শামীম একটু নড়েচড়ে বসল, সেরিনার ক্ষমতাটা কী সে নিজ থেকে বলে জানাজানি করতে চায় না।
মহিলা পুলিশ অফিসার বলল, “সিক্রেট এজেন্ট কিছু লোককে অনেক টাকা দিয়ে এখানে পাঠালো। তারা একটা ভূয়া এনজিও অফিস খুলে কাজ শুরু করল। যখন আপনার মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে নেবে তখন তাদের দিকে যেন নজর না যায় তার ব্যবস্থা করল, কিছু দেশী ক্রিমিনালকে ভাড়া করল, সবার শেষে টাকা খাইয়ে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলল। এরপরের অংশটাতো আপনি জানেন।
শামীম বলল, “না, আমি জানি না।”
পুলিশ অফিসার বলল, “আপনার মেয়ে জানে। তাই না সেরিনা?”
সেরিনা কোনো কথা না বলে মাথা নাড়ল।
পুলিশ অফিসার বলল, “আপনার মেয়ে সেরিনা কিছু একটা সন্দেহ করেছিল। আপনাকে না বললেও তার বন্ধুদের বলেছিল। তার বন্ধুরা একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট খাঁটি বন্ধু। তারা ঠিক করল এখন থেকে সবসময় সেরিনাকে বাসায় পৌঁছে দেবে, আবার বাসা থেকে স্কুলে নিয়ে যাবে! ক্রিমিনালগুলো রাত্রে সেরিনাকে কিডন্যাপ করে আপনাকে বেঁধে রেখে গেল সেটা জানাজানি হবার আগেই তাদের পালিয়ে যাবার কথা। কিন্তু সেরিনার বন্ধুরা সকালে হাজির–আপনাকে তারা ছোটালো আপনি সরল বিশ্বাসে আমাদের ফোন করলেন। আমাদের একজন আপনাকে সাহায্য না করে ধানাই পানাই শুরু করল–একটা হেলিকপ্টার এসে সেরিনাকে নিয়ে পালিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আপনাকে ব্যস্ত রাখার কথা তারা সেটা খুব ভালোভাবে করেছে। কিন্তু সেরিনার বন্ধুরা সবকিছু ওলট পালট করে দিল। তারা যেটা করেছে শুধুমাত্র সেটাই ছিল সেরিনাকে উদ্ধার করার একমাত্র উপায়। এক হাজার মেয়ে গিয়ে হামলা করল! কী অসাধারণ একটা ব্যাপার।
“সিক্রেট এজেন্সীর সেই মহা শক্তিশালী এজেন্ট এখন পর্যন্ত যাকে পৃথিবীর কোনো শক্তি স্পর্শ করতে পারে নাই, ভবিষ্যতে স্পর্শ করতে পারবে বলেও মনে হয় না। কিন্তু স্কুলের বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা ঢিল মেরে তার নাকের হাড় আর একটা দাঁত ভেঙে দিয়েছে! উচিৎ একটা শিক্ষা হয়েছে।”
এই প্রথম সেরিনার মুখে সূক্ষ্ম একটা হাসি ফুটে উঠল। বলল, “বিলকিসের হাতের নিশানা খুব ভালো।“
পুলিশ অফিসার বলল, “যাই হোক। সিক্রেট এজেন্ট কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেরিনার আশা ছাড়ে নাই। যখন দেখল স্কুলের মেয়েরা সেরিনাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে তখন শেষ মুহূর্তে সেরিনার শরীরে একটা ট্রাকিওশান ঢুকিয়ে দিল।”
শামীম জিজ্ঞেস করল, “এটা কী?”
