রফিক সাদি আইডি কার্ডটা বের করে আনোয়ারের হাতে দিলেন।
ভাল করে কার্ডটা দেখল আনোয়ার। ইডেন কলেজের রসায়ন বিভাগের এক মেয়ের আইডি কার্ড। নাম ফারহানা সুলতানা।
‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, বিষয়টা নিয়ে আজ থেকেই কাজে নামব আমি।’ আনোয়ারের কথায় রফিক সাদি তেমন আশ্বস্ত হননি, বেশ বোঝা যাচ্ছে। আরও দু’চার কথার পর উঠে পড়লেন তিনি।
রফিক সাদি ও তাঁর ড্রাইভার বিদায় হওয়ার পর বন্ধু শাহেদ চৌধুরীকে ফোন করল আনোয়ার।
শাহেদ চৌধুরী ডিবি পুলিশ অফিসার। বেশ কিছু রোমহর্ষক কেস সমাধান করে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। স্কুল ও কলেজে একসাথে পড়েছে আনোয়ার ও শাহেদ। অনার্স থেকে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলাদা হলেও মনের দূরত্ব বাড়েনি।
‘শাহেদ, আনোয়ার বলছি। ব্যস্ত নাকি?’
‘কেমন আছিস, আনোয়ার? না, তেমন ব্যস্ত না।’
‘ভাল আছি। তোর সাহায্য দরকার।’
‘কী বিষয়ে সাহায্য?’
‘এখন তোকে সব বলতে পারছি না। আপাতত এক মেয়ে সম্পর্কে খোঁজ দরকার।’
‘কোন্ মেয়ে?’
‘ইডেন কলেজে পড়ে, রসায়ন বিভাগে, নাম ফারহানা সুলতানা।’
‘আচ্ছা? প্রেমঘটিত কোনও ব্যাপার নাকি?’
‘হা-হা, আরে না। সিরিয়াস ব্যাপার।’
‘তা হলে বল, এই মেয়ে সম্পর্কে কী জানতে চাস?’
‘আমি জানতে চাই মেয়েটা কি এখন কলেজে যাচ্ছে, নাকি সে নিখোঁজ। আর সে যদি নিখোঁজ হয়ে থাকে, তো এ ব্যাপারে থানায় কোনও জিডি বা মামলা করা হয়েছে কি না।’
‘আচ্ছা, সমস্যা নেই, আমি খোঁজ লাগাচ্ছি। কিছু জানতে পারলে তোকে জানাব।’
‘হ্যাঁ। একটু দ্রুত জানাতে চেষ্টা করিস।’
‘তুই পুরো ব্যাপারটা বললে হয়তো তোকে আরও নানা দিক দিয়ে সাহায্য করতে পারতাম।’
‘আগে নিজে পুরো ব্যাপারটা বুঝে নিই, তারপর অবশ্যই তোকে বলব।’
‘আচ্ছা।’
‘রাখছি এখন। বাই।’
.
রাত হয়ে গেছে।
ল্যাপটপের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে আনোয়ার।
বেশ কিছু বিষয়ে ইন্টারনেট থেকে জানা দরকার।
আন্দাজ করতে পারছে অনেক কিছুই, তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
কালকেই সে এলেমদারি বনে যাবে।
তবে একা নয়, রফিক সাদি এবং ড্রাইভার মহসিনকে নিয়ে যাবে। বন্ধু শাহেদকে বলে যাবে, তারা ফিরে না এলে যেন এলেমদারি বন তথা ঝমঝম কুঠিতে অভিযান চালায়।
ফোন করে রফিক সাদিকে প্রস্তুত থাকতে বলল আনোয়ার।
সকালে দেরি না করে রওয়ানা হবে ওরা ওই বনের উদ্দেশে।
আট
এলেমদারি বনের মূল সড়কের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আনোয়ার এবং রফিক সাদি।
মহসিন বলল, ‘ভাই, আমি কি আপনাদের সাথে আসব?’
