চিঠিটা শেষ করে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন রফিক সাদি। চিৎকার করে বললেন, ‘মা রে, তুই এটা কী করলি?’
.
শাহেদ চৌধুরী ফোন করেছে আনোয়ারকে।
‘ফারহানা সুলতানার খোঁজ পেয়েছি।’
‘হ্যাঁ, বল।’ তড়িঘড়ি করে বিছানায় উঠে বসল আনোয়ার।
‘ফারহানা নামের এই মেয়েটা দু’মাস আগে নিখোঁজ হয়। মেয়েটার মা-বাবা কেউ নেই। চাচার কাছে বড় হয়েছে। মেয়েটার চাচা ওর নিখোঁজ বিষয়ে নিউ মার্কেট থানায় জিডি করেছিলেন। তারপর আর তাঁদের তেমন মাথা-ব্যথা দেখা যায়নি। মা-বাবা না থাকলে যা হয় আর কী। মেয়েটার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে, ফারহানার নীরব নামে এক ছেলের সাথে ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্ভবত নীরবের সাথে ফারহানার তেমন একটা দেখা হয়নি।’
একটু বিরতি দিয়ে শাহেদ বলল, ‘নিখোঁজ হওয়ার আগেও সে নীরব নামের ওই ছেলেটার সাথে কথা বলেছে। মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে পুলিশ নীরবের নাম-ঠিকানা বের করেছিল। কিন্তু সে ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ বুঝতে পারে, নীরবের নাম-ঠিকানা, ন্যাশনাল আইডি সবই ভুয়া। এরপর পুলিশের কার্যক্রম অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে।’
‘বাহ্! তুই তো অনেক তথ্য জোগাড় করেছিস!’
‘এখন বল, তুই ফারহানাকে চিনিস কীভাবে? ওর সম্পর্কে কিছু জানিস নাকি?’
‘সব তোকে বলব। তার আগে আরেকটা খবর বের করতে হবে। তোকে কাল সকালে ফোন দেব। আশা করি, কালকেই সব জানতে পারবি।’
শাহেদের সাথে কথা শেষ করে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করল আনোয়ার। সামনেই রেখেছে রক্তের ব্যাগদুটো।
ব্যাগের ওপরের কাগজে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, একজনের নাম, ব্লাড নেয়ার তারিখ আর সময় লেখা।
ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কের রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের সাথে তা মিলিয়ে দেখে নিতে চাইল আনোয়ার।
বড় কোনও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সাথে মিলছে না।
এবার কিছু বেসরকারি ক্লিনিকের ব্লাড ব্যাঙ্কের সাথে মিলিয়ে দেখতে লাগল।
কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে সময় লেগে গেল, কিন্তু সফল হলো অবশেষে। বনানীর সোনালি ক্লিনিকের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে নেয়া হয়েছে ওর পাওয়া ব্যাগ।
শাহেদকে নিয়ে কাল সকালেই যেতে হবে ওখানে, ঠিক করল আনোয়ার।
সাধনা – ১০
দশ
সোনালি ক্লিনিকের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বে যে লোকটা রয়েছে, সে বসে আছে টেবিলের ওপর পা তুলে। আনোয়ার ও শাহেদকে ঢুকতে দেখেও নির্বিকারভাবে পা তুলে রাখল টেবিলের ওপর। ইতিমধ্যে শাহেদকে সব খুলে বলেছে আনোয়ার।
শাহেদের মাথা পরিষ্কার, অল্পতেই সব বুঝে গেছে।
ব্লাড ব্যাঙ্কের লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল আনোয়ার, ‘আমরা একটু দরকারে এসেছি। আপনার কাছ থেকে কিছু তথ্য দরকার।’
কুৎসিতভাবে গলা চুলকাতে চুলকাতে বলল লোকটা, ‘কী দরকার? ব্লাড-ফ্লাড এখন হবে না। বিশ্রামে আছি।’
‘তেরোই মার্চ, সন্ধ্যা সাতটায় জাহাঙ্গীর নামে একজন আপনাদের এখান থেকে ব্লাড নিয়েছিল। তার সম্পর্কে তথ্য দরকার।’
‘আমরা এসব তথ্য সংরক্ষণ করি না। আগে বাড়েন। যত্তসব!’
