যেটা চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হয়নি।
হয়নি। ফান্ড-সংকটে আটকে গেছে। কিন্তু কিছুদূর এগিয়েছিল কথাবার্তা। আপনি কিছু কোর্স আউটলাইন জমা দিয়েছিলেন। সেখানে একটা জায়গায় সাইকো-অ্যানালাইসিস নামে একটা বিষয়ের উল্লেখ আছে।
ও আচ্ছা, এখন কিছুটা আঁচ পাচ্ছি বটে। হ্যাঁ, সাইকো অ্যানালাইসিসের উল্লেখ ছিল।
এ বিষয়ে আমার তেমন জানাশোনা নেই। তবে প্রফেসর দোলুশ বলেছেন, সেকেলে হয়ে যাওয়া এই বিদ্যা চর্চা করেন, এমন কেউ আর অবশিষ্ট নেই। একজন ছাড়া। আপনিই পৃথিবীর শেষ জীবিত সাইকো-অ্যানালিস্ট।
অতিরঞ্জন।
আপনি বিনয়ী।
আপনারা কী চান?
সাইকো-অ্যানালাইসিসের সঙ্গে স্বপ্ন-বিশ্লেষণের কোনো যোগ কি আছে?
পরোক্ষভাবে আছে। দেখুন, প্রথমত এটা একটা অকেজো বিদ্যা। উনিশ শতকের শেষ দিক আর বিশ শতকের শুরুর দিকে
এটার চর্চা গড়ে উঠেছিল। বেশিদিন টেকেনি। কারণ, মনের রোগ সারাইয়ের জন্যে এই বিদ্যা এমন কিছু হাইপোথিসিসের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, যেগুলো পরবর্তীকালে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।
বুঝলাম। কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে এই বিদ্যা কিছু দাবি করেছিল কী? করেছিল। এটা ওই বিদ্যার একটা অফশু্যট বলতে পারেন। দাবি করা হয়েছিল, মানুষের স্বপ্নের উপকরণগুলোকে এমনভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব, যা থেকে স্বপ্নদ্রষ্টার মনের অবস্থার একটা অনুমান পাওয়া যাবে।
তাই নাকি?
এই বিদ্যার যিনি ফাউন্ডার…
সিগমুন্ড ফ্রয়েড।
হ্যাঁ, তিনি এই চর্চাটাকে কিছুদূর এগিয়েও নিয়েছিলেন। তিনি স্বপ্ন বা ড্রিম ইন্টারপ্রিট করতে পারতেন বলে দাবি করতেন। স্বপ্নের উপকরণগুলোকে তিনি সেইভাবে ব্যবহার করতেন, মাইক্রোস্কোপের নিচের বায়োলজিক্যাল নমুনাকে আমরা যেভাবে ব্যবহার করি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এ বিদ্যার মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়। এই শাখার অপমৃত্যু ঘটে।
আমরা যা চাই, তা খুবই পরিষ্কার। আপনি ওই বিদ্যার কলাকৌশল প্রয়োগ করে আমাদের দেওয়া ডেটা বিশ্লেষণ করবেন। স্বপ্নের উপকরণ আপনাকে দেওয়া হবে। তা থেকে আপনি স্বপ্নদ্রষ্টাদের মন পড়ার চেষ্টা করবেন। আপনি তাদের সভ্যতা, তাদের সমাজ, তাদের আইন-কানুন পুনর্নির্মাণ করবেন। আর বোঝার চেষ্টা করবেন তাদের অভিপ্রায়।
প্রায় অসম্ভব কাজ।
কেন?
