রিটিন এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে মেয়েটার পেছনে পেছনে হাঁটতে শুরু করল। গলা উঁচিয়ে মেয়েটাকে ডেকে বলল, “এই যে তুমি শোনো–”
মেয়েটা দাঁড়াল, মাথা ঘুরিয়ে বলল, “কিছু বলবে?”
“হ্যাঁ। দুটো জিনিস জানতে চাই, তুমি কেমন করে বুঝলে আমার ট্র্যাকিওশান ট্রিগার করেছে? আর ট্র্যাকিওশান ট্রিগার করলে কী করতে হয়?”
“তোমার ট্র্যাকিওশান ট্রিগার করেছে আমি সেটা জানি কারণ আমার কাছে ট্রাকিওশান ট্র্যাকার আছে।”
রিটিন ভ্রূ কুঁচকে বলল, “তোমার কাছে কেন ট্র্যাকিওশান ট্র্যাকার আছে? তুমি কি পুলিশ?”
“না, আমি পুলিশ না! আমার যাদের সাথে সময় কাটাতে হয়। তাদের ট্র্যাকিওশান সবসময়েই ট্রিগার করে–আমার সেটা জানা দরকার হয়, তাই আমার সাথে এই ট্র্যাকারটা থাকে।”
রিটিন বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারল না, কিন্তু তারপরও বোঝার ভান করল। মেয়েটা বলল, “আর তোমার দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর কেউ জানে না। ট্রাকিওশান ট্রিগার করলে কী করা বুদ্ধিমানের কাজ সেটা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। তবে—”
“তবে কী?”
“কারো ট্র্যাকিওশান একবার ট্রিগার করলে তার কপালে কী আছে সেটা নিয়ে কোনো মতভেদ নেই।”
“তার কপালে কী আছে?”
“বড় ক্রিমিনাল হওয়ার সৌভাগ্য।”
রিটিন চোখ কপালে তুলে বলল, “কী বললে?”
“তুমি শুনেছ আমি কী বলেছি। তোমার ট্র্যাকিওশান যেহেতু ট্রিগার করেছে তাই আগে হোক পরে হোক তোমাকে পুলিশ ধরবে। তোমার ট্র্যাকিওশানকে তখন অ্যালার্ট মোডে রাখবে–যার অর্থ ছোট থেকে ছোট অপরাধ করলেও পুলিশ তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে। তখন–”
“তখন কী?”
“তখন তুমি অতিষ্ঠ হয়ে সত্যি সত্যি একটা বড় অপরাধ করবে।”
“সেটি কী?”
“তোমার শরীর থেকে ট্র্যাকিওশান বের করে নেবে।”
রিটিন কোনো কথা না বলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা বলল, “ক্যাটাগরি সি মানুষের এটাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ।”
রিটিন এবারেও কোনো কথা বলল না, মেয়েটা হাসার ভঙ্গি করে বলল, “পার্কের কাছে ক্রস রোডে উত্তেজক পানীয়ের একটা জয়েন্ট আছে, নাম ক্রিমিজিম। ওখানে ঘাঘু ক্রিমিনালরা আড্ডা দেয়, যদি তুমি কখনো ঠিক করো ক্রিমিনাল হয়ে যাবে তখন ক্রিমিজিমে এসো।”
মেয়েটা হাত নেড়ে আবার হাঁটতে শুরু করে। রিটিন জিজ্ঞেস করল, “তুমি এখন কোথায় যাচ্ছ।”
মেয়েটা না থেমেই বলল, “ক্রিমিজিমে।”
ঠিক কী কারণ জানা নেই রিটিনের মনে হলো মেয়েটি এই উত্তরটাই দেবে।
.
রাত বারোটার সময় রিটিনের বাসায় পুলিশ এল। রিটিন তখন মাত্র বিছানায় শুয়েছে, হঠাৎ ঘরের ভেতর ভিডি স্ক্রিন চালু হয়ে ঘরটা উজ্জ্বল আলোতে আলোকিত হয়ে উঠল। রিটিন ভিডি স্ক্রিনে একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পায়, “সি পি ছয় ছয় নয় শূন্য তিন ক্যাটাগরি সি রিটি রিটিন?”
