- বইয়ের নামঃ বানিয়ালুলু
- লেখকের নামঃ শিবব্রত বর্মন
- প্রকাশনাঃ বাতিঘর
- বিভাগসমূহঃ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
০. উৎসর্গ / ভূমিকা / সূচীপত্র
বানিয়ালুলু – শিবব্রত বর্মন / বিজ্ঞান কল্পগল্প
Banialulu (A collection of science fiction stories) by Shibabrata Barman
প্রথম প্রকাশ : মাঘ ১৪২৫, ফেব্রুয়ারি ২০১৯
.
বিজ্ঞান-কল্পকাহিনির চেনা সীমানা ডিঙিয়ে এই গল্পগুলোতে বিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসির এমন এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে। যা পাঠককে মুগ্ধ ও স্তম্ভিত করে রাখবে।
.
এমন এক দেশ, মানচিত্রে কোথাও যার উল্লেখ নেই, চরাচরব্যাপী এক ষড়যন্ত্র দেশটির অস্তিত্ব মুছে দিয়েছে, কিন্তু দেশটি যে আছে, মাঝে-মধ্যে পরোক্ষ আভাস। পাওয়া যায়; এমন এক জনপ্রিয় লেখক, যার বসবাস অন্য আরেক লেখকের মগজের ভেতরে; এমন এক আপেল, যা আসলে আপেল নয়–শেক্সপিয়রের সনেট; এমন এক তৈলচিত্র, যা যৌথভাবে আঁকছেন দুই সমান্তরাল মহাবিশ্বে বসবাসকারী দুজন শিল্পী; এমন এক কবিতা যা লেখার আগেই চুরি হয়ে গেছে; এমন এক খুনি, যাকে ধরতে হলে প্রমাণ করতে হবে লোকটা রোবটের ওপর নির্যাতন চালাত।
বানিয়ালুলু গল্পগ্রন্থে শিবব্রত বর্মন বিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসির এমন এক কল্পলোক তৈরি করেছেন যা পাঠককে একই সঙ্গে আবিষ্ট করে রাখে অনুসন্ধিৎসায় ও সন্তরণমগ্নতায়।
.
শিবব্রত বর্মন
জন্ম ১৯৭৩, ডোমার, নীলফামারী। বিচিত্র বিষয়ে লেখালেখি করলেও প্রধান ঝোঁক গল্প-উপন্যাসে। প্রথম বই ছায়াহীন বেরিয়েছিল ২০০৯ সালে। বিজ্ঞান-কল্পকাহিনি ও রহস্যকাহিনি লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত।
.
উৎসর্গ
আলতাফ শাহনেওয়াজ
আবুল বাসার
যাদের শ্রম ও ঘামের
ফসল এই বই
.
It is not down in any map;
true places never are.
–Moby Dick
Herman Melville
.
সূচীপত্র
বানিয়ালুলু
জাগার বেলা হলো
দুই শিল্পী
ভেতরে আসতে পারি?
