মূল গেটের কাছে গিয়ে রিটিন মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর হাত বাড়িয়ে সি নাইন্টি বিস্ফোরকটি উপরে ছুঁড়ে দেয়। একটি ধাতব শব্দ করে সেটি মূল গেটের লকিং মডিউলে আটকে গেল। রিটিন তখন গড়িয়ে সরে গিয়ে কানে হাত দিল। এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গোনার আগেই চোখধাঁধানো একটা বিস্ফোরণ হলো, প্রচণ্ড উত্তাপের একটা হলকা রিটিনের উপর দিয়ে ছুটে গেল, সে মানুষের চিৎকার এবং তীক্ষ্ণ অ্যালার্মের শব্দ শুনতে পেল। তীব্র আলোতে চারদিক হঠাৎ করে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।
রিটিন মাটিতে শুয়ে শুয়ে বড় বড় সার্চলাইটগুলোতে গুলি করে কয়েকটাকে অন্ধকার করে দিল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে সে বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। গেটটিতে ধোয়া এবং আগুন, রিটিন সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামাল না। হাতের কব্জিতে লাগানো কন্ট্রোল প্যানেলে সুইচ টিপে দিতেই পায়ের তালুতে একধরনের ঝাঁকুনি অনুভব করে, সেখানে এখন হাই টিসি সুপার কন্ডাক্টরে বিদ্যুৎপ্রবাহ করিয়ে জুতোর তলায় তীব্র ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হওয়ার কথা। রিটিন সেগুলো ব্যবহার করে একটি সরীসৃপের মতো দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে গেল, নিচে মানুষ ছোটাছুটি করছে, চট করে কেউ এখন তাকে খুঁজে পাবে না।
রিটিন বাতাস প্রবাহের বড় ডাক্টটা খুঁজে বের করল, এটার ভেতর দিয়ে সে নিরাপদে নেটওয়ার্ক সেন্টারে চলে যেতে পারবে, রিটিন দেরি না করে ডাক্টের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যায়। ডাক্টটাকে একটা গোলকধাঁধার মতো মনে হলেও রিটিন সেটাকে হাতের তালুর মতো চিনতে পারে, তার মস্তিষ্কে এটি প্রতিস্থাপন করা আছে।
কিছুক্ষণের ভেতরেই সে আবার গুলির শব্দ শুনতে পেল, তার অবস্থানটি টের পেয়ে গেছে। রিটিন কয়েক মুহূর্ত ঘাপটি মেরে তার দ্বিতীয় পি নাইন্টিটি ব্যবহার করল। আবার একটি চোখধাঁধানো বিস্ফোরণ। ডাক্টটির বড় অংশ এবারে প্রচণ্ড শব্দ করে নিচে আছড়ে পড়ল এবং রিটিন কাত হয়ে থাকা সেই ডাক্ট বেয়ে নিচে এসে পড়ল। শরীরের কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই আঘাত পেয়েছে কিন্তু তার ভেতরে যন্ত্রণার কোনো অনুভূতি নেই। থাকার কথা নয়, আগামী দুই ঘণ্টার জন্যে তার মস্তিষ্কে যন্ত্রণার অনুভূতি অবদমিত করে রাখা আছে।
রিটিন উঠে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে এই মুহূর্তে কোথায় আছে। দেয়ালে বড় বড় করে কিছু একটা লেখা, রিটিন লেখাটা চিনতে পারে। এটি নিরাপত্তার একটি কোড, নেটওয়ার্ক কক্ষের পাশের ঘরে এটি থাকার কথা।
রিটিন নেটওয়ার্ক সেন্টারের দরজাটা খুঁজে বের করল। তারপর ধোয়া এবং ধুলোতে প্রায় অন্ধকার হয়ে থাকা ঘরটির ভেতর দিয়ে নেটওয়ার্ক সেন্টারের দরজার দিকে ছুটে গেল। দরজাটি স্পর্শ করতেই সেটি খুলে গেল। রিটিনেরও সেরকম ধারণা ছিল। নেটওয়ার্ক ঘরটি তুলনামূলকভাবে অক্ষত রয়েছে, রিটিন দ্রুত কোয়ার্টজের ওয়েব গাইডগুলো খুঁজে বের করল। সেন্টারের এক কোনায় কয়েকজন মানুষ হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কী শুরু হয়েছে তারা বুঝতে পারছে না।
রিটিন তার মুখের উপর থেকে নিওপলিমারের টুকরোটুকু সরিয়ে সহজ গলায় বলল, “বন্ধুরা। আমরা কন্ট্রোল সেন্টার দখল করে ফেলেছি। পুরোটা আমাদের দখলে। তোমরা মিছিমিছি কোনো ঝামেলা কোরো না।”
কাঁপা গলায় একজন মেয়ে বলল, “তোমরা কারা?”
