- বইয়ের নামঃ বাউন্টিতে বিদ্রোহ
- লেখকের নামঃ জেমস নরম্যান হল
- সিরিজঃ কিশোর ক্লাসিক সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী বই
- বিভাগসমূহঃ কল্পকাহিনী, অ্যাডভেঞ্চার, ইতিহাস
বাউন্টিতে বিদ্রোহ
ভূমিকা
১৭৮৭ সালের তেইশ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ বন্দর থেকে রওনা হয় এইচ.এম.এস (হিজ ম্যাজেস্টিজ শিপ) বাউন্টি। গন্তব্য, বিশাল দক্ষিণ সাগরের ছোট্ট দ্বীপ তাহিতি। উদ্দেশ্য, তাহিতি থেকে কয়েক হাজার রুটিফলের চারা সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বীপগুলোয় পৌঁছে দেয়া। ইংল্যান্ডের তকালীন রাজকীয় সরকার আশা করেছিল, এ গাছের চাষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংরেজ মালিকানাধীন খামারগুলোয় কর্মরত নিগ্রো ক্রীতদাসদের জন্যে সস্তায় যথেষ্ট খাবারের ব্যবস্থা করা যাবে।
বাউন্টির সেই ঘটনাবহুল যাত্রার ঘটনারাশি উন্মোচন করা হয়েছে এ কাহিনীতে। বাউন্টির ইংল্যান্ড থেকে রওনা হয়ে তাহিতিতে পৌঁছানো, রুটিফলের চারা সংগ্রহের জন্যে দীর্ঘদিন সেখানে থাকা, অবশেষে ফিরতি যাত্রা, তারপর বিদ্রোহ, জাহাজ নিয়ে বিদ্রোহীদের তাহিতিতে ফিরে যাওয়া এবং সব শেষে এইচ. এম. এস প্যানডোরা নামের একটি জাহাজ গিয়ে বিদ্রোহীদের কয়েকজনকে ধরে নিয়ে আসা এবং বিচার করার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এ বই-এ।
কাহিনীর কথক হিসেবে লেখকদ্বয় নির্বাচন করেছেন রজার বিয়্যাম নামের এক কাল্পনিক চরিত্রকে। নৌবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর বৃদ্ধ বয়েসে স্মৃতিচারণের ভঙ্গিতে সে গল্প বলছে। বাউন্টির নাবিকদের ভেতর রজার বিয়্যাম বলে কেউ না থাকলেও পিটার হেউড নামের একজন ছিল। এই হেউডের আদলেই লেখকরা গড়ে তুলেছেন বিয়্যামের চরিত্র। সে কারণে স্বাভাবিক ভাবেই বাউন্টির নাবিক তালিকা থেকে হেউডের নাম বাদ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে বিয়্যামের নাম। মিডশিপম্যান পিটার হেউডের দিনলিপিই (এ মেমোয়ার অভ পিটার হেউড নামে প্রকাশিত) বাউন্টিতে বিদ্রোহ (মূল ইংরেজি নাম মিউটিনি অন দ্য বাউন্টি)-এর মূল ভিত্তি। এ ছাড়া উইলিয়াম রাই-এর এ ন্যারেটিভ অভ দ্য মিউটিনি অন বোর্ড এইচ.এম.এস বাউন্টি, ও এ ভয়েজ টু দ্য সাউথ সী; স্যার জন ব্যারোর দ্য মিউটিনি অ্যান্ড পাইরেটিক্যাল সিজিওর অভ এইচ.এম.এস, বাউন্টি, জর্জ ম্যাকানেস-এর দ্য লাইফ অভ ভাইস অ্যাডমিরাল উইলিয়াম ব্লাই থেকেও তথ্য সংগ্রহ করেছেন লেখকদ্বয়।
.
