খসখসে গলার মানুষটা বলল, “কী হয়েছে?”
রিটিন বলল, “খোলা মাঠে যখন সারি সারি টিউলিপ লাগানো
খসখসে গলার মানুষটা বলল, “খবরদার-খবরদার”
“তার মাঝে যখন একটা শিশু হেঁটে যায়। নেচে নেচে বলে-”
“খবরদার খবরদার–চুপ করো–”
“নেচে নেচে বলে আমি ফুলের সুবাস খাই আমি চাঁদের আলো খাই”
মানুষগুলো থর থর করে কাঁপতে থাকে, কাঁপতে কাঁপতে বিকৃত গলায় বলে, “চুপ করো, চু-চু-চুপ করো। চু-চু-চু-”
রিটিন বলল, “বলো। আমার সাথে বলো, আমি ফুলের রেণু মেখে স্নান করি, চাঁদের আলো খাই”
মানুষগুলো বলল, “ফুলের রেণু-মে-খে স্নান করি। চাঁদের আলো খাই।”
“বলো, কুয়াশার মাঝে ডুবে যাই মেঘের মাঝে ভেসে যাই–”
মানুষগুলো বলল, “কুয়াশার মাঝে ডুবে যাই–মেঘের মাঝে ভেসে যাই”
রিটিন তখন সাবধানে উঠে দাঁড়াল। তানুস্কা ট্রাক্টরের পেছন থেকে বের হয়ে রিটিনের কাছে এসে বলল, “কী হচ্ছে এখানে?”
“মেটাকোড।”
“মেটাকোড কী?”
“রোবটকে অচল করার কোড। আমি রিভিক ভাষা জানি, তাই যেকোনো বরোটকে অচল করতে পারি।”
“রোবট? এরা রোবট।”
“হ্যাঁ। এরা রোবট।”
“কী আশ্চর্য!”
তানুস্কা অবাক হয়ে বলল, “এরা কোথা থেকে এসেছে?”
“বলছি। তার আগে এগুলোকে পাকাঁপাকিভাবে অচল করে দিই। তা না হলে কিছুক্ষণের মাঝে আবার রিবুট করে চালু হয়ে যাবে।”
রিটিন তার অস্ত্রটা নিয়ে রোবটগুলোর খুব কাছাকাছি গিয়ে পাঁজরের নিচে গুলি করল। ঝনঝন শব্দ করে একটা একটা করে রোবট টুকরো টুকরো হয়ে গেল। রোবটদের মাথাগুলো শরীর থেকে আলাদা হয়ে গড়িয়ে যায় এবং সেভাবে সেগুলো ফাস ফাস করে বলতে থাকে, “ফুলের রেণু মেখে চাঁদের আলোতে স্নান করি”
তানুস্কা বলল, “কী ভয়ানক!”
রিটিন চুল ধরে একটা মাথা তুলে এনে তার কানের নিচে চাপ দিল, মাথাটি সাথে সাথে বিড়বিড় করে কথা বলা বন্ধ করে চোখ পিটপিট করে তাকাল। রিটিন রোবটের মাথাটার দিকে তাকিয়ে বলল, “কাজটা ঠিক হয়নি।”
রোবটের মাথাটা ফাস ফঁসে গলায় বলল, “কোন কাজটা?”
“এই যে আমাকে মারার জন্যে চারটা মানুষ না পাঠিয়ে চারটা নির্বোধ রোবট পাঠিয়ে দিল। আমি রোবটকে খুব ঘৃণা করি, তোমরা
জানো না?”
“মানুষ রোবটকে বানিয়েছে। রোবটকে ঘৃণা করা ঠিক না।”
রিটিন রোবটের মাথাটাকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “ব্যস অনেক হয়েছে। আমাকে তোমার জ্ঞান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”
“ঠিক আছে।”
“তোমাদের কেন পাঠানো হয়েছে?”
