ক্ৰিভন ভয় পাওয়া গলায় বলল, কোথায়?
রুহান বলল, আমি ভালো করে জানি না। তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে পাথরের দেয়াল থেকে নিচে ফেলে দেয়। দেয়ালটি খুব বেশি উঁচু নয় কিন্তু ক্ৰিভন প্রস্তুত ছিল না বলে নিচে লুটোপুটি খেয়ে পড়ল, রুহান লাফিয়ে নাম ঠিক তার পাশে। রুহানের পোশাক ধরে তাকে টেনে তুলে বলল, ব্যথা পেয়েছ?
ক্ৰিভন মুখে যন্ত্রণার চিহ্নটা সরাতে সরাতে বলল, না। পাইনি।
চমৎকার! রুহান তাকে নিজের খুব কাছাকাছি টেনে এনে বলল, ক্ৰিভন, তুমি আমার কাছাকাছি থাক। তোমার গার্ডগুলোর যদি মাথা মোটা হয় আর তোমাকে বাঁচানোর জন্যে দূর থেকে গুলি করার চেষ্টা করে তাহলে সেট। যেন শুধু আমাদের গায়ে না লাগে, তোমার ঘিলুও যেন খানিকটা বের হয়ে আসে। বুঝেছ?
ক্ৰিভন ফ্যাকাসে মুখে বলল, কেউ গুলি করবে না।
না করলেই ভালো।
রুহান ক্ৰিভনকে টেনে মাঠের মাঝামাঝি নিয়ে যায় যেখানে রিদি দুই হাতে দুটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রিদির মুখে বিচিত্র এক ধরনের হাসি ফুটে উঠল। বলল, রুহান! তুমি এটা কী করেছ?
এই পুরো এলাকার অলিখিত যুদ্ধবাজ সম্রাটকে ধরে এনেছি। কেন?
তুমি বলেছ হাজার হাজার দর্শক অনেকগুলো ইউনিট খরচ করে আমাদের খেলা দেখতে এসেছে। কিছু একটা যদি না করি তাহলে তাদের খুব আশাভঙ্গ হবে।
রিদি কিছুক্ষণ রুহানের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ভালো মানুষের মতো হেসে ফেলল, তারপর কাছে এসে রুহানের পিঠে থাবা দিয়ে বলল, আমি আমার জীবনে তোমার চাইতে বিচিত্র মানুষ দেখি নি!
রুহান বলল, সেটা নিয়ে পরেও কথা বলা যাবে। কিন্তু ক্ৰিভনকে নিয়ে কী করি?
রিদি হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে গাল ঘষে বলল, দর্শকদের একটা সহজ উপায় হচ্ছে এই মাঠের মাঝখানে একে গুলি করে মেরে ফেলা। দর্শকদের তাহলে একেবারেই আশা ভঙ্গ হবে না। তারপর আমরা ঘোষণা করে দিই আমরা এখন এই সাম্রাজ্যের হর্তাকর্তা বিধাতা!
ক্রিভনের মুখ হঠাৎ একেবারে রক্তশূন্য হয়ে যায়। সে ভাঙ্গা গলায় বলল, ঈশ্বরের দোহাই লাগে তোমাদের, তোমরা যা চাও তাই দেব আমি–আমাকে মেরো না।
যা চাই তাই দেবে?
হ্যাঁ। ঈশ্বরের কসম খেয়ে বলছি–
বেশ। রিদি অস্ত্রটা তার গলায় স্পর্শ করে বলল, এই মুহূর্তে আমাদের হওনকে এখান থেকে বের হয়ে একটা বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে নিয়ে যাও।
নিয়ে যাব। অবশ্যই নিয়ে যাব। একশবার নিয়ে যাব।
কোথায় নিয়ে যাবে?
ক্রিভন ভাঙ্গা গলায় বলল, তোমরা যেখানে বলবে। তোমরা যেখানে যেতে চাও–
যাবার কোনো জায়গা আছে নাকি আবার। পুরো দুনিয়াটাই তো তোমরা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে রেখেছ!
জঙ্গলে?
মাথা খারাপ, জঙ্গলে গিয়ে আমি শেয়াল কুকুরের মতো লুকিয়ে থাকব?
তাহলে কোথায় যাবে?
লাল পাহাড়ে গেলে কেমন হয়?
লাল পাহাড়ে? ক্ৰিভনের মুখটা বিবর্ণ হয়ে যায়। লা-লাল পাহাড়ে?