প্রতিদ্বন্দ্বী
দ্বিখণ্ডিত
ড. মারদ্রুসের বাগান
বহুযুগের ওপার হতে
সার্কাডিয়ান ছন্দ
বুলগাশেম প্যারাডক্স
মইদুল ইসলামের শেষ তিন উপন্যাস
০১. বানিয়ালুলু
বানিয়ালুলু নামে যে একটা দেশ আছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় না এলে এটা কারও জানাই হতো না। জানা হতো না, লুলু নামে বানিয়ালুলুর একটা দাপ্তরিক ভাষা আছে এবং সোয়া কোটি লোক সেই ভাষায় কথা বলে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে গিয়ে এই দেশটির অস্তিত্ব ফাঁস হয়ে গেছে। কীভাবে সেটা ঘটল, সেই কাহিনি একাধারে কৌতুকময়, চমকপ্রদ এবং কিছুটা শ্বাসরুদ্ধকরও বটে, কেননা এর সঙ্গে একজনের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার যোগ আছে। যিনি নিখোঁজ হয়েছেন, তিনি একজন সাংবাদিক। তাঁর কথা আমি যথাস্থানে বলব। এখন শুরুর কথা শুরুতে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এই সাতটি দেশ হলো ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া, শাদ এবং উত্তর কোরিয়া। এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী। দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে এটি স্টেট ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে জারি করা হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এটি ছিল ওই দিন একই বিষয়ে জারি করা দ্বিতীয় আদেশ। এর আধা ঘণ্টা আগে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে যে আদেশটি জারি করা হয়েছিল, তাতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল আটটি দেশের নাম। অস্বাভাবিক দ্রুততায় সেই আদেশ বাতিল করে দ্বিতীয় আদেশ জারি করা হয়। সেখানে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় সাতটি দেশের নাম দেখা যাচ্ছে। যে অষ্টম দেশটির নাম কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটি বানিয়ালুলু। এই দেশটির নাম আগে কেউ কখনো শোনেনি। এই নামে কোনো দেশ নেই।
হোয়াইট হাউসের অফিশিয়াল ঘোষণায় কী করে অস্তিত্বহীন একটি দেশের নাম এল, তা নিয়ে কেউ খুব বেশি মাথা ঘামায়নি। অনেকেই এটাকে দাপ্তরিক প্রমাদ হিসেবে ধরে নেয়। তা ছাড়া সাত দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যে হই-হাঙ্গামা শুরু হয়, সবার নজর সেদিকে সরে গিয়েছিল। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এতে হাঁপ ছেড়েছিলেন এবং ভেবেছিলেন হোয়াইট হাউসের আসন্ন বহু কেলেঙ্কারির মধ্যে অন্তত একটি আপাতত চাপা দেওয়া গেছে। তাদের এই ভাবনা যে ভুল ছিল, বড়দিন আসার আগেই সেটা টের পাওয়া গেছে।
এখন আমি আমাদের সেই সাংবাদিক বন্ধুর কথা বলব, ২৪ সেপ্টেম্বরের প্রথম ঘোষণাটির দিকে যিনি ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে ছিলেন এবং দ্বিতীয় ঘোষণা আসা সত্ত্বেও যার কোঁচকানো ভ্র সোজা হয়নি। তিনি এর মধ্যে ইঁদুর মরার গন্ধ পেয়েছিলেন এবং সেই গন্ধ তাঁর নাকে ক্রমাগত ঘনীভূত হয়েছে। একাধিক সূত্র তাকে নিশ্চিত করেছে, ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম ঘোষণার কেলেঙ্কারির পরপর ওই দিন দুপুরেই হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের অতি আস্থাভাজন ‘ইনার সার্কেল’ তাৎক্ষণিক জরুরি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে এবং ওই দিন সন্ধ্যার আগেই কয়েকটি দপ্তরের পাঁচজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পুরো বিষয়টির মধ্যে একটি অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ো ছিল এবং সবকিছুর ওপর গোপনীয়তার একটা চাদর টেনে দেওয়া হয়েছিল।
চাকরি হারানো পাঁচ কর্মকর্তার একজন ছিলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রেকর্ড শাখার আর্কাইভিস্ট। কয়েক সপ্তাহ পর অক্টোবরের কোনো এক বিকেলে ম্যানহাটানের নবম ও দশম ব্লকের মাঝে ডেমি জোন্স নামে একটি ক্যাফেতে তাঁকে বসে থাকতে দেখা গেছে। তার সামনে বসে ছিলেন বাতিকগ্রস্ত সেই সাংবাদিক। তাকে এখন থেকে আমরা র্যাট স্মেলার নামে ডাকব। আর্কাইভিস্ট ও র্যাট স্মেলার পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট সেখানে বসে ছিলেন। তাঁরা নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। কথা শেষে বিল মিটিয়ে তারা ট্যাক্সি নিয়ে দুজন। দুদিকে চলে যান।