মারি তো গণ্ডার, লুটি তো ভাণ্ডার–এই হচ্ছে তিন বন্ধুর প্রাণের কথা।
অতএব জিম কুক পাঠিয়ে দিল শ্রীমতী এফিকে খবরাখবর সংগ্রহ করতে। বলাই বাহুল্য, লুঠের একটা অংশ এফির হস্তগত হবে এই ধরনের আশ্বাস তাকে দেওয়া হয়েছিল।
দিন দুই পরে ফিরে এসে এফি জানাল অবস্থা অনুকূল, মার্শালরা এখন টেলাকুয়া শহরে অনুপস্থিত।
জিম বলল, তাহলে তুমি বলছ এখন নিরাপদে কাজ হাসিল করা যাবে?
এফি সহাস্যে বলল, আলবত! ভয়ের কোনো কারণ নেই।
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে জিম কুক একবার এফির দিকে তাকাল। তার মনে হল এফি যেন জোর করে সহজ হতে চাইছে। সে যেন একটু বেশিরকম হাসিখুশি, বড়ো বেশি সপ্রতিভ।
জিম তার সঙ্গীদের একান্তে ডেকে চুপি চুপি বলল, হাওয়া সুবিধের নয়। মনে হচ্ছে এফি শয়তানি করে কর্তাদের কাছে আমাদের খবর পাঠিয়েছে।
বিল বলল, কিন্তু ও তো শহরে গিয়েছিল। খবর দিতে হলে শহরের ভিতর না-গেলেও চলত। এখান থেকেও খবর পাঠানো যায়।
জিম ঘাড় নাড়ল, তা বটে। কিন্তু এফির হাবভাব আমার মোটেই ভালো লাগছে না।
তিন বন্ধু সতর্ক হয়ে গেল। দিনের আলোতে যে তাদের কেউ ধরতে আসবে না, এ-বিষয়ে তারা নিঃসন্দেহ। হঠাৎ যদি পলায়নের প্রয়োজন হয়, তাই ঘোড়াগুলিকে জিন লাগাম চড়িয়ে তারা তৈরি রাখল। তারপর চটপট শেষ করে নিল নৈশভোজন।
ধীরে ধীরে রাত বাড়ে। ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। তিন স্যাঙাতের চোখে ঘুম নেই। অনাগত বিপদের আশঙ্কায় তারা জেগে আছে অতন্দ্র প্রহরায়।
অন্ধকারের ভিতর হঠাৎ লাগাম টানার শব্দ। ঘোড়ার জিনে চামড়ার মচ মচ আওয়াজ। কারা যেন আসছে!
ছায়াচ্ছন্ন রাতের আঁধারে আত্মগোপন করে অগ্রসর হল তিন পলাতক আসামি, হাতে তাদের উদ্যত রাইফেল।
কয়েক মিনিট পরেই চেরোকি নেশান অঞ্চলের শেরিফ এলিস র্যাটলিং গোর্ড ঘোড়ায় চেপে সরাইখানার সম্মুখবর্তী ফাঁকা জায়গাটার উপর এসে দাঁড়াল; সঙ্গে তার একদল সশস্ত্র রক্ষী।
রক্ষীদের নাম সিকুয়া হোস্টন, বিল নিকেল, আইজ্যাক গ্রিস, ব্র্যাকেট, হিকস, ডিক ক্রিটেনডেন ও জেক ক্রিটেনডেন। পূর্বোক্ত ডিক ক্রিটেনডেন হচ্ছে শ্রীমতী এফির পূর্বতন স্বামী (বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে বিচ্ছিন্ন) আর জেক হচ্ছে তার ভাই, অর্থাৎ এফির দেবর।
দস্যুদের সন্দেহ সত্য। এফি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
এবার ওদের একটু ওষুধ দেওয়া দরকার, শান্তস্বরে বলল ক্রফোর্ড; তারপরই গুলি ছুড়ল। লক্ষ্য ব্যর্থ হল না, ঘোড়ার উপর থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ল সিকুয়া হোস্টনের মৃতদেহ।
পরক্ষণেই অগ্নি-উগার করে গর্জে উঠল কুক ভাইদের জোড়া রাইফেল। লড়াই শুরু হল।
রক্ষীবাহিনী পাগলের মতো ঘোড়ার পিঠ থেকে মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তারপর এদিক-ওদিক ছুটে আড়াল খুঁজে গুলি থেকে প্রাণ বাঁচাতে সচেষ্ট হল। আরোহীবিহীন ঘোড়াগুলো তীব্র হ্রেষাধ্বনি তুলে ছোটাছুটি শুরু করল। অন্ধকারের ভিতর থেকে শোনা গেল একাধিক যাতনাকাতর কণ্ঠে ক্রুদ্ধ শপথবাক্য ও অভিশাপ।
তারপরই কে যেন চেঁচিয়ে উঠল, ওই যে এক বেটা!