রিটিন বিছানায় উঠে বসল, বলল, “কথা বলছি।”
“আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেট্রল বাহিনী, তোমার সাথে। দেখা করতে চাই।”
রিটিন শুকনো গলায় বলল, “অবশ্যই। অবশ্যই। তোমরা কি ভেতরে আসবে, নাকি আমি বের হব?”
“আমরা ভেতরে আসছি।”
রিটিন উঠে দরজা খুলবে কি না বুঝতে পারছিল না। কিন্তু কিছু করার আগেই খুট করে একটা শব্দ হলো এবং দরজা খুলে ভেতরে কালো পোশাক পরা কয়েকজন মানুষ এসে ঢুকল। তাদের সারা শরীর থেকে ভয়াবহ নানারকম অস্ত্র ঝুলছে।
মানুষগুলো ঘরের চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে একবার দেখে তার দিকে এগিয়ে এল। মাঝবয়সী একজন মানুষ ভারী গলায় জিজ্ঞেস করল, “তুমি রিটি রিটিন?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি বেআইনি মেটাকোড ব্যবহার কর?”
রিটিন কী বলবে বুঝতে না পেরে ইতস্তত করে বলল, “একবার মাত্র করেছি। আসলে হয়েছে কী–”
“এটি সাত মাত্রার অপরাধ। যদি দ্বিতীয়বার কর তখন এটা হবে ছয় মাত্রার। ছয় মাত্রার অপরাধ করলে বিচারপ্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বিচার প্রক্রিয়ার তিনটি ধাপ। প্রথম ধাপে…”
মানুষটি টানা কথা বলে যেতে থাকে এবং রিটিন বুঝতে পারে আইনশৃঙ্খলার এই মানুষগুলো আসলে নিচু শ্রেণির রোবট। মেটাকোড ব্যবহার করে রোবটকে বিকল করা কোনো গুরুতর অপরাধ নয়, তাই তাকে সাবধান করার জন্য এই নিচু শ্রেণির রোবট পাঠিয়েছে। তাকে এখন ধৈর্য ধরে এই নির্বোধ রোবটগুলোর বক্তৃতা শুনতে হবে। রোবটকে অচল করার আরেকটা মেটাকোড সে জানে, এগুলোর উপর চেষ্টা করে দেখবে কি না এরকম একটা চিন্তা তার মাথার মাঝে একবার খেলে গেল কিন্তু সে চিন্তাটাকে দূর করে দিয়ে নিঃশব্দে বসে রইল। একঘেয়ে কথা শুনতে শুনতে সে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল হঠাৎ করে শুনতে পেল তাকে রোবটগুলো কিছু একটা প্রশ্ন করছে, রিটিন প্রশ্নটা শোনার চেষ্টা করল, রোবট পুলিশটি তাকে জিজ্ঞেস করছে, “তুমি ক্যাটাগরি সি মানুষ হয়ে কেন লেখাপড়া করতে চাও?”
একটা নিচু শ্রেণির রোবটের কাছে এরকম একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে রিটিন একটু অপমানিত বোধ করছিল, কিন্তু কিছু একটা বলতে হবে, তা না হলে রোবটগুলো তাকে বিরক্ত করে যাবে। রিটিন বলল, “আমি মনে করি সব মানুষেরই নতুন জিনিস জানার অধিকার আছে।”
পুলিশের পোশাক পরা রোবটটা বলল, “কিন্তু নতুন জিনিস জানার জন্যে মস্তিষ্কের বিশেষ গঠন থাকতে হয়। তোমার মতো ক্যাটাগরি সি মানুষের মস্তিষ্কের সেই গঠন নেই।”
এই রোবটটার সাথে তর্ক করার কোনো অর্থ হয় না, তাই রিটিন রোবটটার কথা মেনে নিয়ে বলল, “আমার মনে হয় তুমি ঠিকই। বলেছ। আমার লেখাপড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সঠিক হয়নি।”