“আমি তোমার সাথে তর্ক করব না। খুব সহজ একটা প্রশ্ন করি। আমি ক্যাটাগরি সি মানুষ। আমার পক্ষে কি রিকি ভাষা শেখা সম্ভব?”
প্রফেসর রাইখ একটু অবাক হয়ে রিটিনের দিকে তাকাল, “তুমি রিকিভ ভাষা জানো?”
“হ্যাঁ জানি। আমাকে কেউ শেখায়নি–আমি স্কুল কলেজ যেতে পারিনি কিন্তু আমি নিজে নিজে শিখেছি। বিশ্বাস না করলে রিকিভ ভাষার সিংগুলারিটিগুলো জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো-–কমপ্লেক্স তলে সেটি কীভাবে অসিলেট করে জিজ্ঞেস করতে পারো।”
প্রফেসর রাইখ বলল, “আমি তোমাকে বিশ্বাস করছি। সিংগুলারিটিগুলো কীভাবে অসিলেট করে বিষয়টা কেউ যদি জানে তাহলে সে আসলেই রিকিভ ভাষা জানে।”
“রিকভ ভাষা জানার কারণে আমি যেকোনো রোবটের মেটাকোড বের করে ফেলতে পারি। আমার সামনে কোনো রোবট নিরাপদ নয়।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ সত্যি। আমি একজন মাত্র উদাহরণ। খারাপ উদাহরণ। আমার থেকে অনেক ভালো উদাহরণ আছে। আরো কয়েক বছর পরে হলে তোমাকে জোর করে ধরে নিতে হতো না। আমাদের নিজেদেরই একজন ক্যাটাগরি সি প্রফেসর রাইখ পেয়ে যেতাম।”
“আমাকে কী করতে হবে?”
“আমরা একটা সমীকরণ পেয়েছি। কীভাবে পেয়েছি জিজ্ঞেস কোরো না। সমীকরণটির সমাধান করে দেবে।”
“সমীকরণ সমাধান করে দেব?”
“হ্যাঁ। সমাধান করার পর আমি নিজে এসে তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দেব।”
রিটিন কথা শেষ করার আগেই একটি গুলি বাইভার্বাল ভেদ করে চলে গেল। প্রফেসর রাইখ আতঙ্কে চিৎকার করে মাথা নিচু করে বসে গেল, রিটিন শব্দ করে হেসে বলল, “তোমার কোনো ভয় নেই। তোমার ট্র্যাকিওশান তোমাকে রক্ষা করবে। নিরাপত্তাকর্মীরা কখনোই তোমাকে গুলি করবে না। আমাকে রক্ষা করবে প্রকৃতি।” কথা শেষ করে রিটিন বাইভার্বালটিকে একটি ভয়ংকর ঘূর্ণন দিয়ে নিচে নামাতে থাকে।
প্রফেসর রাইখ চিৎকার করে বলল, “এখন কী হবে?”
”কিছু হবে না। তুমি ভয় পেয়ো না। আমরা জানি এটা ঘটবে। আমাদের মানুষেরা নিরাপত্তাকর্মীদের সরিয়ে নেবে, আমরা আমাদের এলাকায় পৌঁছে যাব।”
“তুমি কেমন করে জানো?”
“এটা সেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। তোমার ধারণা হতে পারে ক্যাটাগরি সি মানুষ বুদ্ধিহীন নির্বোধ–কিন্তু আসলে আমরা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সত্যি কথা বলতে কি আমাদের বাস্তব বুদ্ধি তোমাদের থেকে অনেক বেশি!”
আরো কয়েক পশলা গুলি বাইভার্বাল ভেদ করে গেল, তারপর হঠাৎ সবকিছু শান্ত হয়ে গেল। রিটিন খুশি খুশি গলায় বলল, “এখন আমরা নিশ্চিন্তে আমাদের আস্তানায় যেতে পরি। তার আগে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।”
“কী করতে হবে?”
“তোমাকে এই ক্যাপসুলের মাঝে ঢুকতে হবে–”
“ক্যাপসুল? কিসের ক্যাপসুল?”
