রিদি আর রুহান একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। বাদামী চুলের মানুষটি বলল, আমার মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি তোমরা শক্তিশালী একটা দল তৈরি করে ফেলতে পারবে। পার্বত্য এলাকার ওপাশে বিশাল একটা এলাকায় এখনো কেউ যায় নি। আমরা সবাই মিলে সে এলাকাটা আক্রমণ করতে পারি।
মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা একজন মানুষ তার গাল ঘষতে ঘষতে বলল, ঐ এলাকার মানুষগুলো খুব শক্ত সমর্থ। ধরে আনতে পারলে অনেক ইউনিটে বিক্রি করতে পারবে।
রিদি আর রুহান একজন আরেকজনের দিকে তাকাল, রুহান কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তাকে বাধা দিয়ে বাদামী চুলের মানুষটি বলল, প্রথমে ভালো কিছু অস্ত্র দরকার। গ্রুজনির অস্ত্র কিছু লুট করে আনা যায়–
রুহান এবার হাত তুলে বাধা দিয়ে বলল, দাঁড়াও দাঁড়াও, তোমরা আরো কিছু বলার আগে আমাদের কথা একটু শুনো।
রুহানের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল, মানুষটি থেমে গিয়ে থতমত খেয়ে রুহানের দিকে তাকাল। রুহান শান্ত গলায় বলল, তোমরা খুব একটা বড় ভুল করেছ।
কী ভুল করেছি?
তোমরা যেরকম ভাবছ ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়।
মানুষটি অবাক হয়ে বলল, ব্যাপারটি মোটেও কী রকম নয়?
আমরা একটা দল তৈরি করছি না। দল তৈরি করে আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি করতে যাচ্ছি না। মানুষ ধরে ধরে তাদের বিক্রি করতে যাচ্ছি না।
বাদামী চুলের মানুষটি অসহিষ্ণু গলায় বলল, তুমি কী বলছ? আমরা খুব ভালো করে জানি তুমি ত্রিশজন ছেলে-মেয়েকে লুট করে নিয়ে এসেছ। এজেন্ট দ্রুচান দশ পার্সেন্ট কমিশনে তাদেরকে পৌঁছে দিচ্ছে–
না, না, না। রুহান মাথা নাড়ল, আমরা তাদেরকে মুক্ত করে এনে। মুক্ত করে তাদেরকে তাদের এলাকায় ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছি।
এজেন্ট দ্রুচান-
এজেন্ট দ্রুচান আমাদের সাহায্য করছে। সে একটি ইউনিটও নিচ্ছে না।
বাদামী চুলের মানুষটি বিস্ফারিত চোখে বলল, এজেন্ট দ্রুচান কোন ইউনিট নিচ্ছে না?
না।
কেন?
রুহান মাথা নেড়ে বলল, আমি জানি না তোমাকে এটা কেমন কে বোঝাব।
চেষ্টা কর!
আমরা মনে করি, মানুষ হয়ে মানুষকে বেচা-কেনা করা যায় না। সা! পৃথিবী এখন যেরকম স্বার্থপর হয়ে গেছে, লোভী হয়ে গেছে, হিংস্র হয়ে গেu. এটা ঠিক না। আমাদে একজনের অন্যজনকে সাহায্য করতে হবে, ভালোবাসতে হবে। আমাদের নিঃস্বার্থ হতে হবে। এজেন্ট দ্রুচান আমাদের কথা বিশ্বাস করে আমাদের সাহায্য করছে।
মানুষগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকাল, তারা এখনও রুহানের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। রুহান একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি জানি তোমরা আমার কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছ না, কিন্তু আমি যেটা বলছি সেটা সত্যি। পৃথিবীটা ঠিক দিকে যাচ্ছে না, আমি আর রিদি মিলে পৃথিবীটা ঠিক করতে পারব না। কিন্তু যেটা ঠিক সেটা করার চেষ্টা করতে পারব। আমাদের কথা শুনে অন্যেরা হয়তো সেটা বিশ্বাস করবে। কোথাও কেউ হতে। সত্যিকারভাবে চেষ্টা করবে।
বাদামী চুলের মানুষটির মুখে বিদ্রুপের এক ধরনের হাসি ফুটে উঠল। হেঁটে গাছে হেলান দিয়ে রাখা অস্ত্রটি তুলে নিয়ে বলল, আমরা ভেবেছিলাম তোমরা দুঃসাহসী মানুষ। এখন দেখছি সেটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। তোম্রা ভীতু আর কাপুরুষ। শুধু যে ভীতু আর কাপুরুষ তাই নয় তোমাদের কোনো বাস্তব জ্ঞান পর্যন্ত নেই।
রিদি ক্রুদ্ধ হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, রুহান তাকে থামাল। বলল, আমি দুঃখিত, তোমরা ভুল একটা ধারণা করে এত কষ্ট করে এখানে এসেছ!
