পুলিশ অফিসারটি মুখ ভ্যাংচে বললেন, ন্যাকামো দেখে মরে যাই! কিছু যেন জানে না। এক সপ্তাহ থেকে তোমাদের ওয়াচ করা হচ্ছে।
আমাদের? খোরাসানী কাঁপা গলায় বললেন, ওয়াচ করা হচ্ছে?
হ্যাঁ। যখন দেখেছি প্রফেসর সাহেবের বাড়ির জিনিসপত্র চুরি করে বিক্রি করা শুরু করেছ সাথে সাথে তোমাদের পিছু লোক লাগানো হয়েছে! আজ যখন বিষ কিনলে
বিষ? আ–আ–আমি বিষ কিনেছি?
পুলিশ অফিসার প্রফেসর খোরাসানীর সাথে কথা বলার কোনো উৎসাহ দেখালেন না, একজনকে বললেন, যাও দেখি, প্রফেসর সাহেবকে ডেকে আন, তার জিনিসপত্র চিনে নিন।
কনস্টেবলটি ভিতরে চলে গেল, পুলিশ অফিসার তার হাতের ব্যাগ থেকে কিছু জিনিসপত্র বের করে টেবিলে রাখতে লাগলেন, ঘড়ি আংটি ছোটখাটো সোনার গয়না। প্রফেসর খোরাসানী চিনতে পারলেন এগুলো তার এবং লিলির। জসিম এবং সুলতানা গোপনে বিক্রি করেছে?
ঘরের ভিতর থেকে হঠাৎ ভয়ার্ত গলার স্বর শোনা গেল, কনস্টেবলটি ছুটতে ছুটতে এসে বলল, স্যার! সর্বনাশ হয়ে গেছে!
পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে?
মেরে ফেলেছে।
মেরে ফেলেছে?
জি স্যার, দুজনকেই। প্রফেসর খোরাসানী আর তার স্ত্রী। দুজনেই ডেড।
পুলিশ অফিসার রক্তচোখে খোরাসানীর দিকে তাকালেন, তারপর হিসহিস করে বললেন, স্কাউনড্রেল! মার্ডারার!
খোরাসানী শুষ্ক গলায় বললেন, এটা আত্মহত্যা। এটা মার্ডার না। আপনি দেখেন খোঁজ নিয়ে।
তুমি কেমন করে জান?
আমি– আমি জানি। দেখেন চিঠি লেখা আছে—
পুলিশ অফিসার চোখ ঘোট ঘোট করে বললেন, আর চিঠিতে কী লেখা আছে বলব?
কী?
লেখা আছে সমস্ত সম্পত্তি তোমাদের দিয়ে গেছেন, তাই না?
খোরাসানী হঠাৎ তার সজীব দেহ নিয়েও দুর্বল অনুভব করতে থাকেন। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বললেন, কি–কি–কিন্তু
তোমাদের মতো কেস আমরা অনেক দেখেছি। বুড়ো স্বামী–স্ত্রীকে মেরে বলবে আত্মহত্যা, দেখা যাবে চিঠিতে লিখা সমস্ত বাড়িঘর লিখে দিয়ে গেছে। আমরা কি কচি খোকা, নাকি আমাদের নাক টিপলে দুধ বের হয়?
খোরাসানী কী বলবেন বুঝতে পারলেন না, ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলেন। পুলিশ অফিসার ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে বললেন, শুধু যে সম্পত্তি দিয়ে চিঠি লিখে গেছে তাই না, হাতের লেখাটাও তোমার! তাই না?
প্রফেসর খোরাসানী মাথা নাড়লেন, না!
দেখি একটা কাগজ দাও দেখি, পুলিশ অফিসার একজন কনস্টেবলকে ডেকে বললেন, এই ব্যাটা ধড়িবাজের হাতের লেখার একটা নমুনা নিয়ে নিই!
প্রফেসর খোরাসানীর হাতকড়া খোলা হল, তাকে একটা কাগজ আর কলম দেয়া হল, পুলিশ অফিসার ধমক দিয়ে বললেন, লেখ।
কী লিখব?
