“আমি কাউকে খুন করিনি।”
“তাহলে তুমি কেন তোমার ট্র্যাকিওশান সরিয়ে ফেলতে চাইছ? তুমি জান শরীর থেকে ট্র্যাকিওশান সরিয়ে ফেললে একজন মানুষ আর একটি ব্যাকটেরিয়ার মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না?”
রিটিন হাসল, বলল, “আমি ক্যাটাগরি সি মানুষ। ক্যাটাগরি সি মানুষ আর একটি ব্যাকটেরিয়ার মাঝে এমনিতেই কোনো পার্থক্য নেই।”
শরীর থেকে হালকা নীল আলো বের হওয়া মেয়েটি কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে রিটিনের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর দূরে একটি চতুষ্কোণ দরজা দেখিয়ে বলল, “ওই দরজাটি দিয়ে ভেতরে ঢোকো।”
রিটিন বলল, “ধন্যবাদ তোমাকে।”
মনে রেখো, “তুমি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে কিন্তু আর কখনোই বের হতে পারবে না।”
রিটিন হাসল, বলল, “ব্যাকটেরিয়া নিজের ইচ্ছেয় কোথাও ঢোকে না, কোথাও বের হয় না।”
মেয়েটি বলল, “চমৎকার। যাও।”
রিটিন হেঁটে যেতে থাকে তখন পেছন থেকে মেয়েটি আবার তাকে ডাকল। রিটিন ঘুরে তাকাতেই মেয়েটি তার ট্রে থেকে হালকা গোলাপি রঙের একটা পানীয়ের গ্লাস তুলে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এক চুমুক দিয়ে এই পানীয়টা খেয়ে ফেলো। ভালো লাগবে। ভয় নেই তোমার মস্তিষ্ক উত্তেজিত হবে না।”
রিটিন পানীয়ের গ্লাসটা হাতে নেয়। মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “ধন্যবাদ।”
রিটিন এক চুমুকে পানীয়টি খেয়ে মেয়েটিকে গ্লাসটি ফেরত দিল। তার সারা শরীরে এক ধরনের কোমল উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে, নিজের ভেতর সে বিচিত্র এক ধরনের সজীবতা অনুভব করে। হঠাৎ করে তার বিষণ্ণতাটুকু কেটে সেখানে একধরনের ফুরফুরে আনন্দ এসে ভর করে।
মেয়েটি বলল, “অপরাধী জীবনে স্বাগতম। তোমার অপরাধী জীবন আনন্দময় হোক।”
রিটিন কোনো কথা না বলে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখটা মুছে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে এক মুহূর্ত দ্বিধান্বিতভাবে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেল।
.
০৪.
ঘরের ভেতর আবছা অন্ধকার। রিটিন একটা চেয়ারে বসে আছে। সামনে বড় টেবিল, টেবিলের অন্য পাশে একজন মাঝবয়সী মানুষ। টেবিলের উপর একটা ল্যাম্প, ল্যাম্পটা সরাসরি তার দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে, কাজেই মানুষটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। মানুষটা তৃতীয়বার তাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার শরীর থেকে তুমি ট্রাকিওশান সরিয়ে ফেলতে চাও?”
রিটিন মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ।”
“তোমার শরীর থেকে ট্র্যাকিওশান সরিয়ে ফেললে তোমার দৈনন্দিন জীবনটা কীভাবে পাল্টে যাবে তুমি জান?”
রিটিন মাথা নাড়ল, বলল, “না, জানি না। জানতেও চাই না।”
“কেন জানতে চাও না?”
“আমি বুঝতে পেরেছি ক্যাটাগরি সি মানুষ হিসেবে আমার বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। এর চাইতে একজন অপরাধীর জীবন হয়তো বেশি আকর্ষণীয়।”
মানুষটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “অপরাধী হয়ে তুমি কী কী অপরাধ করবে বলে ঠিক করেছ?”
রিটিন হেসে ফেলল, বলল, “আইন ভাঙা হলে সেটাকে বলা হয় অপরাধ। অনেক আইন আছে যেটা থাকা উচিত না। সেই আইনগুলো ভাঙাও অপরাধ কিন্তু আমি আনন্দের সাথে সেগুলো ভাঙব। শুধু মানুষ খুন করে কিংবা মাদকের ব্যবসা করে অপরাধী হতে হবে কে বলেছে?”
“একটা উদাহরণ দিতে পারবে?”
“ক্যাটাগরি সি মানুষ হিসেবে আমি যদি সময় পরিভ্রমণ নিয়ে কাজ করি সেটাও একটা অপরাধ-আমার সেই অপরাধ করতে কোনো দ্বিধা নেই।”
রিটিন টের পেল টেবিলের অন্য পাশের মানুষটি হঠাৎ সোজা হয়ে বসেছে। সামনে একটু ঝুঁকে পড়ে বলল, “তুমি সময় পরিভ্রমণ বিষয়টির কথা কেন বললে?”
“আমি অনুমান করছি সময় পরিভ্রমণ নিয়ে একটা বড় আবিষ্কার হয়েছে। মানুষ হয়তো সময় পরিভ্রমণ করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।”
“তুমি কেমন করে সেটি অনুমান করেছ?”
“আমার বাসায় শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটা রোবট রুটিন চেক আপের জন্যে এসেছিল। যেই মুহূর্তে আমি সময় পরিভ্রমণ কথাটি উচ্চারণ করেছি তখনই আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে অচেতন করে ধরে নিয়ে গেছে। আমার মস্তিষ্ক স্ক্যান করেছে। কাজেই আমি ধরে নিচ্ছি সময় পরিভ্রমণ খুব স্পর্শকাতর একটা বিষয়।”
“স্পর্শকাতর? কেন?”
“সম্ভবত ক্যাটাগরি সি মানুষের কাছেও কোনো না কোনোভাবে সময় পরিভ্রমণের প্রযুক্তি চলে এসেছে।”
টেবিলের অন্যপাশে বসে থাকা মানুষটা বেশ কিছুক্ষণ নিঃশব্দে বসে রইল, তারপর বলল, “তুমি যে কথাগুলো বলেছ সেগুলো তুমি সত্যি বলেছ কি না আমাদের জানা প্রয়োজন।”
রিটিন বলল, “আমি সত্যি বলেছি।”
“তোমার মুখের কথা যথেষ্ট নয়। আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে।”
“কীভাবে পরীক্ষা করবে?”
“সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা। কিন্তু আমরা এখনো মস্তিষ্ক স্ক্যানার জোগাড় করতে পারিনি। তাই তোমার মস্তিষ্কের ভেতরে দেখতে পারব না। তোমাকে আমরা প্রশ্ন করব। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় তোমার মস্তিষ্কের কোন জায়গাটা অনুরণিত হচ্ছে আমরা দেখব। সেখান থেকে বুঝতে পারব তুমি সত্যি কথা বলছ নাকি মিথ্যা কথা বলছ।”
রিটিন কোনো কথা বলল না।
মানুষটা বলল, “কেউ যখন আমাদের কাছে আসে আমাদের নিশ্চিত হতে হয় যে সে সত্যি কথা বলছে।”
রিটিন জিজ্ঞেস করল, “কেউ সত্যি কথা না বললে তখন তোমরা কী কর?”
মানুষটি বলল, “তুমি আমাকে সেটা জিজ্ঞেস কোরো না, আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।”