‘না,’ বলল আনোয়ার, ‘আপনি গাড়ি নিয়ে সামনে এমন কোথাও চলে যান, যেখানে লোকবসতি আছে। আমরা কাজ শেষে আপনাকে ফোন দেব।’
‘কিন্তু নেটওয়ার্কের তো বড্ড সমস্যা।’
একটা কার্ড বের করে মহসিনের হাতে দিল আনোয়ার। ‘বনের মধ্যে নেটওয়ার্কের সমস্যা হতে পারে, তবে বনের বাইরে পাকা সড়কে তো সমস্যা হবে না। আমরা সড়কে এসেই আপনাকে ফোন দেব। আর যদি দেখেন বিকালের মধ্যে ফোন দিইনি, তবে আপনি এই নাম্বারে ফোন দেবেন। এটা ডিবি পুলিশ অফিসার শাহেদ চৌধুরীর নাম্বার।’
মহসিন নিতান্ত অনিচ্ছায় রাজি হলো। তারও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।
রফিক সাদি সঙ্গে করে নিজের লাইসেন্স করা রিভলভার নিয়ে এসেছেন। কোনও কাজে লাগবে কি না জানেন না, তবু মনের জোর বাড়াতে নিয়ে এসেছেন ওটা।
.
এলেমদারি বনে ঢুকে রফিক সাদির গলায় এবং ঘাড়ে কালো রং দিয়ে কয়েকটা বৃত্ত এঁকে দিল আনোয়ার।
রফিক সাদি আপত্তি করলেন না।
‘আপনি আজকে দৃঢ় পায়ে হেঁটে যাবেন,’ বলল আনোয়ার, ‘কারও দিকে তাকাবেন না। চিন্তা, ভয় এসব কিছুকেই মাথায় স্থান দেবেন না।’
মাথা নাড়লেন রফিক সাদি। আনোয়ারকে দেখে ভয়টাও এখন অনেকটা কমে গেছে। তবে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বললেন, ‘কিন্তু জয়ের বাবা-মা যদি জিজ্ঞেস করেন, আজ আবার কেন এলাম? বা আপনাকেই বা কেন নিয়ে এলাম?’
‘বলবেন, আপনি মেয়েকে এখানে নিয়ে আসতে রাজি হয়েছেন। বিয়েতে আপনার কয়েকজন আত্মীয় উপস্থিত থাকবে। এসব কথা ফাইনাল করতেই আজ এসেছেন। আর আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবেন, আমি আপনার ভাগ্নে। বিয়ের কথাবার্তা যখন চলছে, একজন আত্মীয় তো সাথে আসতেই পারে।’
‘ঠিক আছে। চলুন, এগোনো যাক।’
‘আমাকে তুমি করে বলবেন,’ হাসতে-হাসতে বলল আনোয়ার, ‘আমি কিন্তু আপনার ভাগ্নে। ভাগ্নেকে আপনি করে বললে কিন্তু ধরা পড়ে যাবেন।’
হাসিতে যোগ দিলেন রফিক সাদিও।
গুমোট পরিবেশটা যেন একটু হালকা হলো।
দু’জন হেঁটে চলেছে বনের ভিতর দিয়ে, এমন সময় এক লোককে দেখতে পেল আনোয়ার। তার শরীরের উল্কি ভাল করে লক্ষ্য করল। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লোকটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। হাতে মাছ ধরার কোঁচ।
আনোয়ার হাঁটছে, কাঁধে ঝুলছে ব্যাগ।
কিছুক্ষণ পর ঝমঝম কুঠিতে পৌঁছে গেল ওরা। পথিমধ্যে আর কোনও মানুষের দেখা পায়নি। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল আনোয়ার, ‘কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না। চলুন, এই সুযোগে বাড়ির পিছন দিকটা চক্কর দিয়ে আসি।’
রফিক সাদি সায় দিলেন।
বাড়িটা ঘুরে পিছন দিকে এসে চারপাশ ভাল করে লক্ষ্য করল আনোয়ার। জায়গাটা বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কিন্তু এক জায়গায় এলোমেলোভাবে পড়ে আছে কিছু জিনিস। তার ভিতর রয়েছে বেশ কিছু কাগজ, ব্যাগ, পলিথিন ইত্যাদি।