“তোমাকে এই সাহেব তাদের দেশে নিয়ে যাবেন।”
“কীভাবে নিয়ে যাবেন?”
“তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে একটা বাক্সে করে নিয়ে যাবে। তুমি কিছু জানতেই পারবে না। ঘুম ভাঙার পর দেখবে তুমি বিশাল একটা ল্যাবরেটরিতে। শত শত সায়েন্টিস্ট তোমকে নিয়ে গবেষণা করবে।”
সেরিনা কেঁদে ফেলল, বলল, “আমি যেতে চাই না। প্লীজ আমাকে ছেড়ে দেন। প্লীজ! প্লীজ!”
বিদেশী মানুষটা মুখে একটা হাসি নিয়ে এক পাশে সরে গেল তারপর একজনকে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের পরিকল্পনাটা কী? হেলিকপ্টার কখন। আসবে।”
“সকাল দশটায়। দশটায় ক্যাপসুলটা নিয়ে যাবে।”
“মেয়েটাকে ক্যাম্পসুলে ঢোকাবে কখন?”
“সকাল নয়টার দিকে।”
“বাবাটা যদি তার আগে শহরে হই চই শুরু করে দেয়?”
“করবে না, ওর বাসায় মেয়েটার বাবা ছাড়া আর কেউ নেই। কাজের একটা মহিলা আসে বেলা দশটার দিকে, বাপটা তখন ছাড়া পেয়ে হই চই করতে শুরু করলেও আমরা ততক্ষণে হাওয়া হয়ে যাব। তা ছাড়া বেশী হই চই করতে পারবে না। আমরা ডলার দিয়ে, সবার মুখ বন্ধ করে রেখেছি। কেউ তার কোনো কথা শুনবে না।”
“গুড। কিন্তু–” বিদেশীটা একটু ইতস্তত করে। “কিন্তু কী?”
“তারপরও আমার মনে হয় বাপটাকে মেরে ফেলে আসা উচিৎ ছিল। একজন জীবন্ত মানুষ মানেই বাড়তি যন্ত্রণা!”
ভদ্রলোকের মতো দেখতে মানুষটা মাথা নাড়ল, বলল, “না। আমরা শুধু শুধু একজন মানুষকে মারতে চাই না। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, কোনো রক্তপাত ছাড়াই আমরা প্রজেক্টটা শেষ করব।”
বিদেশীটা বলল, “ঠিক আছে। আমাদের হাতে এখন চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় আছে, এই সময়ের ভিতর মেয়েটার পুরো বায়োলজিক্যাল প্রোফাইলটা বের করে ফেল।”
“হ্যাঁ। বের করে ফেলব।“
“তোমরা পুরো প্রজেক্টটা ঠিক করে বের করে দাও, আমাদের এজেন্সি তোমাদের খুশী করে দেবে!”
“তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। তোমার প্রজেক্ট আমরা এখান থেকে বের করে দেব। তোমার দেশে তোমরা কী করবে সেটা নিয়ে তুমি মাথা ঘামাও!”
“একবার আমার দেশে নিতে পারলে পুরোটা হবে একট টুকরা কেকের মতো সোজা!”
তারপর দুইজনই হা হা করে হাসতে লাগল। সেরিনা শূন্য দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনে হতে থাকে তার মাথার ভেতরে সবকিছু বুঝি শূন্য হয়ে যাচ্ছে!
