একটি দোকানের সামনে বসে ছিল দুই ব্যক্তি। রূঢ় দৃষ্টি মেলে চারদিক পর্যবেক্ষণ করছিল তারা। দুজনের মধ্যে যে লোকটি বয়সে বড়ো, সে হঠাৎ হাত তুলে বন্ধুর মতো হাঁক দিল, ওহে ছোকরা! পিছন দিকের আস্তাবলে তোমার ঘোড়াটাকে নিয়ে যাও। আর জনকে বলো ঘোড়াটাকে দলাইমলাই করে কিছু দানাপানির ব্যবস্থা যেন করে দেয়। আমরা হচ্ছি জিম কুক আর বিল কুক। তুমি হয়তো আসার পথে আমাদের নাম শুনে থাকবে।
হয়তো শুনেছি, গোল্ডসবি সতর্কভাবে উত্তর দিল, অবশ্য আমি যাদের কথা ভাবছি, তোমরা যদি সেই লোক হও।
আমরাই সেই লোক, জানাল জিম কুক।
অল্পবয়সি খুনিটি অনেকদিন পরে পেট ভরে খেতে পেল। নতুন বন্ধুদের ব্যবহারে সে কৃতজ্ঞ বোধ করল। সে আরও লক্ষ করল উইটাম্পকা শহরের মানুষ তার বন্ধুদের সঙ্গে তাকেও যথেষ্ট সমীহ করছে। শহরবাসীর সমীহ করার কারণ ভয়ে ভক্তি–জিম আর বিল তদানীন্তন কালের দুর্ধর্ষ দস্যু। ক্রফোর্ড গোল্ডসবিকে পূর্বোক্ত দুই দস্যুর গৃহে অতিথি হতে দেখে শহরবাসী ভেবে নিয়েছিল নবাগত মানুষটিও নিশ্চয়ই ভয়ানক চরিত্রের এক দুবৃত্ত না হলে সে দস্যুদের গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করবে কেন?
কয়েকটা দিন কাটল। ক্রফোর্ড তখন বেশ সুস্থ। তার ঘোড়াটিও পরিচর্যার ফলে বেশ তাজা হয়ে উঠেছে। কুক ভাইরা বুঝল এইবার ক্রফোর্ডকে কাজে লাগানো যায়। তাদের দলে এখন নতুন মানুষ দরকার। রতনে রতন চেনে ক্রফোর্ডকে দেখেই কুক ভাইরা বুঝে নিয়েছিল এই ছোকরা বেশ কাজের হবে।
জিম কুক টোপ ফেলল, স্কেলস বুড়োর দোকানে বেশ ভালো টাকাকড়ি পাওয়া যেতে পারে।
মাছ টোপ খেল; ক্রফোর্ড বলল, লুঠেরা মানুষ কাজের জায়গার কাছাকাছি বন্ধুবান্ধব রাখে। এই শহরের লোক আমাদের যথেষ্ট ইজ্জত দেয়। সুতরাং বন্ধু পাওয়া খুব কঠিন হবে না।
জিম বলল, লুঠেরা মানুষ বন্ধুর পরোয়া করে না। লুঠেরার বন্ধু নেই, থাকতে পারে না। লুঠেরা যদি মনে করে তার বন্ধু আছে, আর সেই বন্ধুর ভরসা যদি সে করে তার দফা শেষ খুব বেশিদিন তাকে দুনিয়ার আলো দেখতে হবে না।
ক্রফোর্ড কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর বলল, ঠিক আছে। তোমরা যা ভালো বুঝবে, তাই হবে।
এইসব কথা যেদিন হল, ঠিক তার পরের দিনই স্কেলস মার্কেন্টাইল স্টোর্স নামে দোকানটার ওপর রিভলভার হাতে হানা দিল তিন দুবৃত্ত–জিম কুক, বিল কুক ও গোল্ডসবি ক্রফোর্ড।
তারা মুখোশ অথবা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে আত্মপরিচয় গোপন করার চেষ্টা করল না। বুক ফুলিয়ে ডাকাতি করে টাকা নিয়ে সরে পড়ল তিন স্যাঙাত। শহর থেকে অনেক দূরে একটা বনের মধ্যে টাকাকড়ির ভাগবাটোয়ারা হল।
গোল্ডসবি ক্রফোর্ড মনে মনে গর্ববোধ করতে লাগল–সে এখন সাধারণ খুনি নয়, স্বনামধন্য কুক দস্যুদের যোগ্য সহকর্মী এক লুঠেরা সে!
