ক্লিওন হেসে ফেলল, হাসতে হাসতে বলল, “মিশনটা সম্পর্কে কিছুই না জেনে তুমি রাজি হয়ে গেলে?”
রিটিন মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। আমি কিছু জানতে চাই না। জানলে যদি ভয় পেয়ে যাই সে জন্যে আমি কিছু জানতে চাই না।”
ক্লিওন কিছুক্ষণ রিটিনের দিকে তাকিয়ে থেকে তার স্যুপটা আরেক চামচ মুখে দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যুপটাতে একটা ঝাঝালো গন্ধ আছে। এটা কোথা থেকে এসেছে বলে মনে হয়?”
সবাই বুঝল ক্লিওন রিটিনের বিষয়টি নিয়ে আর কারো সাথে কোনো কথা বলবে না। রিটিনের পাশে বসে থাকা মেয়েটি বলল, “এটি সিটিলা নাইন্টি টু। সিটিলা নাইন্টি টু এই ঝাঁঝালো গন্ধটি দেয়।”
সবাই খাবার নিয়ে আলোচনা করে, মনে হতে থাকে কী দিয়ে খাবার তৈরি হয় সেটাই বুঝি আলোচনার জন্যে খুবই বিচিত্র একটা বিষয়।
.
০৬.
গভীর রাতে ছোট একটা বাইভার্বাল রিটিনকে কন্ট্রোল সেন্টারের কাছাকাছি একটা রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গেল। রিটিন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কন্ট্রোল সেন্টারটির দিকে তাকায়। এর ভেতরে ঢুকে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মূল কোয়ার্টজ ওয়েব গাইডগুলোর একটি অংশ তাকে ধ্বংস করতে হবে। তার কাছে কিছু সি নাইন্টি বিস্ফোরক এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্যে একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দেয়া হয়েছে। মুখ ছাড়া তার সারা শরীর কালো নিওপলিমার দিয়ে ঢাকা, অপরেশনের আগের মুহূর্তে সে মুখটিকেও ঢেকে নেবে। এই নিওপলিমার পোশাকটি অনেক যত্ন করে তৈরি হয়েছে। এটি যেকোনো বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ একদিকে শোষণ করে নিয়ে অন্যদিক দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। নিরাপত্তার জন্যে যে অবলাল এবং অতিবেগুনি রশ্মি ব্যবহার করা হয় সেগুলোর কাছে এই পোশাকটি অদৃশ্য। মানুষের চোখে নয়।
মানুষের চোখের সামনে না পড়ে তাকে ভেতরে ঢুকতে হবে, কাজ শেষ করতে হবে এবং বের হতে হবে। এর আগে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে, যারা চেষ্টা করছে তারা সবাই মারা গেছে, কেউ কোয়ার্টজ ওয়েব গাইডগুলো ধ্বংস করতে পারেনি। রিটিনও পারবে না–কিন্তু তবু সে চেষ্টা করবে। প্রত্যেকবার আগের বার থেকে একটু বেশি সাফল্য আসে, এভাবে একসময় সফল হবে। অন্যবারের অভিযানের তুলনায় এবারে পার্থক্য একটাই, পুরো ব্যাপারটি নিয়ে রিটিনের ভেতর খানিকটা দুর্ভাবনা আছে কিন্তু কোনো আতঙ্ক নেই।
রিটিন এই কন্ট্রোল সেন্টারের ভেতরে কখনো যায়নি কিন্তু যারা আগে যাওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের মস্তিষ্ক থেকে স্মৃতি সংগ্রহ করে তার মস্তিষ্কের ভেতর সেটা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাই রিটিন এই কন্ট্রোল সেন্টারটি সম্পর্কে এখন খুব ভালো করে জানে। কোথায় কী ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সে সম্পর্কে তার পরিষ্কার একটা ধারণা রয়েছে।