দুটি খুবই নড়বড়ে হাইপোথিসিসের ওপর ভর করতে বলা হচ্ছে আমাকে। প্রথমত, অনুমান করে নিতে হচ্ছে, আমাদের দোসরদের…
আমরা তাদের একটা কাজচলতি নাম দিয়েছি–সেকেন্ড কমিউনিটি।
বেশ, ভালো নাম। আচ্ছা, প্রথমত অনুমান করে নিতে হচ্ছে, এই সেকেন্ড কমিউনিটির লোকজনের বায়োলজিক্যাল চাহিদা আমাদেরই মতো, অর্থাৎ খাদ্য, ঘুম এবং যৌনতা ইত্যাকার ব্যাপারগুলোর প্যাটার্ন অভিন্ন। আর দ্বিতীয়ত, সাইকো অ্যানালাইসিসের মৌলিক স্বীকার্যগুলো পৃথিবীতে মানুষের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য, সবখানে সেটা সমভাবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ এগুলো সর্বজনীন। এত বড় দাবি স্বয়ং ফ্রয়েডও করতেন না।
আমরা এ ব্যাপারে আপনাকে ব্লাংক চেক দিয়ে দিচ্ছি। আপনি ব্যর্থ হলে আমাদের হারাবার কিছু নেই। জুয়ার বোর্ডে অন্ধ দান মারতে সমস্যা কী!
কিন্তু আমাকে এ কাজের যোগ্য মনে করার কোনো কারণ আছে কি?
আছে। অধ্যাপনার শেষ দিকে আপনি কিছু পেপার উপস্থাপন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, সেগুলো আপনার উন্মাদনা রোগের বহিঃপ্রকাশ। অনেকে বলেন, আপনাকে বাধ্যতামূলক রিটায়ারমেন্টে পাঠানোর পেছনে কাজ করেছে দলীয় রাজনীতি। আবার অনেকের সন্দেহ, এ ক্ষেত্রে ওই পেপারগুলোর ভূমিকাও কম নয়। পেপারগুলোর বিষয়বস্তু ড্রিম-অ্যানালাইসিস। আপনি একটা মহাজাগতিক স্বপ্নের হাইপোথিসিস দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন। কী সেটা, আমাদের ধারণা নেই। তবে আপনার ব্যাপারে প্রফেসর দোলুশের শক্ত সুপারিশ আছে।
আপনি শুরুতে কী একটা নিরাপত্তা হুমকির কথা বলছিলেন।
হুমকি আছে। অতি সম্প্রতি আমাদের একের পর এক কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বিকল হয়ে যাচ্ছে। সবগুলোই মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্ট। প্রথমে অ্যাক্সিডেন্টাল মনে করা হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে একটা প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। আরও বেশ কিছু অঘটন ঘটেছে, সবটা খুলে বলা যাচ্ছে না। এগুলো যোগ করলে একটা ইনভেশনের আলামত পাওয়া যায়। আর হুমকিটা যেদিক থেকে আসছে, এই স্বপ্নের উপকরণগুলোও সেদিক থেকে আসা। দুটোর মধ্যে আদৌ কোনো যোগসূত্র আছে কি না, আমরা জানি না। আমরা আপনার অ্যানালাইসিসের দিকে তাকিয়ে আছি।
তার মানে পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটা রাষ্ট্রীয় আর্জেন্সি আছে।
আছে বললে কম বলা হবে।
তার মানে আমার কোনো চয়েস নেই?
নেই। আগামী কয়েক দিন আপনি এখানেই থাকছেন। সব বন্দোবস্ত করা আছে। আর আপনার জন্যে এখানে একটি বিশেষ কক্ষ বানানো হয়েছে। একটা সিমুলেশন রুম। আমরা নাম দিয়েছি ড্রিম রুম।
সেটা কী?
এই সব টু ডাইমেনশনাল ডেটাগুলোর আমরা থ্রি ডাইমেনশনাল প্রতিরূপ নির্মাণ করছি। কিছুটা হলোগ্রাফিক ইমেজের মতো। আপনার বুঝতে সুবিধা যাতে হয়।
.
আজ সন্ধ্যায় আমি ড্রিম রুমে ঢুকছি।
একটা গোলাকার সিলড অন্ধকার কক্ষে আমাকে প্রবেশ করতে হবে। তার ভেতরে ভেসে বেড়াবে সৃষ্টির ওপার থেকে আসা অচেনা স্বপ্নের উপকরণ। তাদের ত্রিমাত্রিক চেহারা কেমন। হবে, আমার কোনো অনুমান নেই।