শেরিফের কবল থেকে ক্রফোর্ডকে বাঁচানোর জন্য যে মিথ্যা নামটি আবিষ্কার করেছিল কুক ভগ্নী লু, সেই নামটিই স্থায়ী হয়ে গেল ক্রফোর্ডের জীবনে–ক্রফোর্ড গোল্ডসবির পরিবর্তে জন্মগ্রহণ করল দস্যু চেরোকি বিল। পশ্চিম আমেরিকার কুখ্যাত নরহন্তা দস্যুদের ইতিহাসে চেরোকি বিল নামটি অতিশয় পরিচিত।
১৮৯৪ সালে ৮ জুলাই রাত্রে শেরিফ র্যাটলিং গোর্ডকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছিল বিল। তারপর থেকে বিল অধিকাংশ সময়েই নিঃসঙ্গ অবস্থায় ঘুরে বেড়িয়েছে; লুঠতরাজ করেছে বিভিন্ন স্থানে, নরহত্যা করেছে একটার পর একটা। সেই বছরেরই শেষের দিকে যেসব অপরাধ সে করেছিল, সেই দুষ্কর্মগুলির তালিকা আছে ফোর্ট স্মিথ আর্ক নামক স্থানে। ওই তালিকার দিকে দৃষ্টিপাত করলে জানা যায় নোয়াটা অঞ্চলে ট্রেন-ডাকাতিতে অভ্যস্ত আর এক দস্যুকে সে হত্যা করেছে, তারপর তার হাতে খুন হয়েছে পূর্বোক্ত দস্যুর শ্যালক জন ব্রাউন–অতঃপর বিল কর্তৃক লুণ্ঠিত হয়েছে রেড ফর্ক অঞ্চলের ট্রেন, ওকমালজিতে পার্কিনের দোকান, শ্যাটো এক্সপ্রেস অফিস, করেটার একটা ট্রেন এবং লেনাপা পোস্ট অফিস। মাত্র সাড়ে চার মাসের মধ্যে বারোটি নরহত্যা করেছিল বিল। নিহত বারো জনের মধ্যে শেষ ব্যক্তির নাম আর্নেস্ট মেলটন।
.
তৃতীয় পরিচ্ছেদ : শেষ সংঘাত
১৮৯৪ সালে নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে লেনাপার রাজপথের উপর দিয়ে সবেগে ও সশব্দে ঘোড়া ছুটিয়ে চেরোকি বিল এসে থামল শাফেল্ট-এর দোকানের সামনে।
সঙ্গে তার এক সহযোগী দস্যু, নাম ভার্ডিগ্রিস কিড।
কিডের রাইফেল সগর্জনে কয়েকবার অগ্নিবর্ষণ করল, সঙ্গেসঙ্গে রাজপথ কঁকা। চেরোকি বিল দোকানে ঢুকল, হাতে তার উইনচেস্টার রাইফেল।
তরুণ দোকানি শাফেল্টকে উদ্দেশ করে বিল বলল, যা আছে সব নিয়ে যাব।
ঠিক আছে বিল, সব কিছুই তোমার, বলল শাফেল্ট, তারপর সিন্দুক খুলে দিল।
শাফেল্টের দোকানের পাশেই একটা রেস্তোরাঁ বা ভোজনালয়। ওই রেস্তোরাঁ এবং শাফেন্টের দোকানের মাঝখানে অবস্থান করছিল খানিকটা ফাঁকা জায়গা। রেস্তোরাঁর একটি জানালা দিয়ে আর্নস্ট মেলটন সাগ্রহে ডাকাতির ব্যাপারটা দেখছিল। হঠাৎ বিলের দৃষ্টি পড়ল মেলটনের দিকে। বীরত্বের সাক্ষী হিসাবে দর্শক পেলে খুশি হত বিল, কিন্তু কী কারণে জানি না সেদিন মেলটনকে দেখেই তার মেজাজ ছিল বিগড়ে–ধাঁ করে রাইফেল তুলে সে গুলি চালিয়ে দিল। জানালার কাঁচ ভেঙে মেলটনের মস্তিষ্কে গুলিবিদ্ধ হল। তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করল আর্নেস্ট মেলটন।
এমন অকারণ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ না-করে থাকতে পারল না তরুণ শাফেল্ট :লোকটাকে শুধু শুধু মারলে? কাজটা মোটেই ভালো হল না।
তুমিও বুঝি ওইভাবে মরতে চাও?