“এক ধরনের ইলেকট্রনিক ট্যাগ। নির্দিষ্ট সময় পরে পরে শরীরের ভেতর থেকে একটা ইলেকট্রনিক সিগন্যাল পাঠায়। এগুলো ক্রিমিনালদের ট্র্যাক করার জন্যে তাদের শরীরে লাগিয়ে দেয়, সাধারণত সাইজে বড় হয়, হাতে পায়ে কিংবা গলায় এমনভাবে লাগিয়ে দেয় যেন খুলতে না পারে। কিন্তু সেরিনার বেলায় তারা ব্যবহার করেছে স্টে অফ দি আর্ট ইলেকট্রনিক ট্যাগ। এতোদিন শুধু সায়েন্স ফিকশানে দেখে এসেছি–ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরী ডিভাইস। সিরিঞ্জে করে শরীরের রক্তে ইনজেক্ট করে দিয়েছে এখন সেটা তার শরীরের ভেতরে কোথাও আছে। এক মিনিট পর পর একটা সিগন্যাল পাঠাচ্ছে।”
শামীম ফ্যাকাসে মুখে বলল, “সেরিনার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না?”
মহিলা পুলিশ অফিসার মাথা নাড়ল, “না, কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। সেরিনা টেরও পাচ্ছে না। তাই না?”
সেরিনা মাথা নেড়ে জানাল সে কিছু টের পাচ্ছে না।
“এই ট্রাকিওশানে একটা ন্যানো ব্যাটারী আছে, সেই ব্যাটারীতে এটা এক বছর সেরিনার শরীর থেকে সিগন্যাল পাঠাবে তারপর সিগন্যাল পাঠানো বন্ধ করবে।”
শামীম বলল, “আমরা সেরিনার শরীর থেকে এটা বের করে ফেলতে পারব না?”
“চেষ্টা করা যেতে পারে কিন্তু মনে হয় না সেটা সম্ভব হবে। এমনভাবে তৈরী হয়েছে যে শরীরের ভেতরে গিয়ে কোনো এক জায়গায় আটকে যাবে। ন্যানো সাইজ, দেখারও উপায় নেই।”
শামীম চুপ করে রইল, তার চেহারায় একই সাথে ক্ষোভ, হতাশা আর এক ধরণের আতংক।
সেরিনা নিচু গলায় বলল, “আব্বু, আমার শরীরে ট্যাকিওশান কেন ঢুকিয়েছে তুমি বুঝতে পেরেছ?”
শামীম মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। বুঝতে পেরেছি।”
“আমাকে আবার ধরে নিতে আসবে। তখন যেন খুঁজে বের করতে পারে সেই জন্যে।”
পুলিশ অফিসার মাথা নাড়ল, বলল, “ট্রাকিওশানের টেকনোলজি খুবই মডার্ন, একেবারে সরাসরি স্যাটালাইটের সাথে যোগাযোগ।”
সেরিনা বলল, “আমি যদি ঘরের ভিতরে থাকি তাহলেও কী সিগন্যাল যাবে?”
“যাবে। সিগন্যাল ব্যান্ড উইডথটা খুব কায়দা করে রেডি করেছে।”
“যদি পানির নিচে থাকি?”
মহিলা পুলিশ অফিসার চোখ বড় বড় করে বলল, “পানির নিচে?”
“হ্যাঁ। পানির নিচ থেকে কী সিগন্যাল বের হবে?”
“না। পানির নিচ থেকে বের হবে না। ট্র্যাকিওশনের ফ্রিকোয়েন্সি পানিতে খুব দ্রুত এটেনিউয়েট করে।” মহিলা পুলিশ অফিসার সেরিনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি পানির কথা কেন জিজ্ঞেস করছ?”
সেরিনা মাথা নাড়ল, বলল, “না! এমনি।”
শামীম কিছুক্ষণ এক দৃষ্টে সেরিনার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর মাথা ঘুরিয়ে পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার মেয়ের সিকিউরিটির জন্যে আমি কী করতে পারি?”
মহিলা পুলিশ অফিসার কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে বসে রইল। শামীম আবার জিজ্ঞেস করল, “আমি কী করতে পারি?”