ডেভ, আমি আর ভিনসেন্ট… ডকটার উপরে ছিলাম আমরা। হাবাগোবা টাইপের ছেলে ছিল ভিন্স। সব সময় তাই জ্বালাতাম ওকে। দুজনে মিলে চ্যাংদোলা করে ফেলে দিই সেদিন পানিতে। বার-বার বলছিল, ও নাকি সাঁতার জানে না। তারপর, সত্যিই যখন ডুবে গেল… ভয় পেয়ে গেলাম। এত ভয় পেলাম যে… দু হাতে মুখ ঢাকল কারটার। কেঁদে ফেলল ঝরঝর করে। আমি… আমি… মাফ করে দাও আমাকে!
ক্ষমা আপনাকে করতে পারে একজনই, নিষ্ঠুরের মতো বলল আয়মান। ভিনসেন্ট!
রুফাস! চিল-চিৎকার দিল আচমকা এলিজা। জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছে, গুটিগুটি পায়ে লেকের দিকে এগোচ্ছে ওর ছেলেটা। ঘরেই ছিল এতক্ষণ, বেরিয়ে পড়েছে কোন্ ফাঁকে।
হায়, আল্লাহ, লেকটা! শ্বাস চাপল আয়মান। ভিনসেন্ট তো ছাড়বে না ওকে! ,
রুফাস! রুফাস!! ডাকতে ডাকতে ছুটল সবাই বাইরে এসে।
পানির কিনারে পৌঁছে গেছে বাচ্চাটা। বাড়িটার দিকে চাইল ঘাড় ফিরিয়ে। তক্ষুনি একটা কালো হাত টেনে নিল ওকে পানিতে!
রুফাআস! বাতাস চিরল বিধবা মায়ের বুক ফাটা আহাজারি।
সামনের দৃশ্যটা দেখে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ল অফিসার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে চোয়ালের পেশি।
কিনারে এসেই পর-পর ঝাঁপ দিল আয়ান আর আয়মান। এলিজাও করতে যাচ্ছিল কাজটা। পিছন থেকে টেনে থামাল ওকে ওর বাবা। মেয়ের বদলে নিজে নামল পানি ভেঙে।
ডুবছে… ভাসছে… ডুবছে… ভাসছে… নিশানাই পাচ্ছে না যমজরা রুফাসের। হারিয়ে গেছে যেন চিরতরে।
ভিনসেন্ট… দোস্ত! কান্না জুড়ল কারটার। বুক পর্যন্ত নেমে পড়েছে পানিতে। আমি জানি, শুনতে পাচ্ছিস তুই আমার কথা! প্লিজ, দোস্ত! মাফ করে দে আমার নাতিটাকে! একটা বাচ্চা ও… মাসুম বাচ্চা! কিছুই দেখেনি এ দুনিয়ার! প্লিজ, দোস্ত, প্লিজ! হাত জোড় করে প্রাণভিক্ষা চাইছি তোর কাছে! ছেড়ে দে রুফাসকে! রেহাই দে আমার মেয়েটাকে!
কাঁদতে কাঁদতে হদের পাড়ে বসে পড়ল এলিজা। রুফাস!
তালাশ চালিয়ে যাচ্ছে আয়ান আর আয়মান। শেষ পর্যন্ত বুঝি দয়া হলো ঈশ্বরের। অচেতন ছেলেটাকে এক হাতে জাপটে ধরে ভেসে উঠল এক ভাই। এগোতে লাগল তীরের দিকে।
আর বসে থাকতে পারল না এলিজা। সে-ও নেমে পড়ল পানিতে।
ভাসতে ভাসতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে অন্য ভাই। আরে, শেরিফ গেল কই? এই না দেখল ওখানটায়!
পরক্ষণে পেয়ে গেল জবাবটা।
অপার রহস্য নিয়ে থইথই করছে নীল পানি। পুরানো দোস্তকে কাছে পেয়ে তৃপ্ত হয়েছে কি ভিনসেন্ট?
