- বইয়ের নামঃ ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার
- লেখকের নামঃ ডিউক জন
- সিরিজঃ সেবা হরর সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ ভূতের গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প
ভ্যাঙ্কুভারের ভ্যাম্পায়ার
হাইওয়ে
সরি, হানি। আসতে পারছি না পার্টিতে…
কীহ! পারছ না মানে? সারা বছরে একটা মাত্র দিন এই পার্টিটা হয়, আর সেটাই তুমি মিস করতে চাও! মেজাজ খারাপ করে দিয়ো না, বলে দিচ্ছি!
সিণ্ডি… সিণ্ডি, বোঝার চেষ্টা করো… খুবই জরুরি একটা সেমিনার আছে কালকে। বড় বড় ক্লায়েন্টরা থাকবে। ভালো একটা ঘুম দরকার আমার। সারা রাত জেগে পার্টি করলে কাল সকালেই নট হয়ে যাবে চাকরি।
কিছুই শুনতে চাই না আমি। তুমি থাকছ, ব্যস! এটাই শেষ কথা।
থাকতে তো চাই-ই, বেবি। কিন্তু বোঝোই তো, প্রাইভেট চাকরির মা-বাপ নেই কোনও। সমঝে না চললে…
চার্লি অ্যালান, তুমি কি চাও, আমাদের সম্পর্কটা এখানেই চুকেবুকে যাক?
এসব কী বলছ, সোনা! রিলেশনের সঙ্গে কী? কালকের মিটিংটা যদি ইমপর্টেন্ট না হতো, তা হলে কি পার্টি মিস করি?
আর এদিকে যে বান্ধবীদের কাছে প্রেসটিজ পাংচার হতে চলল আমার, সেটা বুঝি কিছু না?
দূরো! কই আগরতলা, আর কই চৌকির তলা!
কী বললে! আমি চৌকির তলা! ঠিক আছে, থাকো তুমি তোমার কনফারেন্স নিয়ে। আজ, এই মুহূর্ত থেকে তুমি আমার জীবনে পাস্ট টেন্স।
সিণ্ডি… সিণ্ডি… সিণ্ডারেলা…
নাহ। আদরের ডাকেও কাজ হলো না। ফোন কেটে দিয়েছে চার্লির প্রেমিকা।
বিচ! ক্ষোভের সঙ্গে বেরিয়ে এল জঘন্য গালিটা। এই মেয়েগুলোকে নিয়ে আর পারা গেল না। শো-অফ ছাড়া কিছু বোঝে না। কার বয়ফ্রেণ্ড দেখতে কেমন, কার কত পয়সা আছে, বার্থডে-ভ্যালেন্টাইনে দামি-দামি গিফট দেয়, কোন রেস্তোরাঁয় খাওয়াতে নিয়ে যায়, কোন মডেলের গাড়ি চালায় সারাক্ষণ এসব নিয়ে অলিখিত প্রতিযোগিতা। পার্টিতে অ্যাটেণ্ড করতে হবে- কেন? সং সেজে পিছে পিছে ঘুরবার। জন্য।
ফাজলামোর একটা সীমা থাকা দরকার।
ব্রেক-আপ নিয়ে ভাবছে না সে। গেছে, যাক। ফেরানোর চেষ্টা করবে না। এমন কিছু আহামরি– মেয়ে নয় সিণ্ডি ক্রফোর্ড। হাজারটা মেলে অমন গার্লফ্রেণ্ড।
গত আটটি মাসে বারংবার যে সত্যটা উপলব্ধি করেছে চার্লি- শি ইজ নট মাই টাইপ।
ভালোবাসা কী? পারস্পরিক সমঝোতা। চমৎকার বোঝাপড়া। আমিই অল টাইম কেয়ার নেব তোমার, আর আমার বেলায় লবডঙ্কা- দিস ইজ নট ফেয়ার। মানুষের অসুবিধা থাকতে পারে না? জরুরি কাজের চেয়ে মৌজ-মাস্তি বড় হলো? ক্যারিয়ার তো আমার; চাকরি গেলে পুঁছবি তুই? তখন তো ঠিকই ঝুলে পড়বি অন্য নাগরের গলা ধরে।
রাগের চোটে স্টিয়ারিং-এ থাবড়া দিল স্কটিশ যুবক। চাপ লেগে বেজে উঠল হর্ন। কর্কশ আওয়াজটা চিরে দিল নীলচে রাত।
জেরিকোর রাস্তায় চলেছে নিঃসঙ্গ সিডান। কাজ থেকে ফিরছে স্কট।
ক্যালিফোরনিকান হাইওয়েতে এমন কী কোনও জনমানবও নেই। হবেই। সবাই এখন বিচরণ করছে অলিতে-গলিতে, না হয় পার্টি জমাচ্ছে।
ফুস করে একটা শ্বাস ফেলল যুবক। কালকের প্রোগ্রামটা না থাকলেও সে-ও যেত। সারা রাত আনন্দ করার সুযোগ হাতছাড়া করত না কিছুতেই। কিন্তু মেয়েটা এসব বুঝলে
তো! …দূর! আবার কেন ভাবছে ওর কথা!
