিল, সেইখানেই বিচারের আগে বন্দি হয়ে রইল ক্রফোর্ড গোল্ডসবি ওরফে চেরোকি বিল।
১৮৯৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিলকে উপস্থিত করা হল আদালতে বিচারের জন্য। বিচারক পার্কারের এজলাসে বিলের ফাঁসির হুকুম হয়েছিল, কিন্তু জে. ওয়ারেন রিড নামে জনৈক অ্যাটর্নির চেষ্টায় সাময়িকভাবে মুত্যুদণ্ড স্থগিত রইল।
বিলকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল কারাগারে। সেইদিনই কারাগারের লৌহকপাটের ভিতর থেকে তরুণ হন্তারক আঘাত হানল।
লরেন্স কিটিং ও ইয়ফ নামে দুজন কারারক্ষী খুনিদের তত্ত্বাবধান করছিল। সারিবদ্ধ লৌহপিঞ্জরের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে তালা লাগাচ্ছিল ইয়ফ। কোমরে রিভলভার ঝুলিয়ে বাইরে পায়চারি করছিল লরেন্স কিটিং।
চেরোকি বিল যে লৌহপিঞ্জরে আবদ্ধ ছিল, ঠিক তার পার্শ্ববর্তী খাঁচাটা ছিল ডেনিস ডেভিন্স নামে জনৈক অপরাধীর বাসস্থান।
উক্ত ডেনিসের খাঁচার তালা লাগাতে গিয়ে ইয়ফ দেখল চাবি লাগছে না, কারণ, তালার গায়ে চাবি লাগানোর ফুটোটাকে কাগজ ঢুকিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ব্যাপারটা সন্দেহজনক! খাঁচার রেলিং-এর ভিতর দিয়ে বাইরে রিভলভারধারী সঙ্গীর দিকে তাকাল ইয়ফ, ওহে ল্যারি, এখানে একটা গণ্ডগোল হয়েছে। ব্যাপার সুবিধের মনে হচ্ছে না।
আচম্বিতে বিলের খাঁচার দরজাটা খুলে গেল। লৌহকপাট ইয়ফের পৃষ্ঠদেশে আঘাত করল, সজোরে। সঙ্গেসঙ্গে পার্শ্ববর্তী কারাকক্ষ থেকে ইয়ফের লৌহপিঞ্জরে প্রবেশ করল চেরোকি বিল, হাতে তার প্রকাণ্ড রিভলভার।
(ভগবান জানেন রিভলভারটা সে কোথা থেকে জোগাড় করেছিল!)
–খাঁচার দরজার ভিতর দিয়ে রিভলভারটা কিটিং-এর দিকে উঁচিয়ে ধরল বিল, উন্মুক্ত দন্তের ফকে বেরিয়ে এল রোষরুদ্ধ অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর :কিটিং! তোমার হাতের রিভলভার আমাকে দাও। তারপর হাত দুটো উপরে তোলো! চটপট করো!
কিটিং হাত উপরে তুলল না, চটপট নামিয়ে আনল নীচে কোমরবন্ধে আবদ্ধ রিভলভারের বাঁটের উপর। কিন্তু অস্ত্রটাকে টেনে বার করার আগেই গর্জে উঠল বিলের রিভলভার। গুলি লাগল, কিটিং তবুও ধরাশায়ী হল না। আবার গুলি ছুড়ল বিল। এবার পড়ে গেল কিটিং। অপর রক্ষী ইয়ফ তখন খাঁচার ভিতরের দিকে লম্বা গলিপথ ধরে ছুট দিয়েছে। পর পর দু-বার তাকে লক্ষ করে বিল গুলি ছুড়ল।
চারজন প্রহরী গুলির আওয়াজ শুনে অকুস্থলে ছুটে এল। টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল কিটিং, এগিয়ে গেল সহকর্মীদের দিকে। চেরোকি বিল পালাতে চেষ্টা করছে, কিটিং বলল, ও আমাকে খুন করেছে!
কথাগুলো বলেই মাটিতে পড়ে গেল কিটিং। তার মৃত্যু হল তৎক্ষণাৎ।
লরেন্স কিটিং-এর রিভলভারটা মাটিতে পড়ে ছিল। অস্ত্রটাকে কুড়িয়ে নিয়ে বিলের দিকে গুলি চালাল প্রহরী ম্যাককনেল। সঙ্গেসঙ্গে তাকে লক্ষ করে গর্জে উঠল বিলের রিভলভার। দুজনের নিশানাই ব্যর্থ হল, খাঁচার গরাদে প্রতিহত হয়ে সশব্দে ছিটকে গেল বুলেট।
প্রহরীরা এক জায়গায় জড়ো হল। তারা বুঝেছিল চেরোকি বিল আর পালাতে পারবে না। কিন্তু তার কাছে গিয়ে তাকে বন্দি করবে কে? বিলের হাতে রিভলভার আছে, সুতরাং তার খাঁচার কাছাকাছি গেলেই যে গুলি খেয়ে মরতে হবে এ-বিষয়ে সন্দেহ নেই। বিলকে নিরস্ত্র করার কোনো উপায় প্রহরীদের মাথায় এল না।
সমস্যার সমাধান করল বন্দি দস্যু হেনরি স্টার। সে তার কারাকক্ষ থেকে হাঁক দিয়ে বলল, আমাকে যদি তোমরা বিলের কাছে যেতে দাও, তাহলে রিভলভারটা আমি নিয়ে আসতে পারি।
হেনরিকে অনুমতি দেওয়া হল। ডেপুটি মার্শাল ব্রুনার সাবধানবাণী শুনিয়ে বলল, ঠিক আছে হেনরি, তুমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারো। কিন্তু খবরদার, শয়তানির চেষ্টা করতে যেয়ে না!
কোন মন্ত্রে ক্ষিপ্ত বিলকে ঠান্ডা করেছিল হেনরি সে-কথা কারো জানা নেই, তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল তাও কেউ বলতে পারে না–তবে মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিলের কারাকক্ষ থেকে রিভলভারটা নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল হেনরি স্টার। লোহার গরাদের ফাঁক দিয়ে অস্ত্রটাকে সে সমর্পণ করল ব্রুনারের হাতে।
কারাগারের ভিতর থেকে খুনের খবর বাইরে ছড়িয়ে পড়ল, লরেন্সের মৃত্যুসংবাদ শুনে খেপে গেল শহরের মানুষ। এক ক্ষিপ্ত জনতা কারাগার ঘেরাও করে দাবি জানাল হত্যাকারী বিলকে তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতেই তারা খুনির দণ্ড বিধান করতে চায়।
বলা বাহুল্য, মার্শাল জনতার দাবি মানল না। দৃঢ়ভাবে সে জানিয়ে দিল, বিচারক পার্কার যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা করবেন–নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার
অধিকার জনসাধারণের নেই।