আর অন্যজন আর্জুমান্দ বেগম!
তবে রোগীর ছোটোভাই আশেক মাহমুদই তাদের ক্লায়েন্ট, সে-ই যাবতীয় খরচ বহন করে। আসকার ইবনে সায়িদ আরো দেখতে পান, আর্জুমান্দ বেগমকে দু-জন নার্স পালাক্রমে সেবা দিয়ে থাকে তাদের একজন তরুণী, অন্যজন অপেক্ষাকৃত মাঝবয়সী।
ডাক্তার দ্রুত অ্যাডমিনে ফোন করে জেনে নেন, আজকের রাতে কোন্ নার্স ডিউটিতে আছে। সেই নার্সের কন্ট্যাক্ট নাম্বারটা নিয়ে নেন তিনি-তরুণী নার্সের নাম জেবুন্নেসা খাতুন।
সঙ্গে সঙ্গে মুশকানকে ফোন দিয়ে এই তথ্যটা জানিয়ে দেন ডাক্তার। সব শুনে মুশকান তাকে বলে, এখন ঠাণ্ডা মাথায় কিছু কাজ করতে হবে তাকে, আর এটা করতে পারলে সুস্মিতা খুব দ্রুতই মুক্তি পাবে বন্দীদশা থেকে।
ডাক্তার বুঝতে পারেন, তিনি একেবারে সঠিক সময়ে মূল্যবান একটি তথ্য দিয়েছেন।
এরপরই মুশকানের পরিকল্পনা অনুযায়ি জেবুন্নেসা নামের নার্স মেয়েটাকে ফোন দেন ডাক্তার। হাসপাতালের একজন অ্যাডমিন পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল হসপিস সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড মনিটরিং অর্গানাইজেশন থেকে ডেইজি হক নামের একজন ইন্সপেক্টর একটু পরই আর্জুমান্দ বেগমের অ্যাপার্টমেন্টে যাবে ইন্সপেকশন করার জন্য। তাকে যেনো যথাযথ সহযোগীতা করা হয়। ঐ মহিলার রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেবুন্নেসা যেনো কোনো রকম ত্রুটি না রাখে, দ্রুত সব কিছু গুছিয়ে নেয়। আর অরিয়েন্ট হাসপাতাল থেকে যে তাকে আগেভাগে এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে সেটা যেনো ঘুণাক্ষরেও ঐ মহিলা জানতে না পারে। জেনে গেলে পুরো ইন্সপেকশনটি বাতিল করা হবে, বিশাল অঙ্কের জরিমানা গুণতে হবে হাসপাতালকে। এমন কি, তাদের হসপিস সার্ভিসটিও বন্ধ করে দেয়া হতে পারে সাময়িক।
সব শুনে নার্স মেয়েটি সতর্ক হয়ে ওঠে। যদিও তার বিস্ময় টের পেয়েছিলেন ডাক্তার। সেটাই স্বাভাবিক। এরকম ইন্সপেকশন করার কথা মেয়েটি কখনও শোনেনি তার দেড় বছরের চাকরি জীবনে। তার চাইতেও বড় কথা, এতো রাতে ইন্সপেকশন করা হচ্ছে বলে বেশ অবাক হয়েছে। সেজন্যে ডাক্তার তাকে আরো জানান, এই অর্গানাইজেশন গঠিত হয়েছে মাত্র আটমাস আগে। তাদেরকে সব রোগীর ডেটা সরবরাহ করার নিয়ম আছে। আর তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ইন্সপেকশনের কাজ করে থাকে। তবে ওখানে ডাক্তারের ঘনিষ্ঠ একজন কাজ করে বলে তিনি আগে থেকে জেনে নিতে পেরেছেন। হসপিস ইন্সপেকশনটি সাধারণত রাতেই বেশি করা হয়, কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এই সার্ভিসে নিযুক্ত নার্সেরা রাতের বেলায় ঢিলেমি দিয়ে থাকে।
এসব বলে জেবুন্নেসাকে পুরোপুরি ‘কনভিন্স করতে সক্ষম হয়েছিলেন ডাক্তার।
একটু আগে মুশকানকে ফোন করে আশ্বস্ত হয়েছেন তিনি, তাদের প্ল্যানটা ঠিকমতোই এগোচ্ছে। মুশকান এখন পিএস আশেক মাহমুদের অ্যাপার্টমেন্টে তার বোন আর্জুমান্দ বেগমের সামনে আছে!
