কাসেম নিচু গলায় বলল, কোনো ভয় নাই। প্রথম ধাক্কায় যদি ধরা না পড়িস তাহলে কোনো ভয় নাই। মোশান ডিটেক্টরগুলো ছড়িয়ে দিতে থাক, আমি আছি।
বদি ঘাড়ে–ঝোলানো প্যাকেট থেকে ছোট ছোট মোশান ডিটেক্টরগুলো বের করে চারপাশে ছড়িয়ে দিতে থাকে। দশ মিটার রেঞ্জের মোশান ডিটেক্টর, আশপাশে কোনোকিছু নড়লেই তাদের সতর্ক করে দেবে।
কাসেম কানে হেডফোন লাগিয়ে মোশান ডিটেক্টরগুলোর সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করে নেয়, অযথা প্রতিটি ঘাসফড়িংকে খুঁজে বের করে সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না। পাহারাদার রবোটটা হঠাৎ করে হাজির না হলেই হল।
বদি বাক্স খুলে যন্ত্রপাতি বের করতে করতে বলল, এইসব যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের আগে মানুষ ব্যাংক ডাকাতি করত কীভাবে?
কাসেম অন্ধকারে দাঁত বের করে হেসে বলল, আগের যুগের মানুষের বুকের পাটা ছিল। বন্দুক নিয়ে ব্যাংকে ঢুকে যেত, বলত টাকা দাও নইলে গুলি!
সর্বনাশ! ধরা পড়লে?
ধরা পড়লেও গুলি। যদি গুলি না খেয়ে ধরা পড়ে তাহলে চোখ বন্ধ করে আট বছর।
কী সর্বনাশ!
তবে অনেক ওস্তাদ লোক ছিল। কায়দা করে গয়নার দোকান সাফ করে দিত, ব্যাংক লোপাট করে দিত। সেই যুগের মানুষের মাথায় মালপানি ছিল।
বদি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ বের করতে করতে বলল, আমরাই খারাপ কী? মাসে একটা করে দাও মারছি!
কাসেম তার ইনফ্রারেড চশমা দিয়ে দরজাটা পরীক্ষা করতে করতে বলল, কিসের সাথে কিসের তুলনা। আমি যার কাছে কাজ শিখেছি তার নাম লোকমান ওস্তাদ। তার তুলনায় তুই হচ্ছিস গাধা।
কাসেমের কথায় বদি একটু অসন্তুষ্ট হলেও সে কিছু বলল না। সে এখন কাসেমের কাছে কাজকর্ম শিখছে, যন্ত্রপাতি ব্যবহার শিখে গেলে নিজের দল খুলবে, যতদিন সেটা না হচ্ছে কাসেমের হেনস্থা একটু সহ্য করতেই হবে। বড় একটা দাও মারতে পারলে যন্ত্রপাতির খরচটা উঠে আসবে, সে আশায় কাসেমের সাথে সাথে আজকের অপারেশনটাতে এসেছে।
কাসেম ম্যাগনেটিক ফ্লিপার দিয়ে দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে গিয়ে দরজার কজা খুঁজে বের করতে থাকে, সেখানে পরিমাণ মতো প্রাষ্টিক এক্সপ্লোসিভ লাগিয়ে ফিসফিস করে বলল, বদি
কী হল ওস্তাদ?
ডাক্ট টেপ দে দেখি।
কেন?
এক্সপ্লোসিভটা ঢেকে দিই। ভাইব্রেশানে পড়ে না যায়।
অন্ধকারে বদি কাসেমের হাতে একটা রোল ধরিয়ে দিতেই কাসেম ধমক দিয়ে বলল, এটা কী দিচ্ছিস?
ডাক্ট টেপ।
এটা কি ডাক্ট টেপ হল নাকি গাধা? এটা হচ্ছে ডাবল স্টিকি। তোর মাথায় কি ঘিলু নেই? নাকি যা আছে তা হাঁটুতে?
বদি গালি খেয়ে একটু সঙ্কুচিত হয়ে গেল, ভাগ্যিস আশপাশে কেউ নেই। কাসেমের কথা বলার ধরন খুব খারাপ, নেহাত কাজকর্ম জানে বলে গালমন্দ খেয়েও কোনোভাবে টিকে আছে। একজন মানুষকে বলা তার মস্তিষ্ক হচ্ছে হাঁটুতে– কী পরিমাণ অপমানজনক কথা সেটা কখনো ভেবে দেখেছে?