“তুমি যদি ক্যাটাগরি সি মানুষ হয়ে থাক তাহলে আমরা আসলে তোমাদের মতো মানুষ! পৃথিবী থেকে মানুষে মানুষে বিভাজনের জন্যে কাজ করছি।”
মেয়েটি বলল, “কিন্তু–”
রিটিন বাধা দিল, বলল, “আমি জানি এই বিষয়টা নিয়ে খুবই চমৎকার একটা বিতর্ক করা যেতে পারে কিন্তু আমার হাতে এখন সেটি শুরু করার সময় নেই। আমাকে এই নেটওয়ার্ক সেন্টারের কিছু অংশ উড়িয়ে দিতে পাঠানো হয়েছে। এখন সেটাই করতে হবে। যে বিস্ফোরণটি হবে তার ঝাঁপটায় তোমাদের রীতিমতো ঝাঁঝরা হয়ে উড়ে যাবার কথা। কাজেই আমার একান্ত অনুরোধ থাকবে তোমরা ঘরটা ছেড়ে বের হয়ে যাও।”
রিটিনের কথায় কাজ হলো, মানুষগুলো রীতিমতো হুটোপুটি করে নেটওয়ার্ক ঘরটি থেকে বের হতে শুরু করে।
রিটিন কোয়ার্টজের ওয়েব গাইডগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। চারটি গাইডের একটিকে অক্ষত রেখে বাকি তিনটিকে ধ্বংস করতে হবে। রিটিন জানে না কেন একটাকে অক্ষত রাখতে হবে। চারটি একই সাথে ধ্বংস করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ ছিল।
রিটিন নির্দিষ্ট জায়গায় বিস্ফোরক লাগিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইল। এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গোনার আগেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠল। কাজটা ঠিকমতো হয়েছে কি না এখন আর দেখার সময় নেই। তার কব্জিতে লাগানো ছোট প্যানেলে অ্যালার্ট সিগন্যাল আসতে শুরু করেছে, তাকে এখন বের হতে হবে। তাকে সরিয়ে নেবার জন্যে একটি ড্রোন কন্ট্রোল সেন্টারের উপরে চলে এসেছে, দেরি করার কোনো সুযোগ নেই।
নেটওয়ার্ক সেন্টারের বড় দরজাটিতে কিছু মানুষ আর রোবট এসে ভিড় করেছে। রোবটগুলো নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু নেই, তার জ্যামার থেকে মেটাকোড সবগুলোকে অচল করে দেবে। মানুষগুলোকে নিয়ে সমস্যা। তাকে লক্ষ করে গুলি করার চেষ্টা করছে। শরীরে ট্র্যাকিওশান নেই বলে লক করে লক্ষ্যভেদ করতে পারছে না। রিটিন পাল্টা গুলি করতে করতে বড় দরজাটি দিয়ে বাইরে বের হয়ে এল। পায়ের চৌম্বকীয় জুতো চালু করে সে আবার সরীসৃপের মতো দেয়াল বেয়ে উঠে যায়, তারপর ছাদ থেকে ঝুলে ঝুলে শ খানেক মিটার ছুটে গিয়ে বড় একটি জানালা দিয়ে বাইরে চলে এল।