তোমার নাম লেখ।
প্রফেসর খোরাসানী অন্যমনস্কভাবে নিজের নাম স্বাক্ষর করলেন এবং হঠাৎ করে তার মনে পড়ল আত্মহত্যার চিঠিতে এই নাম হুবহু এভাবে স্বাক্ষর করা আছে। নিজের অজান্তে তিনি মৃত্যু পরোয়ানাতে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন!
ঘণ্টাখানেক পর দেখা গেল পুলিশের গাড়িতে করে জসিম এবং সুলতানা নামের দুজন কমবয়সী তরুণ–তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ জানতে পারল না প্রফেসর খোরাসানী এবং তার স্ত্রী লিলিকে হত্যা করার জন্যে প্রফেসর খোরাসানী এবং তার স্ত্রীকেই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
ব্যাংক ডাকাত
দেয়াল টপকে সাবধানে ভিতরে নামল কাসেম, চোখে ইনফ্রারেড চশমা লাগানো, অন্ধকারেও সে বেশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। যে রবোটটা পাহারায় আছে তার হাতে নাকি কয়েক ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থাকে। হঠাৎ করে তার হাতে ধরা পড়তে চায় না। কয়েক মুহূর্ত সে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, কোথাও কোনো শব্দ নেই, মনে হয় কেউ তাকে লক্ষ করে নি। কাসেম সাবধানে তার ছোট রেডিওটা বের করে, প্রথমে পুরো ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জটা পরীক্ষা করে নেয়, চল্লিশ মেগাহার্টজের কাছে একটা ভোতা শব্দ শুনতে পেল– সম্ভবত পাহারাদার রবোটটা এই ফ্রিকোয়েন্সিটাই ব্যবহার করছে, কাসেম নব ঘুরিয়ে একটা নিরাপদ ফ্রিকোয়েন্সি বের করে ফিসফিস করে ডাকল, বদি–
দেয়ালের অন্য পাশে বেশ কিছু দূরে একটা গাছের আড়ালে বদি দাঁড়িয়ে ছিল, সে ফিসফিস করে বলল, কী খবর ওস্তাদ? সব ঠিকঠাক?
হ্যাঁ। আগে যন্ত্রপাতি পাঠা—
পাঠাচ্ছি।
কাসেমের কোমরে একটা শক্তিশালী অটোমেটিক রিভলবার ঝুলছে, টেফলন কোটেড বুলেট, এক গুলিতেই বড় জখম করে দিতে পারে। তবু ভারি অস্ত্র হাতে না আসা পর্যন্ত সে স্বস্তি পাচ্ছে না। এই ব্যাংকটার পাহারায় যে রবোটটা রয়েছে সেটি নাকি বিশেষ উন্নত শ্রেণীর, লেজার লক না করে তাকে কাবু করা শক্ত।
বদি বাইরে থেকে নাইলনের কর্ডে করে ভারি অস্ত্রগুলো বেঁধে দিল, কাসেম ভিতরে দাঁড়িয়ে সাবধানে সেগুলো ভিতরে টেনে আনতে থাকে। অস্ত্রের পর প্রাষ্টিক এক্সপ্লোসিভ এবং যন্ত্রপাতির বাক্স। কাসেম দক্ষ হাতে অস্ত্রগুলো বের করে সাজিয়ে নেয়, এখন মোটামুটি সবকিছু হাতের কাছে আছে, হঠাৎ করে ধরা পড়ার ভয় নেই। কাসেম তার ইনফ্রারেড চশমায় চারদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে তার রেডিওতে মুখ লাগিয়ে নিচু গলায় বলল, বদি
কী হল?
ভিতরে চলে আয় এখন। সব ক্লিয়ার।
ঠিক আছে।
দুই মিনিট পরে বদিও ঝুপ করে কাসেমের পাশে এসে নেমে পড়ল। তার সারা শরীরে কালো পোশাক, ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে হঠাৎ করে দেখা যায় না। হাঁটুতে বেঁধে রাখা রিভলবারটা খুলে হাতে নিতে নিতে বলল, শালার রবোটটাকে নিয়ে ভয়।