এর মধ্যে ক্রিটিনা সবাইকে ডেকে এনেছে। তাদেরকে একটা জরুরি কাজ করতে হবে বলে সে সবাইকে একটা লম্বা সারিতে দাঁড়া করাল। সবাই উশখুশ। করছিল, রুহান হাত তুলে তাদের শান্ত করে বলল, আজ তোমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করতে হবে।
একজন জানতে চাইল, কী কাজ?
তোমরা সবাই নিশ্চয়ই অনুমান করেছ তোমাদের আবার ধরে নেবার জন্যে কিছু মানুষজন আসার কথা। বাজে মানুষ। খারাপ মানুষ। জঘন্য মানুষ।
সবাই মাথা নাড়ল। রুহান বলল, তারা আসছে।
সাথে সাথে সবার ভেতরে একটা আতঙ্কের ছাপ পড়ল। রুহান হাত ও বলল, তোমাদের ভয় পাবার কিছু নেই। সেই জঘন্য মানুষগুলোকে আমরা কাছে আসতে দেব না। দূর থেকে আমরা তাদের ধ্বংস করে দেব।
কীভাবে ধ্বংস করবে?
এই কাচগুলো দিয়ে। তোমরা সবাই নিশ্চয়ই কখনো না কখনো আয়না দিয়ে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করেছ, দূরে কোথাও পাঠিয়েছ। তাই না?
সবাই মাথা নাড়ল। রুহান বলল, এখানেও তাই করবে, এই বড় কাচগুলো আয়নার মতো তবে–আলো নয় তাপকে প্রতিফলিত করে।
রুহান সবার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে গলা উঁচু করে বলল, আম সবাই যদি আলাদা আলাদাভাবে আয়নাগুলোকে দিয়ে এক জায়গায় সব তাপ কেন্দ্রীভূত করতে পারি, প্রচণ্ড তাপে সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠবে। তোমরা যদি আমার কথা বিশ্বাস না কর এখনই সেটা পরীক্ষা করে দেখতে পার। আমি তোমাদের সবাইকে একটা করে কাচ দেব, তোমরা সূর্যের আলোকে এই কাচ দিয়ে প্রতিফলিত করে এক জায়গায় ফেলবে। পারবে না?
সবাই চিৎকার করে বলল, পারব।
চমৎকার! রুহান তখন পাশে সাজিয়ে রাখা কাচগুলো একজন একজনকে দিতে শুরু করে। চেষ্টা করা হয়েছে যথাসম্ভব বড় টুকরো দিতে, ভারী কাচগুলো নিচে রেখে সবাই দুই পাশে ধরে দাঁড়ায়। রুহান একপাশে সরে গিয়ে বলল, সাবধান, কারো যেন হাত না কাটে। ভাঙ্গা কাচ খুব ধারালো হয়।
সবাই মাথা নেড়ে জানাল তারা সবাধান থাকবে।
রুহান তখন বেশ খানিকটা দূরে একটা শুকনো গাছের গুড়ি দেখিয়ে বলল, সবাই চেষ্টা কর সূর্যের আলোটাকে এখানে প্রতিফলিত করতে। যখন প্রতিফলিত হবে তখন স্থিরভাবে ধরে রাখবে। ঠিক আছে?
সবাই মাথা নাড়ল।
চমৎকার! রুহান সামনে থেকে সরে গেল। বলল, শুরু কর।
ব্যাপারটা ঠিক কীভাবে করতে হবে বুঝতে একটু সময় লাগল, সবাই তাদের কাচটা ঠিক করে ধরার চেষ্টা করতে থাকে। আলোটাকে গাছের গুড়িতে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করতে থাকে। যখন সবাই সূর্যের আলোকে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীভূত করতে পারল তখন গাছের গুড়িটা থেকে প্রথমে ধোঁয়া বের হতে থাকে তারপর হঠাৎ ধক করে আগুন ধরে ওঠে। সবাই আনন্দে চিৎকার করে ওঠে সাথে সাথে।
রুহান হাততালি দিয়ে বলল, চমৎকার! এসো, এবারে আরো দূরে কোথাও চেষ্টা করি।
দেখতে দেখতে সবাই ব্যাপারটা ধরে ফেলল, কোনো একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দিলে সবাই মিলে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিতে পারছে। বেশ সহজেই।
রিদি প্রথমে ঠিক বিশ্বাস করে নি যে এটা সম্ভব যখন দেখল সত্যি সত্যি সবাই মিলে অনেক দূরে একটা জায়গায় আগুন লাগিয়ে দিতে পারছে সে হতবাক হয়ে গেল। মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, এটি কেমন করে সম্ভব? কী। আশ্চর্য!
রুহান অবশ্যি কথাবার্তায় আর সময় নষ্ট করল না। রাস্তাটার পাশে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় এই জনা ত্রিশেক ছেলেমেয়েদের সবার কাছে বড় একটা কাচের টুকরো দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল। সবাই ঝোপঝাড়ের আড়ালে নিজেদের আড়াল করে রাখল, হঠাৎ করে তাকালেও যেন কাউকে দেখা না যায়।
গাড়িগুলোতে আগুন ধরানোর জন্যে সেগুলো থামানো দরকার। তাই রুহান আর রিদি মিলে পাহাড় থেকে বেশ কিছু বড় বড় পাথর গড়িয়ে রাস্তার উপর নামিয়ে নিয়ে এলো। দেখে মনে হয় পাহাড়ের উপর থেকে এমনি বুঝি গড়িয়ে নেমেছে। এ জায়গায় এসে পাথরগুলো সরানোর জন্যে গাড়ি থামিয়ে সবাইকে গাড়ি থেকে নামতেই হবে।
সবরকম প্রস্তুতি নিয়েও রুহান সন্তুষ্ট হলো না। রাস্তার পাশে বড় পাথরের আড়ালে অস্ত্র নিয়ে তারা নিজেরা লুকিয়ে রইল। যদি কোনোভাবে দলটা থামানো না যায় তখন গোলাগুলি করে থামাতে হবে! রাস্তার এক পাশে থাকল রুহান আর ক্রিটিনা, অন্য পাশে রইল রিদি। এবারে শুধু অপেক্ষা করা।
অপেক্ষা করতে করতে যখন সবাই অধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছেচে ঠিক তখন তারা পাহাড়ী রাস্তায় গাড়িগুলোর ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে পেল। পাহাড় রাস্তার ঠিক কোথায় আছে তার উপর নির্ভর করে শব্দটা হঠাৎ হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছিল আবার হঠাৎ করে কমে আসছিল। এক সময় শব্দটা একটা নিয়মিত শব্দে পরিণত হলো এবং ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর দূরে গাড়িগুলোকে দেখা যেতে লাগল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেগুলো রাস্তায় পড়ে থাকা পাথরগুলোর সামনে এসে দাঁড়াল।
গাড়ির দরজা খুলে খুব সাবধানে একজন অস্ত্র হাতে নেমে আসে, সে সতর্ক চোখে চারদিকে দেখে অন্যদের নামতে ইঙ্গিত করল। অস্ত্র হাতে তখন বেশ অনেকগুলো মানুষ নেমে গাড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে সতর্কভাবে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। নেতাগোছের একজন বলল, কী মনে হয়? এটা কী কোন ট্রাপ?
অন্য একজন উত্তর করল, বুঝতে পারছি না। কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ করে রাস্তার মাঝে পাথর পড়ে আছে? আমার মনে হয় কেউ এনে রেখেছে।
সাবধান! দুইজনই কিন্তু খেলোয়াড়। মনে নাই এরা ক্ৰিভনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল!