দৌড় দিল ওরা। আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ল যেন অদৃশ্য দেয়ালে বাধা পেয়ে।
ওহ, মাই গড! ঈশ্বরের নাম জপল ডেইজি।
ম্যাডিদের ক্যাম্পসাইট খুঁজে পেয়েছে কনরয়। ঝড় বয়ে গেছে যেন জায়গাটার উপর দিয়ে। তাঁবু, রসদ- সব লণ্ডভণ্ড রক্তের চিহ্ন চতুর্দিকে।
ম্যাডি! ডুকরে উঠল ডেইজি। ব্যাকপ্যাকটা ফেলে দিল কাঁধ থেকে। ম্যাডি!
শ্শ্শ্! ডেইজির কাঁধে চাপ দিল আয়মান। ধারেকাছে। থাকতে পারে ওটা।
ডুগ্গু!
ভাইয়ের উদ্দেশে পা চালাল আয়মান। গোড়ালিতে ভর দিয়ে বসল ও পাশে। মাটির দিকে দৃষ্টি।
হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল শিকারকে, বিস্মিত গলায়। বলল আয়ান। কিন্তু এখানটায় দেখ… আচমকাই গায়েব হয়ে গেছে ট্র্যাকটা। অদ্ভুত না?
উঠে দাঁড়াল দু জনে।
কী বলবি? শিকার সুদ্ধ অদৃশ্য হওয়ার কায়দা জানে। হারামিটা? নাকি অন্য কোনও ডাইমেনশন থেকে এসেছে?
গাছ বাইতে পারে খুব সম্ভব। উপর দিকে চোখ বোলাচ্ছে আয়মান।
বাঁচাও! বাঁচাও!! আচমকা চেঁচিয়ে উঠল কে যেন।
সকলেই ছুটল বিপন্ন মানুষটার সাহায্যে।
এদিক থেকেই এসেছে না চিৎকারটা? একটু পরে। বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে ডেইজিকে।
কেউ কোনও জবাব দিল না। চুপচাপ কান পেতে রয়েছে। বাতাসে।
শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বলল আয়মান: চলুন, ফিরি।
বিশাল এক ধাক্কা খেল ওরা ক্যাম্পে ফিরে। উধাও হয়ে গেছে সমস্ত সাপ্লাই!
হায়-হায়, আমাদের ব্যাগগুলো! আঁতকে উঠল ডেইজি।
আমার জিপিএস আর স্যাটেলাইট ফোনটাও গেছে! কাঁচকলা-মার্কা চেহারা হয়েছে রয়ের।
চালাক… খুব চালাক! বিড়বিড় করল আয়ান। চেয়েছে, যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি আমরা… বাইরের সাহায্য চাইতে না পারি।
কী বলতে চাও? মানুষের হাত আছে এর পিছনে?
গুড়ু, চাপা গলায় বলল আয়মান। আয় তো একটু। কথা আছে তোর সাথে।
কিছুটা দূরে এসে দাঁড়াল ওরা অন্যদের থেকে।
প্যান্টের পকেট থেকে ছোট একটা নোটবুক বের করল। আয়মান। খুঁজে বের করল বিশেষ একটা পাতা। একটা ফিগার আঁকা রয়েছে পৃষ্ঠাটায়। বহু পুরানো ইনডিয়ান ড্রইং।
ওহ, কাম অন! অবিশ্বাসী গলায় চেঁচিয়ে উঠল আয়ান। এগুলো তো মিনেসোটার জঙ্গলে দেখা যায় বলে গুজব রয়েছে… কিংবা নর্দার্ন মিশিগানে! এত দূরের পশ্চিমে এদের কথা শুনিনি আমি কখনও।
কিন্তু ভেবে দেখ, ভাইয়া… মিলে যাচ্ছে সূত্রগুলো! থাবার আঁচড়… তারপর যেভাবে মানুষের গলা নকল করল!
হঠাৎ করে যেন চিন্তায় পড়ে গেছে আয়ান। ভাইকে শুধাল, বলবি ওদেরকে?