০৯. ভোরবেলা গৌরী আর ললিতা
ভোরবেলা গৌরী আর ললিতা সেরিনার বাসায় এসে বেল বাজায়। সকাল বেলা তাদের সেরিনাকে নিয়ে স্কুলে যাবার কথা। কেউ দরজা খুলল না তখন তারা আরো কয়েকবার বেল বাজালো। এবারও কেউ দরজা খুললো না। তখন তারা কয়েকবার জোরে জোরে সেরিনার নাম ধরে ডাকল। তারপরও কেউ দরজা খুলল না। তখন দুজনেই একটু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। কী করবে সেটা নিয়ে যখন চিন্তা করছে ঠিক তখন বিলকিসকেও দেখা গেল, এতো সকালে সেও চলে এসেছে
বারবার বেল বাজানোর পর ডাকাডাকি করার পরও কেউ দরজা খুলছে না শুনে বিলকিসও দুর্ভাবনায় পড়ে গেল। বিলকিস তখন গিয়ে দরজায় একটা ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে যায়। তারা সবাই তখন একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাল, দরজাটা খোলা কেন? হঠাৎ করে তাদের বুকের ভেতর এক ধরনের আতংক হতে থাকে। পা টিপে টিপে তারা বাসায় ভেতরে ঢুকলো। ডাইনিং টেবিলের ওপর কয়েকটা বই, পাশে একটা ঘর, দরজা খোলা। অন্য ঘরটা সেরিনার সেখানে উঁকি দিতেই তারা চমকে উঠল, সেখানে একটা চেয়ারে সেরিনার বাবা শামীমকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মুখের মাঝে টেপ লাগানো তাই কোনো শব্দ করতে পারছে না।
তিনজন একসাথে চিৎকার করে উঠল তারপর তারা শামীমের কাছে। ছুটে গেল। বিলকিস টান দিয়ে মুখের টেপটা খুলে দেয়, গৌরী আর ললিতা হাতের বাধন খোলার জন্যে টানাটানি করতে থাকে, কিন্তু শক্ত করে বাঁধা বলে খুলতে পারছিল না। শামীম বুক ভরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে বলল, “সেরিনাকে ধরে নিয়ে গেছে।”
“কে ধরে নিয়েছে?”
“তিন চারজন মানুষ এসেছিল–” শামীম ভাঙা গলায় বলল, “মেয়েটা আমার কোথায় আছে? কেমন আছে?”
গৌরী বলল, “চাচা, আমরা জানি সেরিনাকে কারা ধরে নিয়ে গেছে।”
শামীম চিৎকার করে বলল, “তোমরা জান? কারা? কোথায়?”
গৌরী বলল, “দাঁড়ান চাচা, আমরা বলছি, আগে আপনার হাত পায়ের দড়িটা কেটে দেই।”
শামীম বলল, “রান্নাঘরের টেবিলে দেখ, চাকু আছে।”
রান্নাঘরের টেবিল থেকে একটা বড় চাকু এনে তারা শামীমের হাত পায়ের দড়ি কেটে দিল। শামীম হাত আর পায়ে টিপে টিপে রক্ত সঞ্চালন করতে করতে বলল, “কারা সেরিনাকে ধরে নিয়েছে? তোমরা কেমন করে জান?”
বিলকিস বলল, “সেরিনা আমাদের বলেছে।”
“সেরিনা তোমাদের বলেছে? তাহলে আমাকে কেন কিছু বলল না?” শামীম অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।
গৌরী বলল, “মনে হয় আপনি দুশ্চিন্তা করবেন বলে আপনাকে বলে নাই।”
ললিতা বলল, “একটা বিদেশী লোক আছে। কালো চশমা পরে থাকে।”
গৌরী বলল, “ওরা একটা এনজিও। শহরের শেষে যে বড় নূতন বিল্ডিং তৈরী করেছে সেইখানে আছে।”
“তুমি কেমন করে জান?”
“বাবা বলেছে। এই এনজিও বিল হাওর রক্ষা করার জন্যে এসেছে। আমার বাবা মাছ ধরে–ওরা বাবাদের সাথে কথা বলেছে। বাবা জানে।”
“তুমি এনজিওর নাম জান?”
গৌরী মাথা চুলকালো, বলল, “বাবা নাম বলেছিল, এখন ভুলে গেছি।”
শামীম বলল, “কোনো সমস্যা নাই। আমি বের করে নেব।”