কাসেম উপর থেকে বলল, ড্রিলটা দে দেখি।
বদি ড্রিলটা এগিয়ে দেয়।
কোন বিট লাগিয়েছিস? ছয় নম্বরতা?
জি। ছয় নম্বর।
ড্রিলটা চালু করেই কাসেম খেঁকিয়ে উঠল, গাধার বাচ্চা গাধা, এটা ছয় নম্বর বিট হল? তোর ঘিলু আসলেই হাঁটুতে–
অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে ড্রিলের বিট পাল্টাতে পাল্টাতে হঠাৎ বদি শঙ্কিত গলায় বলল, ওস্তাদ!
কী হল?
বদি ফিসফিস করে বলল, মোশান ডিটেক্টরে মোশান ধরা পড়েছে। কেউ একজন আসছে–
কাসেম তার গলা থেকে ঝোলানো মাইক্রোওয়েভ জেমিং ডিভাইসটা টেনে নেয়। চুরি ডাকাতির জন্যে এই জিনিসটির কোনো তুলনা হয় না। ছোট একটা এলাকায় মাইক্রোওয়েভ দিয়ে ভাসিয়ে দেয়া হয়। সেখানকার রবোট, কম্পিউটার কমিউনিকেশান মডিউল সবকিছু পুরোপুরি অচল হয়ে যায়। কাসেম ইনফ্রারেড চশমায় চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে মাইক্রোওয়েভ জেমিং ডিভাইসটি হাতে নিয়ে প্রস্তুত থাকে।
তারা যে ব্যাংকের দরজা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছে তার পিছন দিক দিয়ে রবোটটিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। হাতে একটা অটোমেটিক রাইফেল, সেটাকে লাঠির মতো ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে আনছে। রবোটটির ভঙ্গিতে সতর্কতার এতটুকু চিহ্ন নেই। কাসেম রবোটটার দিকে তাকিয়ে থেকে জেমিং ডিভাইসটির বোম চেপে ধরে এবং সাথে সাথে রবোটটি পাথরের মতো নিশ্চল হয়ে যায়। শুধু একটা হাত অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে থাকে।
বদি হাতে কিল দিয়ে বলল, ধরেছ সোনার চাঁদকে।
কাসেম দাঁত বের করে হেসে মাইক্রোওয়েভ জেমিং ডিভাইসটাকে সশব্দে চুমু খেয়ে বলল, এই জিনিস না থাকলে আমাদের বিজনেস লাটে উঠত। যা বদি, দাঁড়িয়ে থাকিস না, রবোটের বাচ্চাকে ডিজআর্ম কর আগে।
বদি সাবধানে এগিয়ে গিয়ে রবোটটার হাত থেকে রাইফেলটা কেড়ে নিল। এতক্ষণে রবোটের হাতের কম্পন খানিকটা কমেছে কিন্তু এখনো সমস্ত শরীর থেকে থেকে কেঁপে উঠছে এবং গলা দিয়ে মাঝে মাঝেই একটা বিচিত্র শব্দ বের হচ্ছে।
কাসেম দরজার উপর থেকে নেমে আসে, কাছাকাছি এসে পিঠে ঝোলানো শক্তিশালী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটা রবোটের দিকে তাক করে জেমিং ডিভাইসের সুইচ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। সাথে সাথে রবোটটা নিজের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেল, সে ঘাড় ঘুরিয়ে দুজনকে দেখল এবং কণ্ঠস্বরে এক ধরনের উৎফুল্ল ভাব ফুটিয়ে নিয়ে বলল, শুভ সন্ধ্যায় আপনারা নিশ্চয়ই ব্যাংক ডাকাত।
কাসেম অস্ত্রটা সোজাসুজি তাক করে রেখে বলল, তুমি নিশ্চয়ই কোনো খবর পাঠানোর চেষ্টা করছ না? পুরো কমিউনিকেশান্স চ্যানেল জ্যাম করে রেখেছি।