“তোমাকে খুন করার জন্যে।”
“আমাকে খুন করতে হবে, সেটা কেমন করে জানতে পারল? আর আমাকে এখানে পাবে সেটা কেমন করে বুঝতে পারলে?”
রোবটের মাথাটা চুপ করে রইল। রিটিন বলল, “বলো। কথা বলো। আমি তোমাদের সিকিউরিটি ভেঙেছি। আমার কাছে তোমার গোপন করার ক্ষমতা নেই।”
“না, নেই।”
“বলো কেমন করে নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল জানতে পারল আমাকে খুন করতে হবে?”
“তোমাদের ক্লিওনের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে সবকিছু জেনে গেছে।”
“আর এখানে পাঠানোর জন্যে টাইম ক্যাপসুল কেমন করে তৈরি করা হয়েছে?”
“প্রফেসর রাইখের মস্তিষ্ক স্ক্যান করেছে।”
“তার মানে আমি এখানে কী করতে এসেছি সেটা জানাজানি হয়ে গেছে।”
রোবটের মাথাটা বলল, “মনে হয়। আমি তুচ্ছ পি ফরটিটু রোবট, আমি খুঁটিনাটি জানি না। ভাসা ভাসা জানি।”
রিটিন রোবটের মাথাটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে গিয়ে থামল, জিজ্ঞেস করল, “আমাকে মারতে পেরেছ কি পারনি সেই তথ্যটা কীভাবে পাঠাবে?”
রোবটের মাথাটা চুপ করে রইল। রিটিন ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “কথা বলো।”
“বলছি। আমাদের কাছে একটা রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসের এম্পুল আছে। হাফ লাইভ একশ বছরের মতো। সেই এন্ডুলটা কন্ট্রোল করার একটা অ্যাকটিভ সার্কিট আছে। তোমাকে হত্যা করার পর তোমার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত সেই সার্কিটের কন্ট্রোলে দিতে হবে। এটা তাহলে পাঁচশ বছর পরে নির্দিষ্ট সময়ে খুলে যাবে। বাতাসে রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসটা মিশে যাবে। পৃথিবীর মানুষ যখন দেখবে হঠাৎ করে বাতাসে এই রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গেছে বুঝে নেবে মিশন সফল হয়েছে। তোমাকে খুন করা হয়েছে।”
রিটিন বলল, “এই তথ্যটা দেয়ার জন্যে আমার তোমাকে একবার চুমু খাওয়া দরকার, কিন্তু তোমার মাথাটা দেখে আমার এত ঘেন্না করছে যে আমার পক্ষে চুমু খাওয়া সম্ভব নয়।”
“আমাকে চুমু খেতে হবে না।”
“এখন চট করে আমাকে বলো রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসের এলটা কোথায়।”
“আমাকে আমার শরীরের কাছে নিয়ে যাও। আমি দেখাই।”
“রিটিন বলল, তোমার শরীর টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।”
“তাতে সমস্যা নেই। আমি চিনতে পারব।”
রিটিন রোবটের মাথাটি নিয়ে তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া শরীরের অংশগুলোর ভেতর খুঁজে রেডিও অ্যাকটিভ গ্যাসের এম্পুলটি বের করল। রোবটের মাথাটি ছুঁড়ে দেবার আগে মাথাটি কাতর গলায় বলল, “রিটিন। তোমাকে একটা অনুরোধ করতে পারি?”
“কী অনুরোধ?”
“আমার সার্কিটটা অফ করে ব্যাটারিটা খুলে নিতে পারবে? আমি এভাবে বেঁচে থাকতে চাই না।”
রিটিন বলল, “ঠিক আছে।”
সে রোবটের মাথায় কানের নিচে হাত দিয়ে সুইচটা অফ করে ব্যাটারিটা খুলে নিল।
তানুস্কা এতক্ষণ একটা কথাও বলেনি। এবারে রিটিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “এখানে কী হচ্ছে তুমি আমাকে বলবে?”
“বলব। তোমাকে বলতেই হবে, কারণ তোমার সাহায্য দরকার।”