হ্যাঁ। সেটা সত্যি, তোমাদের খুঁজে বের করে এখানে আসতে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। শুধু শুধু সময় নষ্ট!
আমরা খুব দুঃখিত।
মানুষগুলো কোনো কথা বলল না। রুহান বলল, তোমরা তাহলে ফিরে যাচ্ছ?
হ্যাঁ।
তোমাদের ফেরত যাত্রা শুভ হোক।
মানুষগুলো এবারেও কোনো কথা না বলে কঠোর মুখে তাদের গাড়িতে ফিরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইঞ্জিন গর্জন করে ওঠে এবং গাড়িটি যে দিক দিয়ে এসেছিল সেই দিকে ফিরে যেতে শুরু করে।
কিছুক্ষণের মধ্যে তারা ফিরে আসবে। গলার স্বর শুনে রুহান আর রিদি মাথা ঘুরিয়ে তাকাল, এজেন্ট দ্রুচান ঘুম ঘুম চোখে দাঁড়িয়ে আছে। রুহান জিজ্ঞেস করল, কে ফিরে আসবে?
এই মানুষগুলো?
কেন?
তোমাদের সাথে যোগ দিতে।
রুহান অবাক হয়ে বলল, তুমি কেমন করে জান?
এজেন্ট দ্রুচান অবাক হয়ে বলল, আমি জানি। কেমন করে জানি সেটা জানি না। কিন্তু আমি জানি। আমিও এসেছিলাম মনে নেই?
ক্রিটিনা নরম গলায় বলল, আমি কারণটা জানি।
কী কারণ?
কারণটা খুব সহজ। মানুষ আসলে ভালো। তারা ভালো থাকতে চায়। যখন ভালো থাকার সুযোগ পায় তারা ভালো হয়ে যায়। ভালো থাকার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে।
কী ব্যাপার?
এটাকে মনে হয় বলে শান্তি। পৃথিবীর সবাই শান্তি খুঁজে বেড়াচ্ছে। অথচ শান্তি খুঁজে পাওয়া কী সহজ। অন্যের জন্যে কিছু একটা করাই হচ্ছে শান্তি। মানুষ কেন যে এটা বোঝে না কে জানে?
রুহান আর রিদি এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে ক্রিটিনার দিকে তাকিয়ে রইল।
গাড়িটি সত্যি সত্যি ফিরে এলো ঘণ্টা দুয়েক পরে। গাড়িতে অবশ্যি সবাই ছিল না, দশজনের ভেতর তিনজন ফিরে আসতে রাজি হয় নি, তাদের ধারণা ব্যাপারটা একটা হাস্যকর নির্বুদ্ধিতা। তারা নিজের এলাকায় ফিরে গেছ বাদামী চুলের মানুষটা সেই তিনজনের একজন।
অন্যেরা জানাল তারা হঠাৎ করে বুঝতে পেরেছে যে তারা আসবে। অসুখী। তারা একটু সুখ চায়। সুখ আর শান্তি। ভালো হয়ে থাকার শান্তি।
১২. লরির খোলা দরজার কাছে
লরির খোলা দরজার কাছে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রুহান তার লাল পাহাড় থেকে কিনে আনা বইটি পড়ছে তখন ক্রিটিনা জিজ্ঞেস করল, তোমার হাতে টা কী?