ট্রাম্প কী বলেছিলেন সৌদি আরব সম্পর্কে। মনে আছে সে সব? তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সময় সৌদি আরব সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘এরা উঁচু দালান থেকে সমকামীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরা মেয়েদের মেরে ফেলে, মেয়েদের অকথ্য অত্যাচার করে। ’ আমেরিকার টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘হাত সৌদি আরবের’। সন্ত্রাসী হামলার পেছনে যাদের হাত, তাদের কাছে আজ ট্রাম্প অস্ত্র বিক্রি করছেন। তাহলে কি ট্রাম্পকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধের মানুষ বলা যায়? নিশ্চয়ই যায় না। আমেরিকার এই অস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেনের গরিবদের মারবে। এর মধ্যে দশ হাজার লোক মরেছে, অগুনতি ইয়েমেনি মানুষ উড়ে গেছে আমেরিকার বানানো বোমায়। গত দু’বছরে সৌদি আরব ইয়েমেনের ওপর ৮১ বার হামলা করেছে। হামলা করেছে আমেরিকা থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে। যত বেশি হামলা হবে আমেরিকার অস্ত্র দিয়ে, মগজধোলাই হওয়া তরুণেরা তত বেশি অস্ত্র হাতে নিয়ে পাশ্চাত্যের মানুষদের হামলা করবে। ট্রাম্পের বক্তৃতার কিছু পরেই হামলা হলো ম্যানচেস্টারে। ২২ জনের মৃত্যু হলো।
আইসেনহাওয়ার বলেছিলেন, ‘আমেরিকার মিলিটারি কোম্পানিগুলোর জন্য যা ভালো, তা খুব স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকা এবং বিশ্বের জন্য ভালো নয়। ’ একেবারে খাঁটি কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমেরিকার সরকারে প্রভাবশালী ক’জন এ কথা বিশ্বাস করে?
ট্রাম্পকে সমর্থন করার লোক প্রচুর ছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল, ট্রাম্প ইসলামি সন্ত্রাস দূর করবেন। তাঁরা নিশ্চয়ই আশাহত এখন। সন্ত্রাসের সব দোষ ইরানের ওপর চাপিয়ে বিশ্বময় সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে যারা, তাদের সঙ্গে কোলাকুলি করে, তলোয়ার নাচ নেচে বন্ধুত্ব আরও গভীর করে এলেন ট্রাম্প। সন্ত্রাস বিলুপ্ত করবেন এই ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র বিক্রি করে এলেন সন্ত্রাসীদের গুরুর কাছে।
আর এদিকে শুধু আমাকে নয়, মুসলিম দেশে জন্ম অনেককে অযথাই হেনস্তা করছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। আমেরিকা থেকে বের করে দিচ্ছে, অথবা আমেরিকায় ঢুকতে দিতে চাইছে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষও অনুমতি পাচ্ছে না আমেরিকায় প্রবেশের। আগের সরকার যেভাবে দেশ চালিয়েছে, এই সরকারও সেভাবেই দেশ চালাবে। মাঝে মাঝে ভাবী, আমেরিকার ডেমোক্রেট আর রিপাবলিক দলের মধ্যে আসলে কোনও পার্থক্য নেই। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমেরিকার সরকার, সে যে সরকারই হোক, যা কিছু করতে পারে। মানবতাকে ধ্বংস করতে তাদের মোটেও অসুবিধে হয় না। এই স্বার্থপর দেশটির দিকে আমরা কি না তাকিয়ে আছি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যে এই দেশটিই শক্ত হাতে সন্ত্রাস মোকাবিলা করবে। আমেরিকা সন্ত্রাস যত নির্মূল করে, তার চেয়ে বেশি সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। সন্ত্রাসী তৈরিতে এক সময় তো সাহায্যও করেছে। আমেরিকার সাহায্য ছাড়া আল-কায়েদা, আইসিস জন্ম নিতো না।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭
চাই ধর্ষণহীন দিন
এমন একটি দিন আছে, যে দিন ধর্ষণহীন? না এমন দিন নেই। বাংলাদেশের পুরুষদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন স্বীকার করেছেন নিজের স্ত্রী নয় এমন নারীকে তারা কোনও এক সময় ধর্ষণ করেছেন। আসলে, ধর্ষণের এই সংখ্যাটি আরও ভয়াবহ হতো, যদি ধর্ষিতারা মুখ খুলতো, বলতো যে তারা ধর্ষিতা হয়েছে। ধর্ষণ যে একটি অপরাধ তা বেশির ভাগ মানুষ জানে না। ধর্ষককে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত না করে ধর্ষিতাকে করা হয়। এর চেয়ে বড় লজ্জা একটি সমাজের জন্য আর কিছু নেই। পৃথিবীতে ধর্ষণই একমাত্র অপরাধ যেখানে আক্রান্ত বা ভিকটিমকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
আমেরিকার নারীবাদী লেখিকা মেরিলিন ফ্রেঞ্চ লিখেছিলেন, ‘প্রতিটি পুরুষই ধর্ষক এবং তাদের এই একটিই চরিত্র। তারা আমাদের ধর্ষণ করে তাদের চোখ দিয়ে, তাদের তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে, তাদের আইন দিয়ে। অল ম্যান আর রেপিস্ট অ্যান্ড দ্যাটস অল দে আর। দে রেপ আস উইদ দেয়ার আইজ, দেয়ার ল’জ, অ্যান্ড দেয়ার কোডস। ’
আর আন্দ্রিয়া ডরকিনের কথা, ‘যতদিন ধর্ষণ নামক জিনিস পৃথিবীতে আছে, ততদিন শান্তি অথবা সুবিচার অথবা সমতা অথবা স্বাধীনতা কিছুই থাকবে না। তুমি আর হতে পারবে না তা, যা তুমি হতে চাও, তুমি আর বাস করতে পারবে না সেই জগতে, যে জগতে তুমি বাস করতে চাও। ’ আন্দ্রিয়া ডরকিন আরও বলেছেন, ‘ধর্ষণ কোনও দুর্ঘটনা নয়, কোনও ভুল নয়। পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে যৌনতার সংজ্ঞা হলো ধর্ষণ। যতদিন পর্যন্ত এই সংজ্ঞা বহাল থাকবে, ততদিন পর্যন্ত যৌন আক্রমণকারী হিসেবে পুরুষ এবং তার শিকার হিসেবে চিহ্নিত হবে নারী। এই সংস্কৃতিকে স্বাভাবিক যারা মনে করে, তারা ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিদিন ধর্ষণ চালিয়ে যায়। ’
কেউ কেউ বলে, ধর্ষকদের ধর্ষদণ্ডটি কেটে ফেলা উচিত। এর ফলে দ্রুত বন্ধ হবে ধর্ষকদের ধর্ষণ। বন্ধ কি সত্যি হয়? ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হওয়ার পরদিনই ধর্ষণ হয়নি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে? ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠিন কঠিন আইন আছে, তারপরও কি ধর্ষণের কিছু মাত্র বন্ধ হয়েছে? যারা বলে মেয়েরা স্বল্প পোশাক পরে চলাফেরা করে বলেই পুরুষেরা তাদের ধর্ষণ করতে উৎসাহী হয়—সেই মোটা মাথাগুলো খুব ভালো জানে যে, বোরখা-হিজাব পরা মেয়েরাও অহরহ ধর্ষিতা হচ্ছে। পোশাক কোনও ঘটনা নয়, ঘটনা এখানে পুরুষাঙ্গ। জন্মের পর থেকে পুরুষেরা শিখে এসেছে তারা জগৎ জয় করতে পারে তাদের দু’ঊরুর মাঝখানের জিনিসটি দিয়ে। এই শিক্ষা ইস্কুল-কলেজে রাস্তাঘাটে চাকরিস্থলে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, আইনে কানুনে, শহরে বন্দরে, রাষ্ট্রে রাজ্যে সমাজে সংসারে সবখানেই পুরুষেরা পেয়ে যায়। ঘরে বাইরে যে শিক্ষা এবং যে শিক্ষার চর্চা পুরুষেরা হাজার বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে ক’টা পুরুষের বুকের পাটা তা থেকে নিরস্ত হয়?