রিটিন অনিশ্চিতের মতো মাথা নেড়ে বলল, “বুঝেছি। কিন্তু মনে হচ্ছে, না বুঝলেই বুঝি ভালো হতো।”
প্রফেসর রাইখ বলল, “এখনো শেষ হয়নি।”
রিটিন চিন্তিত মুখে বলল, “শেষ হয়নি?”
“না। তোমার পাঁচশত বছর পার হওয়ার পর তোমার জেগে উঠতে হবে। তারপর ক্যাপসুল থেকে বের হওয়ার পর মাটি খুঁড়ে উপরে উঠতে হবে।”
ক্লিওন বলল, “এই অংশটা মনে হয় বেশ সোজা হবে। আমরা রিটিনের হাতে একটা ছোট নিও মিসাইল দিয়ে দেব। সেটা দিয়ে ব্লাস্ট করে পুরো মাটি কংক্রিট নিয়ন্ত্রণ ভবনের বেস ফুটো করে ফেলতে পারবে! তখন সেই ফুটো দিয়ে একটা জেট ব্যবহার করে বের হতে পারবে। একবার বের হতে পারলে বাকি কাজ পানির মতো সোজা। বিস্ফোরকগুলো এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ভেতরের সবকিছু তছনছ করে দেওয়া!”
প্রফেসর রাইখ বলল, “আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খুব ছোট একটা ক্যাপসুলের ভেতর এইসব যন্ত্রপাতি অস্ত্র বিস্ফোরক বসানো! এটার নিয়ন্ত্রণটি অত্যন্ত যত্ন করে তৈরি করা।”
ক্লিওন বলল, “অন্যান্য সামাজিক ব্যাপারও আছে, পাঁচশ বছর আগের মানুষের ভাষা, রীতিনীতি শেখা। সেখানে তুমি যখন পৌঁছাবে কিছুতেই কাউকে জানানো যাবে না তুমি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছ। সেই সময়ের মানুষ তোমাকে কীভাবে গ্রহণ করবে আমরা জানি না!”
এখানে একজন বিজ্ঞান শিখছে সেরকম একজন মেয়ে একটুখানি হেসে বলল, “অতীত থেকে আমরা যে ছবিটা পেয়েছি সেখানে অবশ্যি দেখছি রিটিন মায়া মায়া চেহারার একটা মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যার অর্থ সে নিশ্চয়ই অন্তত পক্ষে একজন মেয়েকে পাবে যে তাকে গ্রহণ করবে।”
রিটিন কিছু বলল না। কেউ জানে না দূর অতীতের একটি মেয়ে, যার সঙ্গে তার কখনো দেখা হয়নি রিটিন তার জন্যে নিজের ভেতর একধরনের অস্থিরতা অনুভব করতে শুরু করেছে।
রিটিন একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল, হঠাৎ শুনল ক্লিওন বলছে, “আমরা এখন একটুখানি উত্তেজক পানীয় খেয়ে নিই। তারপর টাইম ক্যাপসুলের ডিজাইনের কাজ শুরু করি।”
সবাই মাথা নাড়ল, বলল, “চমৎকার আইডিয়া।”
.