নিজের রিভলভারটা টেবিলে রাখল শাহেদ চৌধুরী। লোকটা কিছু বুঝে ওঠার আগে ঠাস করে চড় মেরে বসল।
যে রোগের যে ওষুধ।
আরেকবার হাত উঁচু করল শাহেদ, ‘হারামজাদা, পা নামিয়ে কথা বল!’
বিদ্যুতের গতিতে উঠে দাঁড়াল লোকটা। কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, ‘স্যর, মাফ করে দেন। আপনাদের চিনতে পারিনি।’
‘আমাদের নষ্ট করার মত সময় নেই,’ আনোয়ার বলল, ‘আমাদের জাহাঙ্গীর সম্পর্কে তথ্য দরকার। গত এক মাসে এই লোক কতবার ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়েছে?
দ্রুত রেজিস্টার খাতা বের করল লোকটা। ১৩ মার্চ পাতাটা দেখে বলল, ‘স্যর, জাহাঙ্গীর তো রোগীর নাম। ঢাকা মেডিকেলের ব্লাড ক্যান্সারের রোগী। জাহাঙ্গীরের জন্য রক্ত নিয়েছে তার আত্মীয় ইদ্রিস।’
‘ওহ্,’ বলল আনোয়ার, ‘আমার ভুল হয়েছে তা হলে। আচ্ছা, ইদ্রিস গত এক মাসে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে কতবার রক্ত নিয়েছে, জানাতে পারবেন?’
‘হ্যাঁ, অবশ্যই পারব। যারা এখানে নিয়মিত ব্লাড ডোনেট করে এবং যারা নিয়মিত রক্ত নেয়, তাদের একটা লিস্ট আমাদের কাছে আছে। দেখি সেখানে ইদ্রিসের নাম আছে কি না।’
পাতার পর পাতা উল্টাতে থাকল লোকটা। পনেরো মিনিট পর বলল, ‘হ্যাঁ, ইদ্রিস এখান থেকে নিয়মিত রক্ত নেয়। তার আত্মীয়ের জন্য প্রতি সপ্তাহে রক্ত লাগে।’
‘ইদ্রিস সম্পর্কে আমাদের সবকিছু জানান,’ বলল আনোয়ার, ‘তার মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা-সব।’
মাথা নিচু করে বলল লোকটা, ‘স্যর, অভয় দিলে একটা কথা বলি?’
‘হ্যাঁ, বলেন।’
‘আসলে ইদ্রিস আমাদের এখানেই পার্ট-টাইম কাজ করে। আমি নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম এই ইদ্রিসই সেই ইদ্রিস কি না। তাই আর একবার চেক করে নিচ্ছিলাম।’
শাহেদ বলল, ‘ইদ্রিস আজ এসেছে?’
‘হ্যাঁ, এসেছে। একজন ব্লাড ডোনেট করতে এসেছে, তাকে সাহায্য করছে।’
‘আমাদেরকে সেখানে নিয়ে চলুন।
‘চলুন, স্যর।’
.
কাজ শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে এল ইদ্রিস। আর তখনই তাকে চেপে ধরল শাহেদ। ‘নড়ার চেষ্টা করবি না। একদম মাথায় গুলি করে দেব।’
তোতলাতে শুরু করল ইদ্রিস, ‘স্-স্যর, আ-আমি কী করেছি?’
‘চুপচাপ আমাদের সঙ্গে চল্।’
একটা মাইক্রোবাসে ইদ্রিসকে তুলে নেয়া হলো।
টেনে ইদ্রিসের গেঞ্জিটা খুলে ফেলে যা ভেবেছিল, ঠিক তা-ই দেখল আনোয়ার।