এক
১৭৮৭র বসন্ত-শুরুতে আমার বাবা মারা গেলেন প্লুরিসি রোগে। মা সাধারণ গ্রাম্য মহিলা, ভেবেছিলাম ধাক্কাটা সামলাতে পারবেন না। কিন্তু যখন দেখলাম শুধু যে সামলে নিয়েছেন তা-ই নয়, বরং শক্ত হাতে ধরেছেন সংসারের হাল, তখন আশ্চর্য না হয়ে পারিনি। প্রকৃতি বিজ্ঞানে বিশেষ আগ্রহের কারণে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো হওয়ায় দুর্লভ সম্মান লাভ করেছিলেন বাবা। প্রকৃতির প্রতি আগ্রহ ছিল মায়েরও-আগ্রহ না বলে বলা উচিত, ছিল অদ্ভুত এক আকর্ষণ। এই আকর্ষণের কারণে রয়্যাল সোসাইটির ফেলোর স্ত্রী হয়েও মা রয়ে গিয়েছিলেন পুরোপুরি গাইয়া। শহরের কৃত্রিম পরিবেশের চেয়ে উইদিকম্বির শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনই বেশি প্রিয় ছিল তার কাছে।
সত্যি কথা বলতে কি, বাবার মৃত্যুর পরই মা-কে আমি বুঝতে শুরু করি; মা হিসেবে নয় চমৎকার এক সাথী হিসেবে। জীবন, পৃথিবী, প্রকৃতি সম্পর্কে মা যে কতখানি জ্ঞান রাখেন, কতখানি বোঝেন তা বুঝতে পারি সেই সময়। বাবার অভাব এক দিনের জন্যেও অনুভব করতে দেননি আমাকে। আগে ছিলেন শুধু মা, সে সময়টায় হয়ে উঠেছিলেন মা বাবা দুইই। আমি কখন কি চাই মা যেন তা বুঝে নিতেন কোন অলৌকিক উপায়ে। আমার মন বুঝে যখন। যেমন প্রয়োজন তখন তেমন হালকা বা গম্ভীর চালে কথা বলতেন। যখন কথার চেয়ে নীরবতাই বেশি ভাল লাগত আমার তখন চুপ করে থাকতেন।
সেদিন সকালে যখন স্যার জোসেফ ব্যাঙ্কস-এর চিঠি এল, বাগানে হাঁটছিলাম আমরা। সময়টা শেষ জুলাই। আকাশ মেঘশূন্য, নীল। বাতাসে গোলাপের সুবাস। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম, কালো পোশাকে কী অসাধারণ লাগে আমার মা-কে!-এই সময় আমাদের নতুন কাজের মেয়ে থাকার এসে চিঠিটা দিল মায়ের হাতে। খামের মুখ ছিঁড়ে চিঠিটা বের করে একটা পাথরের বেঞ্চে গিয়ে বসলেন মা।
স্যার জোসেফ লিখেছেন, পড়া শেষ করে তিনি বললেন। লেফটেন্যান্ট রাই-এর নাম শুনেছিস না, ক্যাপ্টেন কুকের সাথে দক্ষিণ সাগর অভিযানে ছিলেন? স্যার জোসেফ লিখেছেন, ব্লাই এখন ছুটিতে, টউনটনে এক বন্ধুর বাড়িতে আছেন। আমাদের বাড়িতে নাকি আসতে চান। তোর বাবার খুব উঁচু ধারণা ছিল তাঁর সম্পর্কে।
সতেরো বছরের তরতাজা তরুণ, আমি তখন। ক্যাপ্টেম কুক, দক্ষিণ সাগর-শব্দগুলোর মর্ম ভাল করেই জানি,, ক্যাপ্টেন কুকের সঙ্গে ছিলেন! রুদ্ধশ্বাসে বলে উঠলাম আমি। মা, আসতে লেখো ওকে! যেমন করেই হোক, একদিন যেন ঘুরে যান আমাদের এখান থেকে।
আমি জানতাম, তুই খুশি হবি, মৃদু হেসে মা বললেন।
আমাদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয় টউনটন। তখনই মা আমাদের গাড়িটা পাঠিয়ে দিলেন। কোচোয়ানের হাতে দিলেন একটা চিঠি, ব্লাই-এর জন্যে। লিখলেন, আজ সন্ধ্যাটা যদি আমাদের এখানে কাটান আমি এবং আমার ছেলে সত্যিই খুব খুশি হব।