হয়তো।
ডেয়ার-ডেভিল
গভীর রাত।
নিজের ডেস্কে বসে কাজ করছে লোকটা। নিবিষ্ট মনে।
চল্লিশের কোঠায় বয়স। কোঁকড়া চুল। সাদা হাফ শার্ট গায়ে।
ঘরটা অন্ধকার, কিন্তু একটা টেবিল-ল্যাম্প প্রয়োজনীয় আলো বিলাচ্ছে।
দুই
পোর্টল্যান্ড, অরেগন।
মাল্টনোমাহ/ক্র্যাকেম্যাস কাউন্টি অ্যানিমেল সেন্টার # ৪।
রাত। তিনটা একচল্লিশ।
চিড়িয়াখানার মূল অংশে ঢোকার মুখে একটা সাইন ঝুলছে দেয়ালে। সাদার উপরে লাল কালিতে লেখা। বহিরাগতদের প্রবেশ কাম্য নয়।
জনকে দেখেই ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল কুকুরগুলো। সম্মিলিত চিৎকারে কান পাতা দায়।
লম্বা করিডরটাতে আঘো আলো। ভালো মতো তাকিয়ে ঠাহর করতে হয়। তবে সারমেয়কুল তো চোখ নয়, গন্ধ দিয়ে আইডেন্টিফাই করে। অবশ্য অ্যানিমেল সেন্টারের বাসিন্দারা পরিচিত-অপরিচিত কারোরই তোয়াক্কা করে না। নির্বিশেষে সবাইকে একই অভ্যর্থনা জানায়।
দরকার নেই, তবু সতর্ক পা ফেলছে জন। মুখটা ঘর্মাক্ত। পরিবেশ ভাপসা।
ওর দুপাশে তার আর শিক দিয়ে বানানো অসংখ্য খাঁচা। হরতন আকৃতির ফোকর। পাশাপাশি, আবার একটার উপরে
আরেকটা এভাবে বিন্যস্ত দেয়াল ঘেঁষে। কয়েকটা খালি। তবে বেশির ভাগই কোনও-না-কোনও জন্তুর দখলে। পোষা প্রাণী রয়েছে, কয়েকটা। বাদবাকি সব বুনো। কিংবা বেওয়ারিশ। শেয়াল। কুকুর। নেকড়ে। খরগোশ। ব্যাজার। গিনি পিগ। কাঠবিড়ালি। …অধিকাংশই অসুস্থ, না হয় আহত। সেবাযত্ন আর ওষুধ-পথ্য দিয়ে সুস্থ করা গেলে ছেড়ে দেয়া হয়। নচেৎ বন্দিজীবন।
বাতাসে গু-মুত আর পশুর গায়ের বোটকা গন্ধ।
থামছেই না কুকুরগুলো। গলায় রক্ত উঠে না আসাতক ক্ষান্ত দেবে না, মালুম হচ্ছে। দু -চারটা পাগল না থেকেই যায় না এগুলোর মধ্যে!
ঝিমাচ্ছে, কোনও কোনওটা। কোনওটা সন্দিগ্ধ চোখে আগন্তুকের পদক্ষেপ মাপছে। গরগর আওয়াজে অপছন্দ।
চাপা, ভারি গর্জন ছাড়ল একটা কয়োটে। নিচের ঠোঁট টেনে দাঁত দেখাল। লালা গড়াচ্ছে। ভাটার মতো জ্বলছে দুই চোখ।
প্যাসেজের শেষ মাথায় রুপালি আলো ঝলসে উঠতে দেখল জন। ক্রাইম সিনের স্থির চিত্র নিচ্ছে পুলিসের ফোটোগ্রাফার। খোলা এক দরজার পাশে এক ট্রুপারকে দেখা যাচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে। বাদামি হ্যাট মাথায়। ইউনিফর্মেরই অংশ। কাছেপিঠে আরও কিছু লোক রয়েছে। নিজেদের কাজে মগ্ন।
নিজের পরিচয় দিয়ে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল জন। বরাবরের মতো প্লেইন ক্লদে এসেছে। ফিল্ড জ্যাকেট। সাদা পোশাকে কাজের সুবিধা অনেক।
লেডিস টয়লেট। দরজার কপালে চিহ্ন রয়েছে।
ওকে দেখে এগিয়ে এল আলফ্রেড মোলিনা। গোয়েন্দা। চেহারাটা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মতো। সাদা চুল-দাড়ি। গলা থেকে ঝুলছে গোল ফ্রেমের চশমা। চেনে জনকে। ওর। অপেক্ষাতেই ছিল। ফেডারেল ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) কেসটার ব্যাপারে আগ্রহী, জানানো হয়েছে ওকে। • আপাতত হমিসাইড টিম না পাঠিয়ে একজন এজেন্টকে পাঠানো হচ্ছে।