না। বিল, তুমি আমার সোনাগুলি নিয়েছ। ওতেই খুশি থেকো, আমার প্রাণ নিয়ে তোমার কিছু লাভ নেই।
ঠিক আছে।
হত্যাকারী দোকানের বাইরে এসে ঘোড়ায় চাপল। ভার্ডিগ্রিস কিড এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল সঙ্গীর জন্য। দোকানের সামনে কয়েকবার গুলি ছুঁড়ে শহরবাসীকে বিদায় সংবর্ধনা জানাল দুই দস্যু, তারপর সবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে শহর ত্যাগ করল।
প্রায় দুই মাইল পথ অশ্বারোহণে অতিক্রম করার পর বিল তার সঙ্গীকে বলল, এবার মালের বখরা নিয়ে তুমি সরে পড়ো। পরের সপ্তাহে টালসি শহরে আমি তোমার সঙ্গে দেখা করব। এখন আমি যাচ্ছি ম্যাগি গ্লাসের সঙ্গে দেখা করতে। ম্যাগি আছে নোয়াটাতে তার আত্মীয়স্বজনের কাছে।
কিড বলল, ওহে বিল, তোমার বান্ধবী ম্যাগির কাছে তুমি যেয়ো না। সবাই জানে তুমি ওখানে যাও। মার্শাল তোমাকে ওইখান থেকেই গ্রেপ্তার করবে। ভালো চাও তো ওইখানে যাওয়া ছেড়ে দাও।
রূঢ়স্বরে বিল বলল, আমার ব্যাপার আমি ভালোই বুঝি। তুমি কি আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাতে চাও?
ভার্ডিগ্রিস কিড ব্যস্ত হয়ে জানিয়ে দিল সেরকম উদ্দেশ্য তার নেই।
অতঃপর লুঠের মাল ভাগ হল। দুই দস্যু চলে গেল দুই দিকে। সেই রাতেই নোয়াটা শহর থেকে পাঁচ মাইল দূরে আইজ্যাক রজার্সের বাড়ির দরজায় এসে ধাক্কা দিল বিল। দরজা খুলে বিলকে দেখে ভারি খুশি রজার্স : আরে দোস্ত যে! তাড়াতাড়ি ঘোড়া রেখে ভিতরে এসো।
আইজ্যাক, তুমি কেমন আছ? বিল বলল, তুমি একবার নোয়াটাতে গিয়ে ম্যাগিকে নিয়ে এসো।
নিশ্চয়, নিশ্চয়।
পথে কারো সঙ্গে আজেবাজে কথা কইবে না। বুঝেছ আইক?
আমাকে তুমি জান না, বিল? আমি কাউকে তোমার কথা বলব না।
আমার কথা অন্য লোককে বললে তোমাকে বেশিক্ষণ বাঁচতে হবে না, আইক।
ওভাবে কথা বলছ কেন? আমি কি তোমাকে বিপদে ফেলতে পারি? বিল, তুমি মিছিমিছি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ।
কিছুক্ষণ পরে ভাইঝি ম্যাগিকে নিয়ে ফিরে এল রজার্স। বিলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যে জায়গা থেকে ভাইঝিকে আনতে রওনা হয়েছিল রজার্স, ঠিক সেই জায়গাতেই অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বিল হাতে তার নিত্যসঙ্গী রাইফেল, চোখের দৃষ্টি কঠোর এবং বিশ্লেষণে তীক্ষ্ণ।
আইজ্যাক সরে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল ম্যাগি : তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি ক্রফোর্ড। আইজ্যাক তোমাকে ধরিয়ে দিতে চায়। আগেও তোমাকে সাবধান করে দিয়েছি আমি। কেন তুমি এখানে এলে?
অনেকেই ও-কথা বলছে বটে, কিন্তু আমি জানি আইজ্যাক আমাকে ধরিয়ে দেবে না।