নিজের উপরেই বিরক্ত হলো চার্লি। মুখ বাঁকাল।
সাইপ্রেসের জঙ্গল ভেদ করে সিঁথির মতো চলে গেছে। পথটা। পিচঢালা রাস্তা। দুই ধারে কালো কালো ছায়া। বিশাল, প্রাচীন সব বৃক্ষের ভুতুড়ে কাঠামো। থোকা থোকা অন্ধকার সেখানে।
উইণ্ডশিল্ড দিয়ে আলগোছে ডানে চাইল স্কটম্যান। ঝনঝন করে উঠল ওর সমস্ত স্নায়ু; ধাতব কোনও কিছু মাটিতে পড়ে গিয়ে আওয়াজ তুললে যেরকম অনুভূতি হয়।
কী যেন দেখল!
হেডলাইটের আলোর সীমানার বাইরে। দৃষ্টিসীমার দূর প্রান্তে।
রাস্তার পাশের ঘাসময় জমিনে সাদা এক ছায়ামূর্তি।
ক্রমশ নিকটবর্তী হচ্ছে কালো, সিডান। সেই সঙ্গে চার্লির চোখে স্পষ্ট হচ্ছে মূর্তিটা।
একটি মেয়ে। একা। দুহাত দিয়ে টেনে গাউনের ঝুল তুলে রেখেছে গোড়ালির উপরে। ছন্দোবদ্ধ ভঙ্গিতে পাক খেয়ে ঘুরছে ধীরে ধীরে।
পাকস্থলিতে বিজাতীয় খামচি অনুভব করল চার্লি। এই রাতের বেলায় একাকী রাস্তায় নাচছে কেন মেয়েটা? পাগল নাকি?
তরুণীর পাশে গাড়ি দাঁড় করাল চার্লি। শটগান-সিটের উপর দিয়ে ঝুঁকে ডান দিকের আধখোলা জানালার কাঁচ নামাল পুরোটা। হেই।
নাচ থামিয়ে একদৃষ্টে চেয়ে আছে মেয়েটা। ছড়াগান গাওয়ার সময় বাচ্চারা যেভাবে ঘাড় দোলায় ডাইনে-বাঁয়ে, তেমনি দোলাচ্ছে। তখনও তুলে ধরা জামাটা।
সান্ধ্য পোশাকটার জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া, খেয়াল করল চার্লি। পা দুটো খালি।
বিপদে পড়েছে?
রেপ-কেস- চকিতে মনে হলো চার্লির। জোর-জবরদস্তি করায় ছিঁড়ে গেছে কাপড়। কিন্তু ধর্ষিতা একটা মেয়ে নাচবে। কেন বনের ধারের নির্জন রাস্তায়?– নাহ, ধর্ষণ না। অন্য কোনও ব্যাপার।
একটা সম্ভাবনা বাতিল হতেই আরেকটা এসে ঠাই গাড়ল মনে। হুম… মনে হচ্ছে, এটাই। হ্যালোউইন-কসটিউম। হয় পার্টিতে যাচ্ছিল মেয়েটা, না হয় পার্টি থেকে ফিরছে। গাড়ি টাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে বোধ হয়।
তা হলে নাচানাচির ব্যাখ্যা?
খুব সহজ। ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে ওকে। হ্যালোউইনে সবাই যা করে। নিশ্চয়ই গাড়ির আলো দেখেছে দূর থেকে। শয়তানি বুদ্ধি চাড়া দিয়েছে মগজে। একলা রাস্তায় সাদা কাপড় পরা পেতনি… বাপ, রে!