নিহত হস্তীর মস্তক পরীক্ষা করে একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়া গেল। রাইফেলের তিনটি বুলেটই হাতির মাথায় লেগে চূর্ণবিচূর্ণ–ভাঙাচোরা বুলেটের ত্র্যহস্পর্শে চিহ্নিত ওই করোটিকে পাঠানে হয়েছিল জাদুঘরে; পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল হাতির মগজের উপর যেখানে মর্মস্থলের অবস্থান, সেই নির্দিষ্ট স্থান থেকে পাক্কা সাড়ে নয় ইঞ্চি উপরে রয়েছে এই সৃষ্টিছাড়া জন্তুটার মর্মস্থান! তামাম দুনিয়ার হাতিদের মধ্যে এমন বিকৃত মস্তিষ্ক-র উদাহরণ কোথাও পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কের ওই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের জন্যই শিকারিদের নিক্ষিপ্ত গুলির পর গুলি ব্যর্থ হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে হতভাগ্য বিল এবং খাদটা না-থাকলে বমবো আর আত্তিলিওর অবস্থাও যে বিলের মতোই হত সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই।
.
পঞ্চম পরিচ্ছেদ – বিদায় আফ্রিকা ১৯৩৯
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কামান-গর্জন যখন শুরু হল, আত্তিলিও তখন আফ্রিকার এক দুর্গম অঞ্চলে বিভিন্ন গবেষণায় ব্যস্ত। আফ্রিকা ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা তার ছিল না, কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠল বলে তিনি আমেরিকাতে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন। আফ্রিকা থেকে বিদায় নেবার আগে তিনি দ্বিতীয়বার কিভুর অরণ্যে প্রবেশ করে একটি মস্ত বড়ো গরিলা শিকার করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রিটোরিয়া মিউজিয়াম অব সাউথ আফ্রিকা।
তবে মোয়ামি ন্গাগি নামে যে-জন্তুটাকে তিনি আগে মেরেছিলেন, সেটার সঙ্গে অন্য গরিলার তুলনা হয় না। উক্ত মোয়ামি ন্গাগি হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম গরিলা–অন্তত এখন পর্যন্ত অত বড়ো গরিলা কেউ শিকার করতে পারেনি।
কিবালির নিম্নভূমিতে অবস্থিত বনে-জঙ্গলে হানা দিয়ে ওকাপি নামক দুষ্প্রাপ্য পশুকে বন্দি করতে সমর্থ হয়েছিলেন আত্তিলিও। একটি নয় দুটি নয়–পাঁচ-পাঁচটি ওকাপিকে তিনি ধরেছিলেন। এক ধরনের অদ্ভুত জিরাফের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন আত্তিলিও। জন্তুগুলোর নাম দিয়েছিলেন অকোয়াপিয়া কিবালেনসিস।
ওইসব বিচিত্র তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহ করার জন্য আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে আত্তিলিও ভ্রমণ করেছেন। ক্রিস্টাল পর্বতমালার অরণ্যে, লুয়ালালাবা ও কাসাই নদীর তটভূমিতে অ্যালবার্ট, এডওয়ার্ড, টাঙ্গানিকা প্রভৃতি হ্রদের তীর থেকে তীরে–সর্বত্র অশ্রান্ত পদক্ষেপে ঘুরেছেন আত্তিলিও, রহস্যময়ী আফ্রিকার বুকের ভিতর থেকে গোপন সম্পদ উদ্ধার করে নিয়ে আসতে চেয়েছেন লোকচক্ষুর গোচরে…
উনচল্লিশ জাতের পশুপক্ষী, সরীসৃপ এবং ছেষট্টি রকমের কীটপতঙ্গ ও দু-শো অজ্ঞাত উদ্ভিদের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিলেন আত্তিলিও।
আফ্রিকা ছেড়ে যাওয়ার সময়ে তিনি বলেছিলেন, যদি ঈশ্বরের ইচ্ছা হয় তাহলে আবার আমি ফিরে আসব আফ্রিকাতে, আবার এখানে শুরু করব গবেষণা আর অনুসন্ধানকার্য। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৮০