তৎক্ষণাৎ জাগল অনেকগুলো আগ্নেয়াস্ত্রের গর্জন-ধ্বনি, ছুটে এল তপ্ত বুলেটের ঝটিকা–জিম কুকের দেহ বিদ্ধ করল সাত-সাতটা গুলি।
গুলির আওয়াজ থামাল কিছুক্ষণ পরে। আশেপাশের ঝোপঝাড়ে শব্দ উঠল; আগেকার আশ্রয়স্থল ছেড়ে আরও ভালো জায়গায় আড়াল খুঁজে সরে যেতে চাইছে বন্দুকধারী মানুষ। আবার জাগল নূতন শব্দের তরঙ্গ। অশ্বখুর-ধ্বনি। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে শেরিফ বুঝল শিকার পলাতক খুনিরা পালিয়েছে আধ ঘণ্টা আগেই।
আহত জিম কুককে মাঝখানে নিয়ে অদ্ভুত কৌশলে ঘোড়া ছুটিয়ে বিল আর ক্রফোর্ড এসে পৌঁছোল কুক ভাইদের এক বোনের বাড়ি। বিল এবং ক্রফোর্ডের হাতে হাত মিলিয়ে আহত জিমকে ঘরের ভিতর দিয়ে আসতে সাহায্য করল ভগ্নী লু, তারপর ক্ষতগুলো ধুয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিল।
তোমরা এবার ওকে চটপট সরিয়ে নিয়ে যাও,লু বলল, শেরিফ র্যাটলিং গোর্ড এখনই এখানে এসে পড়বে।
বিল বলল, শেরিফ যদি বেঁচে থাকে তাহলে সে এখানে আসতে পারে বটে, কিন্তু জিমকে বাইরে নিয়ে গেলে সে নির্ঘাত মারা পড়বে।
লু উত্তর দিল, তোমরা যদি ওকে এখনই বাইরে না-নিয়ে যাও, তাহলে কি ও বাঁচবে? এখানে থাকলে ও মরবে ফাঁসিতে ঝুলে।
তা বটে। লু-র যুক্তি অস্বীকার করতে পারল না দুই দস্যু। আহত সঙ্গীকে নিয়ে তারা বাইরে বেরিয়ে গেল। সঙ্গেসঙ্গে আঁধার রাতের গর্ভ ভেদ করে তাদের কানে ভেসে এল ধাবমান অশ্বের পদশব্দ। তারপরই সব চুপচাপ। একবার মার খেয়ে শেরিফ বুঝেছে পলাতক তিন আসামি অতি ভয়ংকর চরিত্রের মানুষ–ওরা অন্ধকারেও নির্ভুল লক্ষ্যে গুলি চালাতে পারে এবং নরহত্যা করতে তাদের দ্বিধা নেই বিন্দুমাত্র। দ্বিতীয়বার ভুল করল না শেরিফ র্যাটলিং গোর্ড, সদলবলে : বাড়িটাকে ঘিরে ফেলল নিঃশব্দে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর শেরিফ বুঝল শিকার পলাতক, সে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করল।
একটি গামলার ভিতর রক্তাক্ত জল দেখতে পেল শেরিফ। অভিজ্ঞ আইনরক্ষক বুঝল দস্যুরা একটু আগেও এখানে ছিল। লুর উদ্দেশে প্রশ্ন নিক্ষেপ করল শেরিফ, তোমার ভাইদের সঙ্গে যে-লোকটি এখানে এসেছিল, সে কে? আমার মনে হয় ওই লোকটি হচ্ছে ক্রফোর্ড গোল্ডসবি।
লু মাথা নাড়ল, না ক্রফোর্ড নয়। লোকটির বেশ বয়স হয়েছে। ভাইরা বলছিল ওর নাম চেরোকি বিল।