কুক ভাইরা কিন্তু হতাশ হয়েছিল। জিম কুক তার লুঠের বখরা পকেটস্থ করে বলল, ধৎ! কিচ্ছু হল না। আরও অনেক বেশি টাকা পাওয়া উচিত ছিল।
আরও অনেক জায়গা আছে যেখানে মালকড়ি পাওয়া যায়, ক্রফোর্ড বলল, শুধু সঠিক জায়গা চিনে হানা দেওয়া দরকার।
জিম বলল, এই ক্রিক নেশান এলাকায় মালকড়ি বিশেষ নেই।
ক্রফোর্ড বলল, চেরোকি এলাকাতে ভালো রেস্ত পাওয়া যায়।
জিম মন্তব্য করল, তা যায়। তবে ওই জায়গার হাওয়া বড়োই ফাঁকা, আর ওই ফাঁকা হাওয়ার উপর ঠ্যাং ছুঁড়তে ছুঁড়তে শূন্যে ঝুলতে মোটেই ভালো লাগে না, বুঝেছ দোস্ত?
বিল এতক্ষণ চুপচাপ ছিল, এইবার সে মুখ খুলল, আরে! ফাঁসিতে ঝোলাতে হলে লুঠেরাকে আগে ধরতে হবে তো! আমরা সেই সুযোগ দেব কেন? আমার মনে হয় বব আর এফির সাহায্যে আমরা গা-ঢাকা দিতে পারব।
জিম সায় দিল, তা বটে।
কুক ভাইরা যার কথা বলল সেই বব হার্ডিন হচ্ছে কুক ভাইদের শ্যালক। শালাবাবু কাজ করত এফি ক্রিটেনডেন নামে এক মহিলার সরাইখানাতে। সরাইখানাটির নাম হাফওয়ে হাউস। ওই হাফওয়ে হাউস ছিল ফোর্ট গিবসন ও টেলাকুয়া প্রদেশের মধ্যস্থলে অবস্থিত একমাত্র বিশ্রামাগার। পূর্বোক্ত দুটি প্রদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী পথিকদের বিশ্রাম ও খাদ্যগ্রহণের জন্য হাফওয়ে হাউস ছাড়া অন্য কোনো সরাইখানা সেই অঞ্চলে ছিল না।
বিল কুক বলল, সে যাই হোক, ওই সরাইখানায় ববের কাছেই আমাদের যেতে হবে। স্কেলস বুড়োর দোকান লুঠ করার পর এখন আর এই এলাকার মানুষ আমাদের সুনজরে দেখবে না। অতএব চলো ববের কাছে।
পর্বতসংকুল পথের উপর দিয়ে ঘোড়ায় চেপে তিন স্যাঙাত চলল বব হার্ডিনের সঙ্গে মোলাকাত করতে। অধিকাংশ সময়েই রাতের দিকে তারা ভ্রমণ করত অশ্বপৃষ্ঠে। ওইভাবে ঘোড়া চালিয়ে কয়েকটা পাহাড় পার হয়ে তারা এসে পৌঁছোল তাদের লক্ষ্যস্থল হাফওয়ে হাউস নামক পূর্বে উল্লিখিত সারাইখানাতে।
বব এবং কত্রীঠাকুরানি এফি মহানন্দে তাদের অভ্যর্থনা জানাল। তবে কয়েকটা দিন সেখানে কাটিয়েই তারা অধৈর্য হয়ে পড়ল। তা ছাড়া ব্যাপারটা ব্যয়সাপেক্ষ। এফি ঠাকুরানি ব্যাবসা করছে, বিনা পয়সায় দস্যুদের আশ্রয় ও আহার সে দেবে কেন?
নাঃ, এভাবে পকেটের টাকা খরচ করার কোনো মানে হয় না। অতএব পরামর্শ-সভা বসল তিন বন্ধুর মধ্যে। টেলাকুয়া শহরে অর্থ উপার্জনের উপায় আছে। উপায়টা অবশ্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
গোয়িং স্নেক ও টেলাকুয়া পরগনার রাজধানী হচ্ছে টেলাকুয়া। রাজধানীতে আইনরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা–ফোর্ট স্মিথ থেকে যুক্তরাজ্যের এক দঙ্গল মার্শাল জমায়েত হয়েছে ওই শহরে। রাজধানী টেলাকুয়া তাই মার্শালদের সবচেয়ে বড়ো ডেরা, অর্থাৎ হেড কোয়ার্টার। ওখানে ডাকাতির চেষ্টা করা মানেই ভিমরুলের চাকে ঘা দেওয়া। কিন্তু তিন স্যাঙাত বদ্ধপরিকর। ওই শহরে মানুষজনের টাকা আছে, বিপদের ঝুঁকি না-নিলে লাভের আশা কোথায়?