এর আগে যারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছে তারা সবাই প্রতিরক্ষা দেয়াল পার হয়ে ঢুকেছে, রিটিন সেদিক দিয়ে ঢুকবে না। সে ঠিক করেছে মূল গেট দিয়ে ঢুকবে। তার শরীরে ট্র্যাকিওশান নেই তাই মূল নিরাপত্তা সিস্টেমে সে নিশ্চয়ই অদৃশ্য।
রিটিন তার মুখটা ঢেকে মূল গেটে এসে দাঁড়াল, এখানে কোনো মানুষ নেই, থাকার প্রয়োজনও নেই। সে গেটের উপরের দিকে তাকাল, হাই ভোল্টেজ তার এবং অদৃশ্য অবলাল রশ্মি থাকার কথা। রিটিন মাথা ঘামাল না, সে তার হুক লাগানো কর্ডটি উপরে ছুঁড়ে দিল সাথে সাথে সে একটা ক্ষীণ অ্যালার্মের শব্দ শুনতে পেল।
রিটিন অপেক্ষা না করে কর্ড ধরে দ্রুত উপরে উঠে যায় এবং একাধিকবার শরীরে তীব্র অবলাল রশ্মির উত্তাপ অনুভব করে। পোশাকটি তাকে রক্ষা করবে–তাই রিটিন সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামাল না।
গেটের উপর থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ার সাথে সাথে কয়েকজন গার্ড তার দিকে ছুটে আসে। গার্ডগুলো রোবট হলে দুর্ভাবনার কিছু নেই। তার কাছে যে জ্যামার আছে সেটা মেটাকোড ব্যবহার করে সবগুলোকে অচল করে দেবে। রিটিন কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করল এবং সত্যি সত্যি রোবটগুলো অচল হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুলতে শুরু করে। একটি রোবট তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে আকাশের দিকে গুলি করতে থাকে এবং সেই শব্দ শুনে আরো অনেকে দৌড়ে আসতে থাকে।
রিটিন অপেক্ষা না করে গেটের পাশে ছোট ঘরটায় ঢুকে পড়ল। বিস্মিত গার্ড তার দিকে তাকিয়ে তার অস্ত্রটি হাতে নেয়ার চেষ্টা করল, রিটিন সেই সুযোগ দিল না। নিজের হাতের অস্ত্রটি তুলে ফিস ফিস করে বলল, “তুমি ক্যাটাগরি এ নাকি সি?”
গার্ডটি কিছু বলল না। রিটিন ফিস ফিস করে বলল, “বলে ফেল। ক্যাটাগরি এ হলে মেরে ফেলতে হবে। সি হলে শুধু অচেতন করে রাখব।”
গার্ডটি শুকনো গলায় বলল, “ক্যাটাগরি সি।” সাথে সাথে রিটিন ট্রিগার টেনে ধরল এবং ধুপ করে একটা শব্দ হলো। গার্ডটি অচেতন অবস্থায় কাত হয়ে পড়ে যায়, চোখ দুটো তখনো খোলা, সেই চোখে বিস্ময়, কিন্তু কিছু দেখছে বলে মনে হলো না।
এখন পর্যন্ত সবকিছু পরিকল্পনামতো হয়েছে, তবে কঠিন কাজটুকু এখনো শুরু হয়নি, এখন শুরু হবে। রিটিন সময় বাঁচানোর জন্যে সি নাইন্টি বিস্ফোরকগুলো বের করে হাতে নিয়ে নেয়। তারপর গার্ড রুম থেকে বের হয়ে কন্ট্রোল সেন্টারের মূল গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করে–রিটিন ইতস্তত গুলির শব্দ শুনতে পায়, সে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না। তার শরীরে ট্র্যাকিওশান নেই, কেউ তাকে লক করে গুলি করতে পারবে না। ভাগ্যক্রমে যদি তাকে লাগাতে পারে শুধু তাহলে লাগবে। আজকে এখানে একটা ভাগ্য পরীক্ষা হচ্ছে রিটিনের ভাগ্য বনাম কন্ট্রোল সেন্টারের ভাগ্য।