মূল কম্পিউটার সাথে সাথে নূতন পরিস্থিতিটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে থাকে, কিহি নিশ্বাস বন্ধ করে বড় মনিটরটির দিকে তাকিয়ে থাকে, তার আর কিছু করার নেই। বিধ্বস্ত এলাকাটি বায়ুরোধ করে বন্ধ করা হল; আগুন নিভিয়ে দিয়ে, বাতাস পরিশোধন করে সাময়িকভাবে অবস্থার নিয়ন্ত্রণ আনা হল। কিহি আবার কম্পিউটারের উপর ঝুঁকে পড়ল। ঠিক তখন কন্ট্রোল কক্ষের দরজা খুলে যায় এবং প্রায় হুড়মুড় করে ভিতরে গ্রুজান এবং তার পিছনে আরো কিছু রবোট স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে প্রবেশ করে। কিহি হঠাৎ করে অনুভব করল ভয়ের একটা শীতল স্রোত তার মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
গ্রুজান স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি কিহির বুকের দিকে তাক করে বলল, মহামান্য কিহি, আপনি আমাদের হাতে বন্দি।
কিহি কষ্ট করে সাহস সঞ্চয় করে বলল, বন্দি?
হ্যাঁ।
কেন?
বিধর্মী ক্রিটন এবং তার দলের রবোটেরা অস্ত্রভাণ্ডার থেকে লেজার–নিয়ন্ত্রিত মিজাইলগুলো সরিয়ে নিয়েছে। অস্ত্রের দিক দিয়ে আমরা এখন দুর্বল। এর মাঝে আমাদের তিনটি রবোট বিধ্বস্ত হয়েছে– ঈশ্বর তাদের আত্মাকে স্বর্গবাসী করুন– নিজেদের রক্ষা করার জন্যে এখন আপনাকে আমাদের প্রয়োজন।
কিহি জিভ দিয়ে তার শুকনো ঠোঁটকে ভিজিয়ে নিয়ে বলল, আমাকে দিয়ে কী হবে?
আপনি হবেন আমাদের জিম্মি।
জিম্মি?
হ্যাঁ। ক্রিটনকে জানিয়ে দেব আমাদের দলের কোনো রবোটকে আঘাত করা হলে সাথে সাথে ঈশ্বরের নামে আপনাকে হত্যা করা হবে।
কিহি দেখতে পেল অন্য রবোটগুলো সম্মতিসূচক ভঙ্গি করে মাথা নাড়ছে, সাথে সাথে তার সমস্ত শরীর শিউরে উঠল। গ্রুজান এগিয়ে এসে তার ধাতব হাতে কিহিকে ধরে ফেলল। এবং পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে কন্ট্রোল কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যায়।
তৃতীয় স্তরে পৌঁছেই কিহি আবিষ্কার করল, সেখানে ক্রিটনের দল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তার কানের কাছ দিয়ে শিস দেয়ার মতো শব্দ করে একটা গুলি বের হয়ে গেল এবং সাথে সাথে ক্রিটনের গলার স্বর শোনা গেল। সে উচ্চৈঃস্বরে বলল, আর এক পা অগ্রসর হলেই গুলি করা হবে। যে যেখানে আছ দাঁড়াও।
গ্রুজান কিহির পিছনে দাঁড়িয়ে বলল, আমি মহামান্য কিহিকে বন্দি করে এনেছি, তিনি আমার জিন্মি। আমার দলের কাউকে আঘাত করা হলে মহামান্য কিহিকে ঈশ্বরের নামে হত্যা করা হবে।
এলাকাটিতে হঠাৎ এক ধরনের অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এল। কিছুক্ষণ পর ক্রিটন বলল, তুমি কী চাও?
আমি আমার দলের জন্যে একটি লেজার নিয়ন্ত্রিত মিজাইল চাই।
অসম্ভব।
যদি দেয়া না হয় তাহলে
কিহি হাত তুলে বলল, তোমরা আমাকে কথা বলতে দাও।
ক্রিটন বলল, আপনি কী বলতে চান?
লেজার নিয়ন্ত্রিত মিজাইল মহাকাশযানে রাখা হয়েছে কোনো প্রয়োজনে বাইরের শত্রু থেকে মহাকাশযানটিকে রক্ষা করার জন্যে। এটি কোনোভাবেই মহাকাশযানের ভিতরে ব্যবহার করা যাবে না। এর ভিতরে যে পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে সেটি এই মহাকাশযানের ভিতরে বিস্ফোরিত হলে সাথে সাথে মহাকাশযানটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
ক্রিটন গলার স্বরে একটি নূতন কম্পন যুক্ত করে বলল, সৃষ্টি এবং ধ্বংস ঈশ্বরের হাতে। শুধু ঈশ্বরই এর নিয়ন্ত্রণ করেন–আমরা নিমিত্ত মাত্র।
কিহি আর নিজেকে সংবরণ করতে পারল না, তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, তোমার ঈশ্বরের আমি নিকুচি করছি।
সাথে সাথে ক্লিক ক্লিক করে সবগুলো অস্ত্র প্রস্তুত করে কিহির দিকে তাক করা হল। ক্রিটন তার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি উঁচু করে কিহির দিকে এগিয়ে এসে শীতল গলায় বলল, আপনি ঈশ্বরের অবমাননা করেছেন মহামান্য কিহি। যে ঈশ্বর সৃষ্টিজগৎ তৈরি করেছেন, যার ভালবাসায় আমরা সিক্ত হয়েছি, যার মহানুভবতায় আমরা মহান হয়েছি তাকে অবমাননা করা যায় না।
গ্রুজান কিহিকে পিছন থেকে ধাক্কা দিল, সে তাল হারিয়ে সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি তার বুকের দিকে তাক করে গ্রুজান বলল, আপনি অনেক বড় অপরাধ করেছেন মহামান্য কিহি। আপনাকে অবশ্যই এই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
উপস্থিত রবোটগুলো সমস্বরে চিৎকার করে বলল, করতে হবে।
কিহি আতঙ্কিত চোখে তার চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা রবোটগুলোর দিকে তাকাল, এই প্রথমবার সে তার নিজের জীবনকে নিয়ে বিপন্ন অনুভব করতে থাকে।
ক্রিটন এগিয়ে এসে বলল, আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করেছি ঈশ্বরের প্রতি আপনার কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে উপাসনা করেন না। ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন না।
গ্রুজান বলল, ঈশ্বরের ভালবাসা পেতে হলে তাকে ভালবাসতে হয়। আপনার কার্যকলাপে তার জন্যে কোনো ভালবাসা নেই।
কিহি কিছু একটা বলার চেষ্টা করল, গ্রাউল বাধা দিয়ে বলল, আপনাকে শেষবার একটা সুযোগ দিচ্ছি মহামান্য কিহি। আপনি ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। উপাসনার ভঙ্গিতে ঈশ্বরকে ডাকুন, তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করুন। হয়তো ঈশ্বর আপনাকে ক্ষমা করবেন।
ক্রিটন তার অস্ত্র হাতবদল করে বলল, ঈশ্বর যদি চান তাহলে তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন কিন্তু আমরা আপনাকে ক্ষমা করতে পারি না কারণ তাহলে ঈশ্বর আমাদের ক্ষমা করবেন না। ঈশ্বর বলেছেন অবিশ্বাসীদের মূলোৎপাটন কর, কারণ তারা জগতের শক্র। মহামান্য কিহি আপনি ঈশ্বরের নাম জপ করুন।