বিড়ালদাহ পৌঁছে দেখলাম কলেজ বন্ধ। দারোয়ানের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে প্রিন্সিপালের বাসায় গেলাম। প্রিন্সিপাল মনে হলো আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন। বৃন্দাবন ঘটক নাকি তাকে বলে গেছেন আমি আজই তাঁর সাথে দেখা করব। কলেজ থেকে ট্রাঙ্ক দুটো বাসায় এনে রেখেছেন উনি। আমার জন্যে খাবার দাবারেরও আয়োজন করেছেন। বললেন, এত বড় স্কলার আপনি। আফসোস। কলেজ বন্ধ, তা না হলে আপনাকে দিয়ে একটা লেকচার দেয়াতাম। ছেলেমেয়েরা কিছু শিখতে পারত। তার ওপর আপনি বৃন্দাবন ঘটকের গেস্ট। আপনি হয়তো জানেন না উনি এই এলাকার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তি।
বিকেলের দিকে একটা রিকশা ভ্যানে ট্রাঙ্ক দুটো উঠিয়ে। বাস স্ট্যাণ্ডের দিকে রওনা করিয়ে দিলেন প্রিন্সিপাল সাহেব। ভ্যানের সামনের দিকে ট্রাঙ্ক রেখে পেছনের দিকে পা ঝুলিয়ে বসলাম আমি। বিদায় নিয়ে অনেকটা পথ চলে এসেছি। সামনেই একটা মোড় যেখানে ছোট রাস্তা হাইওয়েতে উঠেছে। এমন সময় লক্ষ করলাম, খুব জোরে সাইকেল চালিয়ে ষোলো-সতেরো বছর বয়সের একটি ছেলে আমাদের দিকে ছুটে আসছে। এক হাতে সাইকেলের হ্যাঁণ্ডেল ধরা, অন্য হাতে কাঠের ছোট একটা বাক্স। ভ্যানের চালককে ভ্যান থামাতে বললাম। ঘ্যাচ করে ব্রেক কষে চালক ভ্যান থামাল। হাইওয়ে আর ছোট রাস্তার বর্ডার লাইনে। ভ্যান এত দ্রুত থেমে যাবে সেটি সাইকেল চালক বুঝতে পারেনি। সাইকেল থামাতে-থামাতে সে পৌঁছে গেল ভ্যানের সামনের চাকা থেকে আরও দুফুট দূরে। সাইকেল চালককে চিনতে পারলাম। প্রিন্সিপাল সাহেবের বড় ছেলে এটি। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ড থেকে স্ট্যাণ্ড করেছে। ছেলেটি কাঠের বাক্সটা ভ্যান চালকের হাতে দিয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে মোড় নিল বড় একটি বাস। সাইকেলসহ ছেলেটাকে চিড়েচ্যাপ্টা করে বেরিয়ে গেল। দুএক পল এদিক ওদিক হলে সাইকেলের জায়গায় থাকার কথা ছিল ভ্যানটার!
বৃন্দাবন ঘটক ট্রাঙ্কের সাথে কাঠের ছোট বাক্সটিও আমার জন্যে রেখে গিয়েছিলেন। প্রিন্সিপাল সাহেব আমাকে ওটা দিতে বেমালুম ভুলে যান। আমাকে বিদায় দিয়ে ঘরে ফিরলে তার স্ত্রী ওটার কথা মনে করিয়ে দেন তাকে। তিনি তৎক্ষণাৎ বাক্সটা তার ছেলের হাতে দিয়ে বলেন আমার কাছে পে দেয়ার জন্যে। ঘটনার দুদিন পরে ঢাকায় ফিরে খুললাম বাক্সটা। দেখলাম ভেতরে লাল ভেলভেটে মোড়ানো লম্বা, সরু একটা কোদাল!