“তারপরেও প্রায় নিয়মিতভাবে ক্যাটাগরি সি মানুষ আমাদের দলে যোগ দিচ্ছে এবং তাদের ট্র্যাকিওশান ফেলে দিচ্ছে। আমাদের রিটিন সেরকম একজন মানুষ।”
“যাই হোক, আমরা পৃথিবীর মানুষকে সত্যটুকু জানাতে চাই। ক্যাটাগরি এ এবং ক্যাটাগরি সি বলে যে কিছু নেই সেটি সবার কাছে প্রকাশ করতে চাই। পৃথিবীর সকল ক্যাটাগরি সি মানুষকে মুক্ত করতে চাই। সেটি করা সম্ভব যদি যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষের সকল তথ্য রক্ষা করা হয় এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেটি ধ্বংস করতে পারি। সেটি যে ভবনে আছে সেটি কোথায় আমরা জানি। ভবনটি অসম্ভব সুরক্ষিত। বিশ্বাস করা হয় নিউক্লিয়ার কিংবা থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা দিয়েও সেই ভবন ধ্বংস করা সম্ভব নয়। এর কোনো দরজা নেই, এর ভেতরে কিছু মানুষ থাকে তারা কখনো বের হতে পারে না। সেই মানুষগুলোই যন্ত্রগুলো রক্ষা করে পৃথিবীর সকল মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে।”
“আমরা যেহেতু কোনোভাবেই এই ভবনটির ভেতরে ঢুকে ভবনের ভেতরকার তথ্যগুলো ধ্বংস করে মানবসমাজকে উদ্ধার করতে পারব না তাই এখন আমাদের একটিমাত্র পথ খোলা আছে। সেটি হচ্ছে ভবনটি যখন তৈরি হয়নি তখন সেই ভবনটির ভূখণ্ডের নিচে রিটিনকে একটি টাইম ক্যাপসুলে ভরে রেখে আসা। ধরা যাক আজ থেকে পাঁচশত বছর আগে। তারপর কোনো এক সময় সেই ভূখণ্ডের উপরে নিয়ন্ত্রণ ভবন তৈরি হবে-যারা তৈরি করবে তারা জানবে না নিচে একটা টাইম ক্যাপসুলে একজন বসে আছে ভয়ংকর বিস্ফোরক নিয়ে। কোনো একটা নির্ধারিত সময়ে মাটি খুঁড়ে মেঝে ভেদ করে সে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এসে ঢুকবে, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যভান্ডার ধ্বংস করবে। আমরা মুক্ত হব।”
রিটিন হকচকিতের মতো ক্লিওনের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, “তার মানে আমি এই মুহূর্তে একটি টাইম ক্যাপসুলে করে নিয়ন্ত্রণ ভবনের নিচে অপেক্ষা করছি–কিংবা মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে উপরে উঠে ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছি।” রিটিন নিজের বুকে থাবা দিয়ে বলল, “তাহলে এই আমিটি কে? কিংবা কোন আমিটি সত্যি?”
ক্লিওন মাথা চুলকাল, বলল, “আমি এটার উত্তর জানি না–”
প্রফেসর রাইখ বলল, “আমি জানি। আমি উত্তর দেবার চেষ্টা করি। হ্যাঁ, যদি সবকিছু আমাদের পরিকল্পনা মতো অগ্রসর হয় তাহলে এই মুহূর্তে তোমার আরেকটি অবস্থা নিয়ন্ত্রণ ভবনের নিচে অপেক্ষা করছে। মনে রেখো প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার জন্যে তোমাদের দুটি অবস্থান কোনোভাবেই একত্র হতে পারবে না। তোমাদের দুজনের জগৎ হতে হবে আলাদা। কাজেই আমরা যখন টাইম ক্যাপসুল বলি তখন আমরা কী বোঝাই জানো?”
কয়েকজন জিজ্ঞেস করল, “কী?”
“আমরা বোঝাই এমন একটি ক্যাপসুল যার ভেতর থেকে একটি অণু কিংবা পরমাণুও বের হতে পারবে না। কোনোভাবে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। একটা পরিপূর্ণ আবদ্ধ জগৎ যার সাথে এই পৃথিবীর কোনো রকম সম্পর্ক থাকবে না। কাজেই রিটিনের একটি অবস্থা যদি আসলেই নিয়ন্ত্রণ ভবনের নিচে অপেক্ষা করছে তার ভেতরে আসলে কী আছে সেটি সম্পর্কে এই জগতের কেউ নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারবে না। অর্থাৎ রিটিন আসলে আছে কি নেই সেটা কেউ জানে না, প্রকৃতি এভাবে তার চরিত্র রক্ষা করে।”
কেউ একজন কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল কিন্তু রিটিন উঠে দাঁড়িয়ে অনেকটা আর্তনাদের মতো করে বলল, “প্রফেসর রাইখ, তুমি কী বলতে চাইছ? আরেকটা রিটিনকে পাঁচশ বছরের জন্যে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে? পাঁচশ বছর? পাঁচশ–”
প্রফেসর রাইখ মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম।”
“কেন পাঁচশ বছর পুঁতে রাখতে হবে? সময় পরিভ্রমণ করে পাঁচশ বছর কেন তাড়াতাড়ি অতিক্রম করা যায় না।”
প্রফেসর রাইখ বলল, “কে বলেছে যায় না। অবশ্যই অতিক্রম করা যায়, সেটা হচ্ছে স্পেস টাইম ফেব্রিক পারফোরেশনের সৌন্দর্য। তোমাকে যখন অতীতে পাঠানো হবে তুমি এভাবে যাবে, অনেকটা চোখের পলকে। কিন্তু—”
“কিন্তু কী?”
“আমরা তোমাকে সময় পরিভ্রমণে পাঠাতে পারব, কারণ এখানে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটা বিন্দুতে অচিন্তনীয় শক্তি জমা করে স্পেস টাইম ফেব্রিকে ফুটো করে তোমাকে অতীতে পাঠাব। কিন্তু তুমি যখন পাঁচশ বছর অতীতে যাবে তখন সেখানে তোমার কোনো প্রযুক্তি থাকবে না! তোমাকে ভবিষ্যতে পাঠাবে কে?”
“আমার টাইম ক্যাপসুলে সেই প্রযুক্তি দিয়ে দাও।”
প্রফেসর রাইখ এমনভাবে হাসল যেন রিটিন খুব হাস্যকর একটা কথা বলেছে। তার হাসিতে কেউ যোগ দিল না দেখে প্রফেসর রাইখ হাসি থামিয়ে বলল, “সেই প্রযুক্তি ছোট একটা ক্যাপসুলে ঢোকানো সম্ভব না। তার জন্যে বিশাল অতিকায় প্রায় আস্ত শহরের মতো বড় একটা ক্যাপসুল দরকার। তা ছাড়া—”
“তা ছাড়া কী?”
“তুমি যে পাঁচশ বছর টাইম ক্যাপসুলে মাটির নিচে থাকবে তুমি তো আর তখন জেগে থাকতে পারবে না। তোমাকে ঘুমিয়ে পড়তে হবে, তোমার দেহকে পুরোপুরি একটা জড় পদার্থে পরিণত করে ফেলতে হবে। সেটা করার জন্যে তোমার শরীরের তাপমাত্রা চার ডিগ্রি কেলভিনে নামিয়ে আনতে হবে–মানুষের শরীরের মতো বড় একটা কিছুকে চার ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রায় নামিয়ে সেটাকে পাঁচশ বৎসর রেখে দিতে যে পরিমাণ শক্তির দরকার হবে সেই শক্তিটা তুমি কোথায় পাবে? সেটাও এখান থেকে ক্যাপসুলে ঢুকিয়ে দিতে হবে। বুঝেছ?”