ছয়মাস টানা কাজ করে শেষ পর্যন্ত একটি টাইম ক্যাপসুল তৈরি হলো। ক্যাপসুলটি আসলে তিন মিটার ব্যাসের দুটি টাইটেনিয়াম সিলঝিনিয়ামের সঙ্কর ধাতুর অর্ধগোলক। অর্ধগোলাকের দুটি অংশ জুড়ে দেয়ার পর সেটি আক্ষরিক অর্থে একটি গোলক হয়ে যায়। ভেতরে একটি প্লাটিনামের সিলিন্ডার, যেখানে রিটিন শুয়ে থাকবে। তার শরীরের সাথে মিল রেখে সিলিন্ডারের কনট্র তৈরি করা হয়েছে। শরীরের নিচে একটা ফিউসান জেনারেটর যেটি পাঁচশত বৎসর তার শরীরকে চার ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রায় নামিয়ে শরীরটাকে জড় পদার্থে পরিণত করে ফেলবে। তার বাম পাশে একটি নিও মিসাইল। অতীত থেকে ফিরে আসার পর সে এটি দিয়ে মাটির নিচ থেকে নিয়ন্ত্রণ ভবনের মেঝে পর্যন্ত ফুটো করে ফেলবে। ডান পাশে থাকবে কিছু বিস্ফোরক এবং প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র। গোলকের ফাঁকা জায়গাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের ফটো ইলেকট্রনিক নিউট্রিনিয়াল সার্কিট। একবার ভেতরে ঢুকে গোলকটি বন্ধ করে দেয়ার পর রিটিন সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে আলাদা হয়ে পড়বে।
এই টাইম ক্যাপসুল নিজে থেকে সময় পরিভ্রমণ করতে পারবে না। এটাকে স্পেস টাইম ফেব্রিকের একটা ছোট ফুটো দিয়ে ঠেলে দিতে হবে। সেই ফুটোটা করার জন্যে অচিন্তনীয় পরিমাণ শক্তি একটা বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শক্তি যখন ক্রিটিক্যাল মানটুকু অতিক্রম করবে তখন টাইম ক্যাপসুলটির উপর থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। ক্যাপসুলটি সেই ফুটো দিয়ে সবার চোখ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। এটি কোথায় গিয়ে বের হবে সেটি নিয়ে প্রফেসর রাইখের একটুখানি দুর্ভাবনা আছে তবে যেহেতু পাঁচশ বছর অতীতের একটা ছবি আছে, প্রফেসর রাইখ অনুমান করছে তবে হিসেব ঠিক আছে এবং রিটিন প্রায় পাঁচশত বৎসর আগেই পৌঁছাবে। সেখানে কোথায় কীভাবে হাজির হবে সেটি এখানে কেউ জানে না। জানার উপায়ও নেই। তবে ক্যাপসুলের ভেতর রিটিনের নিজেকে রক্ষা করার জন্যে যথেষ্ট যন্ত্রপাতি এবং রসদ দেয়া হয়েছে। খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও রিটিন যেন নিজেকে রক্ষা করতে পারে তাকে সেভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত সবকিছু শেষ হলো। সুপার কন্ডাক্টিং ম্যাগনেট দিয়ে পুরো ক্যাপসুলটিকে লেভিটেড করে শূন্যে ঝোলানো হয়েছে। চারদিক থেকে দুশ ছাপ্পান্নটি গামা লেজার এক বিন্দুতে ফোকাস করে আছে। সেখানে ট্রিটিয়ামের একটা ক্ষুদ্র এম্পুল রয়েছে। গামা লেজার যখন এম্পুলটিকে উত্তপ্ত করবে তখন ফিউসান বিক্রিয়ায় যে শক্তি বের হবে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দিয়ে সেটাকে কেন্দ্রীভূত করে রাখবে। সেই অচিন্তনীয় শক্তি স্পেস টাইমকে ফুটো করে ফেলবে।
সেই ফুটো দিয়ে অণু-পরমাণু ঢুকে যাবার সময় ঘর্ষণে আয়নিত হয়ে এক্সরে স্পেকট্রাম দিতে শুরু করবে। বোঝা যাবে স্পেস টাইমে ফুটো হয়েছে। টাইম ক্যাপসুলটিকে তখন ছেড়ে দেয়া হবে, খুবই সূক্ষ্মভাবে তার গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে যেন সেটি একটা নির্দিষ্ট তৃরণে ফুটো দিয়ে ঢুকে যায়, কারণ সেটাই নির্ধারণ করবে টাইম ক্যাপসুলটি কতখানি অতীতে যাবে।
সবকিছু প্রস্তুত। এখন শুধু রিটিনের রওনা দেয়ার অপেক্ষা। সময় পরিভ্রমণের দিনক্ষণ ঠিক করে রাখা হয়েছে, শুধু সেটি রিটিনকে জানানো হয়নি। ঠিক রওনা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তাকে জানানো হবে। রিটিন তাই অপেক্ষা করছে।