দুজন নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে থাকে, একসময় তারা মানুষগুলোর পায়ের শব্দ শুনতে পেল। শক্ত মাটিতে ভারী জুতোর শব্দ। কিছুক্ষণের মাঝেই মানুষগুলো বাসার সামনে এসে দাঁড়াল, তারা কিছুক্ষণ সেখানে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর একজন উচ্চ স্বরে বলল, “রিটিন, আমরা জানি তুমি এখানে আছো। তুমি বের হয়ে এসো।”
রিটিন বের হয়ে গেল না, নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে থাকল। মানুষটি বলল, “রিটিন, তুমি যেটা করতে চাইছ সেটা খুবই ভয়ংকর। তুমি সম্ভবত জানো না তুমি এখানে এসে কজালিটি ব্রেক করেছ। তুমি এখানে আসার কারণে বর্তমান পৃথিবীতে যা যা পরিবর্তন হয়েছে সেগুলো লক্ষ কোটি গুণ এমপ্লিফাইড হয়ে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে। আরো কিছু করার আগে বের হয়ে এসো।”
আরেকজন বলল, “তুমি কোথায়?”
রিটিন এবারেও কোনো উত্তর দিল না।
মানুষটি বলল, “আমরা জানি তুমি আমাদের কথা শুনছ। তুমি যদি এই মুহূর্তে বের না হয়ে আসো আমরা এই বাসাটির ভেতর ঢুকব। এখানে যে কয়টি জীবিত প্রাণী আছে তাদের একজন একজন করে হত্যা করব।”
তানুস্কা আতঙ্কে শিউরে উঠে খপ করে রিটিনের হাত ধরে ফিসফিস করে বলল, “সর্বনাশ! আমার নীল–”
রিটিন বলল, “ভয় পেয়ো না। ওরা আমার জন্যে এসেছে। আমাকে পেলে ওরা কারো কোনো ক্ষতি করবে না। আমি জানিয়ে দিই যে আমি এখানে।”
রিটিন ট্রাক্টরের পাশে দিয়ে মাথা বের করে মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে হাতের অস্ত্রটা তুলে ট্রিগার টেনে ধরল। একটা আলোর ঝলকানির সাথে সাথে একটা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। একজন মানুষ ছিটকে নিচে পড়ে গেল এবং সাথে সাথে অন্য সবাই ঝটকা মেরে ঘুরে গিয়ে ট্রাক্টরটির দিকে তাকাল। মানুষগুলো পেছনে হাত দিয়ে ভয়ংকর দর্শন অস্ত্র পিঠ থেকে তুলে নিয়ে ট্রাক্টরগুলোর দিকে তাক করে, একজন বলল, “রিটিন, তুমি কোথায় আমরা এখন জানি, হাত উপরে তুলে বের হয়ে এসো–”
রিটিন চিৎকার করে বলল, “তুমি জাহান্নামে যাও! তোমার চোদ্দগুষ্ঠি জাহান্নামে যাক–” কথা শেষ না করেই সে আবার ট্রিগার টেনে ধরল, আবার প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দের সাথে আলোর ঝলকানি বের হয়ে আসে। আরো একজন মানুষ ছিটকে পড়ল।
রিটিন ট্রিগার থেকে হতে সরিয়ে আবার মানুষগুলোর দিকে তাকাল। যে দুজন মানুষ ছিটকে পড়েছিল তাদের দুজনেই উঠে দাঁড়িয়েছে। তারাও অন্যদের সাথে এগিয়ে আসছে। এগুলো মানুষ নয়। এগুলো রোবট।
সবার সামনে যে মানুষটি ছিল সে তার অস্ত্রটা ট্রাক্টরের দিকে তাক করে শান্ত গলায় বলল, “রিটিন। তুমি নির্বোধের মতো ব্যবহার করো না। তুমি জানো আমরা প্রস্তুতি ছাড়া আসিনি। তুমি আমাদের কিছু করতে পারবে না। আমি একা এই পুরো এলাকা উড়িয়ে দিতে পারি। ট্রিগার টেনে ধরলে এই ট্রাক্টর আর তার পেছনে ঘাপটি মেরে থাকা তুমি সবকিছু মুহূর্তে ভস্মীভূত হয়ে যাবে।”
রিটিন বলল, “কিন্তু আমি জানি তোমার সেটা করার অনুমতি নেই। কজালিটি ব্রেক হলে কী হবে কেউ জানে না–তুমি কজালিটি ব্রেক করার সাহস পাবে না। শুধু তুমি না তোমার বাপ দাদা চোদ্দগুষ্ঠি সেই সাহস পাবে না”
কথা শেষ করে রিটিন আবার এক পশলা গুলি করল, প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ এবং আলোর ঝলকানিতে জায়গাটা নারকীয় হয়ে ওঠে। কিছু ধোঁয়া সরে গেলে দেখা গেল মানুষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে, সবাই ধীরে ধীরে নড়তে শুরু করল, তারপর টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল। হাতের অস্ত্রগুলো আবার ট্রাক্টরটির দিকে তাক করে মানুষগুলো আরো কয়েক পা এগিয়ে আসে।
একজন খসখসে ভাঙা গলায় বলল, “রিটিন, আমরা জানি ট্রাক্টরের পেছনে তুমি একা নও, তোমার সাথে আরেকজন আছে। একটি মেয়ে। তুমি দুই হাত উপরে তুলে বের হয়ে এসো, তা না হলে আমরা এই মেয়েটাকে খুন করে ফেলব।”
কাছে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন বলল, “আমাদের সময়ের অভাব নেই, কিন্তু ধৈর্যের অভাব আছে। আমি তিন পর্যন্ত গুনব, তার ভেতরে যদি তুমি বের হয়ে না আসে তাহলে আমরা এই মেয়েটাকে গুলি করব। মেগাওয়াট এক্সরে লেজার তোমার ট্রাক্টর ফুটো করে পেছনের মেয়েটাকে টুকরো টুকরো করে দেবে।”
খসখসে গলায় মানুষটা বলল, “আমি গুনতে শুরু করছি। এক।”
তানুস্কা খপ করে রিটিনের হাত ধরে বলল, “রিটিন! এখন কী হবে?”
“যেটা হওয়ার সেটা হয়ে আছে। আমি দেখি সেটা কী।”
“তুমি কী বলছ আমি বুঝতে পারছি না।”
“তোমার বোক্সর প্রয়োজন নেই তানুস্কা। শুধু জেনে রাখো। তোমাকে আমাদের ব্যাপারে জড়ানো যাবে না।”
খসখসে গলার মানুষটি বলল, “দুই”।
রিটিন চিৎকার করে বলল, “ঠিক আছে আমি আসছি।”
খসখসে গলার মানুষটা বলল, “চমৎকার।”
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা বলল, “দুই হাত উপরে তুলে বের হবে যেন আমরা তোমার অস্ত্রটা দেখতে পাই। যদিও তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তোমার অস্ত্রটা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
রিটিন তানুস্কার দিকে তাকিয়ে বলল, “বিদায় তানুস্কা।” তারপর তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুই হাত উপরে তুলে বের হয়ে এল।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা এগিয়ে এসে রিটিনের হাতের অস্ত্রটা ছিনিয়ে নেয়। তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে তাদের অস্ত্রগুলো তার দিকে তাক করল। রিটিন হাত উপরে তুলে বলল, “এক সেকেন্ড।”