৯০. পিএস আশেক মাহমুদ
অধ্যায় ৯০
নুরে ছফা এবং সুস্মিতা দু-জনেই বুঝতে পারছে কিছু একটা ঘটে গেছে।
একটু আগে ফোনকল পাবার পর পুরোপুরি ভড়কে গেছে পিএস আশেক মাহমুদ। তড়িঘড়ি করে ঘর থেকে বের হয়ে যায় সে। হতভম্ব হয়ে আসলাম দাঁড়িয়ে থাকে ঘরে। এখনও সে বুঝতে পারছে না কী হয়েছে। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করছে পিএসের কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য।
এরইমধ্যে ছফার সাথে সুস্মিতার চোখাচোখি হয়েছে বার কয়েক। তারও একটাই প্রশ্ন কী হয়েছে?
কাঁধ দুলে ছফা জানিয়ে দিয়েছে, সে-ও কিছু বুঝতে পারছে না। তবে খারাপ কিছুর আশঙ্কাই করছে। ক্ষমতাধর পিএস এতো সহজে ভড়কে যাবার কথা নয়। ছফা যখন তার দিকে পিস্তল তাক করেছিলো তখনও লোকটা ভড়কে যায়নি, বরং রেগে গিয়েছিলো। এখন ঘরের বাইরে সিঁড়ির ল্যাডিংয়ের কাছে দাঁড়িয়ে নীচুস্বরে ফোনে কী কথা বলছে পিএস, সেসব শুনতে পাচ্ছে না এ ঘরের বাকি মানুষজন।
একটু পর ফোনটা হাতে নিয়ে আশেক মাহমুদ ঘরে প্রবেশ করলো। তার চোখেমুখে বিপর্যস্ততার ছাপ সুস্পষ্ট।
“কী হয়েছে, বস?” আসলাম জানতে চাইলো উদ্বিগ্ন হয়ে।
পিএস তার দিকে তাকালেও কিছু বললো না। এরপর ঘৃণাভরে তাকালো সুস্মিতার দিকে। “ওর হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দাও…মুখের স্কচটেপটাও।”
আসলাম অবাক হয়ে চেয়ে রইলো ক্ষমতাধর বসের দিকে।
“জলদি করো…আমাদের হাতে সময় নেই।”
বাধ্য হয়েই সুস্মিতার মুখের স্কচটেপসহ হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিলো আসলাম। মেয়েটা মুক্ত হয়েও নিজের চেয়ারে বসে রইলো চুপচাপ। সব কিছু বুঝে উঠতে তারও কিছুটা সময় লাগছে।
পিএস নিজের ফোনটা সুস্মিতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো, “ওকে বলো, তোমাকে আমরা ছেড়ে দিচ্ছি। আমার বোনের যেনো কিছু না করে!”
পিএস কার কথা বলছে? নুরে ছফা যারপরনাই অবাক। মুশকানের? সুস্মিতাকে ছেড়ে দিতে বলছে যেহেতু…মাই গড! মুশকান জুবেরি পিএসের বোনকে জিম্মি করেছে! মনে মনে বলে উঠলো সে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। সুস্মিতার দিকে তাকালো।
মেয়েটার চোখেমুখেও অবিশ্বাস। চুপচাপ পিএসের ফোনটা কানে ঠেকিয়ে নীচুস্বরে কথা বলতে শুরু করলো সে।
আসলাম আর ছফাকে ইশারায় বাইরে আসতে বলে নিজেও ঘর থেকে বের হয়ে গেলো পিএস।