হ্যাঁ। রিদি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা দিয়ে গলায় খোঁচা দিয়ে বলল, কোনো সমস্যা আছে?
না, নেই।
চমৎকার! রিদি ক্ৰিভনকে ধাক্কা দিয়ে বলল, চল যাই।
ক্রিভন অনিশ্চিত ভঙ্গিতে দুই পা হেঁটে সামনে যায়। রিদি পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে একবার দর্শকদের মুখের দিকে তাকাল। তারপর রুহানের দিকে চোখ মটকে বলল, দর্শকদের আরেকটু আনন্দ দেয়া যাক কী বলো?
রুহান মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে। সেও তার অস্ত্রটা বের করে নেয়। তারপর কেউ কিছু বোঝার আগে দর্শকের মাথার উপর দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার করে সবাই মাথা নিচু করে যে যেখানে আছে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করে, হুঁটোপুটি করে ছুটে পালাতে শুরু করে। রিদি হা হা করে হেসে বলল, হায়রে আমাদের মুরগি ছানার দল! ইউনিট খরচ করে মানুষ মারা দেখতে এসেছে অথচ সাহসের নমুনা দেখ!
রুহান বলল, অনেক হয়েছে, এখন চল।
রিদি মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, দেখা যাক আসলেই আমরা পালাতে পারি কি না!
ক্রিনের পোশাকের পিছনে ধরে তারা তাকে ঠেলে নিয়ে যেতে থাকে। সমস্ত এলাকাটা তখন মানুষের হৈ চৈ চিৎকারে একটা নারকীয় পরিবেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে কোনো জায়গা থেকে কেউ গুলি করে তাদের শেষ করে দিতে পারে কিন্তু সেটা নিয়ে এখন চিন্তা করার সময় নেই।
রুহান আর রিদি পাশাপাশি ছুটতে থাকে। কিছুক্ষণ আগেও তাদে একজনের আরেকজনকে হত্যা করার কথা ছিল।
০৮. পাহাড়ের উপর থেকে
পাহাড়ের উপর থেকে নিচের উপত্যকাটির দিকে তাকিয়ে রিদি বলল, এই হচ্ছে সেই লাল পাহাড়।
রুহান বলল, এটা লালও না পাহাড়ও না তাহলে এর নাম লাল পাহাড় কেন?
রিদি হেসে বলল, আমাকে জিজ্ঞেস করো না। আমি এর নাম দিই নি।
তুমি এখানে আসতে চেয়েছ–এটা সম্পর্কে নিশ্চয়ই তুমি জান।
এমন কিছু জানি না, শুধু শুনেছি এই লাল পাহাড়টা কারো এলাকা না। সবার ভেতরে একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে যে এটা কেউ দখল করে নেবে না।
কেন?
রিদি ঘাড় বাঁকিয়ে বলল, সবারই ব্যাবসাপাতি করতে হয়। অস্ত্র কিনতে হয়। সৈনিক বিক্রি করতে হয়। যন্ত্রপাতি ঠিক করতে হয়। তাই লাল পাহাড়টা এই সব করার জন্যে রেখে দিয়েছে।
রুহান আঁকাবাঁকা রাস্তাটির দিকে তাকিয়ে রইল, সেটা পাহাড় ঘিরে নিচে উপত্যকায় নেমে গেছে। তাদেরকে এই পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে নেমে যেতে হবে। এরকম বেশ কয়েকটি রাস্তা চারদিক থেকে এসেছে। ওরা ইচ্ছে করলে ক্ৰিভনকে নিয়ে একেবারে উপত্যকায় নেমে যেতে পারত কিন্তু তা না করে এখানে নেমে পড়েছে। ক্রিভনের গলায় একটা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চেপে ধরে রেখে বিশাল একটা বুলেটপ্রুফ গাড়ি করে শহরের ভেতর ঢুকলে শহরের সব মানুষ নিশ্চয়ই বিস্ফারিত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তারা কারো চোখে আলাদা করে পড়তে চায় না, যে ঘটনা ঘটিয়ে এসেছে সেটা নিশ্চয়ই কয়েকদিনে জানা-জানি হয়ে যাবে কিন্তু তারাই যে সেই ঘটনার নায়ক সেটা তারা কাউকে জানতে দিতে চায় না। তাই দুজনে মাঝপথে নেমে গেছে, বাকীটা হেঁটে যাবে।