“তোমার শরীরে একটা ট্র্যাকিওশান আছে, সেটা থেকে তোমাকে ট্র্যাক করা সম্ভব।”
প্রফেসর রাইখ অবাক হয়ে বলল, “তোমার শরীরে নেই?”
“না। আমরা প্রথমেই একটা জঞ্জালের মতো এটাকে ফেলে দিই।”
“কী আশ্চর্য!”
“আশ্চর্যের কিছু নয়। প্রফেসর রাইখ, তুমি ক্যাপসুলের মাঝে ঢোকো।”
প্রফেসর রাইখ ক্যাপসুলটি দেখে চিৎকার করে বলল, “না। আমি ঢুকব না। এই ছোট ক্যাপসুলের মাঝে আমি ঢুকব না–”
রিটিন মুখ হাসি হাসি করে বলল, “তুমি না ঢুকলে আমি তোমাকে জোর করে ঢোকাব, তুমি বলো, তুমি কি সেটা চাও।”
প্রফেসর রাইখ চোখ দিয়ে আগুন ছড়িয়ে ক্যাপসুলের ভেতর ঢুকল। ক্যাপসুলটা বন্ধ করতেই প্রফেসর রাইখের দুই চোখ বন্ধ হয়ে গেল।
.
কয়েক ঘণ্টা পর প্রফেসর রাইখকে সময় পরিভ্রমণসংক্রান্ত সমীকরণটি দেয়া হলো। সমীকরণটি দেখে প্রফেসর রাইখ কিছুক্ষণ ভ্রূ কুঞ্চিত করে রাখল, তারপর মাথা ঝুঁকিয়ে সমীকরণটি ভালো করে দেখল, তারপর হঠাৎ করে তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল। সে ভিডি টিউবে কিছু সংখ্যা লিখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর মাথার চুলে হাত ঢুকিয়ে চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে চিন্তা করতে থাকে।
গভীর রাতে রিটিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রফেসর রাইখের ঘরে উঁকি দিল। তার টেবিলের পাশে খাবারের ট্রে, প্রফেসর রাইখ সেগুলো স্পর্শ করেনি। শুধুমাত্র পানীয়ের বোতলটি খালি, সেখান থেকে পানীয়টুকু খেয়েছে। প্রফেসর রাইখ গভীর মনোযোগ দিয়ে ভিডি স্ক্রিনের স্বচ্ছ মনিটরটির দিকে তাকিয়ে আছে, এক হাতে মাথার চুল খামচে ধরেছে। মুখ কঠিন, দেখে মনে হয় সে বুঝি অত্যন্ত নিষ্ঠুর একটি কাজ করতে যাচ্ছে–এই মানুষটির চিন্তা করার পদ্ধতিটি অত্যন্ত চমকপ্রদ। রিটিন একবার ভাবল প্রফেসর রাইখকে কিছু একটা খেয়ে নিতে বলবে, শেষ পর্যন্ত কিছু বলল না। এই মানুষটির চিন্তার প্রক্রিয়ায় সে কোনো রকম বিচ্যুতি ঘটাতে চায় না।
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে রিটিন আবার প্রফেসর রাইখের ঘরে উঁকি দিল। প্রফেসর রাইখ ঠিক একইভাবে তার মাথার একটা চুলের গোছা খামচি দিয়ে ধরে ঠিক আগের মতো নিঃশব্দে বসে আছে। সারা রাত মানুষটি তার চোখের পাতা এক মুহূর্তের জন্যেও বন্ধ করেছে বলে মনে হলো না। রিটিনের মনে হলো এখন তার সাথে একটু কথা বলা দরকার, এই খ্যাপা প্রফেসরকে একটু বিশ্রাম নিতে পাঠানো দরকার।
রিটিন ঘরের ভেতর ঢুকে নরম গলায় ডাকল, “প্রফেসর রাইখ।”
প্রফেসর রাইখ পেছনে ফিরে রিটিনের দিকে তাকাল। তার দুই চোখ টকটকে লাল, মাথার চুল এলোমেলো, চোখের নিচে কালি, শুধু চোখ দুটো শ্বাপদের চোখের মতো জ্বলজ্বল করছে। রিটিন বলল, “প্রফেসর রাইখ। তোমার মনে হয় একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার।”