বলা উচিত না? পালটা প্রশ্ন করল আয়মান।
শুনে পাগল আখ্যা দিল ওদের রয়। আর ডেইজি জানিয়ে দিল, যা-ই হোক না কেন জিনিসটা, ভাইয়ের হদিস না নিয়ে বাড়ি ফিরছে না ও।
আট
পরিত্যক্ত ক্যাম্পসাইটে জ্বালানো হয়েছে আগুন।
আগুনের চারপাশ ঘিরে কী আঁকলেন আপনি? খোঁচাতে থাকা প্রশ্নটা করেই ফেলল ডেইজি।
অ্যানাসাজি সিম্বল, বলল আয়মান। ইনডিয়ানদের বিশ্বাস, চক্রব্যুহের কাজ করে এটা। পিশাচ-দানব ভাঙতে পারে না এই বৃত্ত।
বন্দুকটাকে ঘাড়ের উপরে বিশ্রাম দিচ্ছে রয়, যুক্তি শুনে বিকট এক ভেটকি দিল।
হেল্প! হেল্প মি! আবার মানুষের গলায় আর্তি জানাল ওটা ওদেরকে চমকে দিয়ে।
তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল কনয়।
অন্ধকারে কী যেন ছুটে গেল বিদ্যুদ্গতিতে। ঝোঁপের মধ্যে উঠল আলোড়ন।
. শটগানটা তাক করে গুলি করল রয়। তারপর আরেকটা।
ইয়াহু! লাগিয়েছি! ছাড়ল উল্লসিত চিৎকার। কীসে। লাগিয়েছে, দৌড় দিল দেখার জন্য।
রয়! না! রয়! লোকটা ম্যাজিক-সার্কেলের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে হাহাকার করে উঠল আয়মান।
নয়
বিভীষিকার আঁধার পেরিয়ে এল নতুন এক দি
সারা রাত জেগেছে ওরা। ঘুমায়নি এক ফোঁটাও। না, বাহাদুর রয় আর ফেরেনি। কী যে হয়েছে ওর, খোদা মালুম। ওকে খুঁজতে যাওয়ার সাহস হয়নি কারও।
এই ধরনের জিনিস… আই মিন… এগুলো তো সত্যি হতে পারে না, ফাপা গলায় বলল ডেইজি। চোখমুখ ফুলে গেছে ওর। রাত জাগার অভ্যাস নেই।
ভালো হতো, যদি আপনার সাথে একমত হতে পারতাম, মলিন গলায় বলল আয়মান। ফোপরা এক গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে বসেছে ও। হাতে নোটবক। ইতোমধ্যে দেখিয়েছে ইনডিয়ানদের আঁকা ড্রইং।
ক্রি ইনডিয়ান ভাষার শব্দ এই ওয়েনডিঙ্গো, জ্ঞান জাহির করল আয়ান। মানেটা হচ্ছে: গোগ্রাসে গেলা শয়তান।
শত শত বছর ধরে টিকে রয়েছে ওরা, বলল আয়মান। সেরকমই বলা হয় আর কী কিংবদন্তিতে। মানুষই ছিল একটা সময়। কেউ ইনডিয়ান, ফ্রন্টিয়ারম্যান কিংবা মাইনার কেউ, কেউ-বা ছিল শিকারি।
মানুষ হলে এই হাল হলো কেন? ডেইজির প্রশ্ন।
মাটি থেকে কী জানি কুড়িয়ে তুলল আয়ান। ফেলেও দিল আবার। ওয়েল। করুণই বলা যায় গল্পটা। কোনও এক দুর্যোগপূর্ণ শীতে খাবারের অভাবে ধুকছিল এক দল মানুষ। রসদ ফুরিয়ে গিয়েছিল ওদের। কারও সাহায্য পাওয়ারও উপায় ছিল না। বাঁচার তাগিদে নরমাংস খেতে বাধ্য হয়…
কী! চোখ কপালে উঠেছে ডেইজির। কাদের খেয়েছিল?!
ইনডিয়ানরা খেয়েছিল হয়তো গোত্রের অন্যদের, অনুমান, করল আয়মান। অন্য কেউ হলে বলব- বন্ধু, সহকর্মী কিংবা পরিবারের সদস্যদের।
ডোনার পার্টির মতো, নির্জীব গলায় মন্তব্য করল মুখচোরা রনি।
অবাক হয়ে দেখল ওকে আয়ান। দৃষ্টিতে প্রশংসা। সায় দেয়ার ভঙ্গিতে ঝাঁকাল মাথাটা। ওরাও জানে গল্পটা। আমেরিকান পাইয়োনিয়ারদের একটা দল এই ডোনার-রিড। পার্টি, যার নেতৃত্বে ছিল জর্জ ডোনার আর জেমস রিড। আঠারো শ ছেচল্লিশ সালের মে মাসে ওয়াগেন-যাত্রা করেছিল ওরা ক্যালিফোরনিয়ার উদ্দেশে। নানান কারণে পথিমধ্যে বিঘ্নিত হয় যাত্রা। আর এরই মধ্যে এসে পড়ে শীত। সিয়েরা নেভাডায় তুষারবন্দি হয়ে পড়ে দলটা। ক্রমে ফুরিয়ে যায় খাবার। খিদের জ্বালায় তখন একে অপরকে খেতে বাধ্য হয় দলের সদস্যরা।