নিকি অবাক হয়ে বলল, ধ্বংস করে? কেমন করে ধ্বংস করে?
এর মাঝে বিস্ফোরক রয়েছে। যখন ট্রিগার টানা হয় তখন বিস্ফোরকগুলো ছুটে যায়, যেখানে সেটি আঘাত করে সেখানে বিস্ফোরণ হয়ে সব ধ্বংস হয়ে যায়।
নিকি চোখ বড় বড় করে ক্রিনিটির দিকে তাকিয়ে রইল তারপর ইতস্তত করে বল, কিন্তু ক্রিনিটি–
কিন্তু কী?
তুমি কেন এই বাইভার্বালে অস্ত্র লাগাচ্ছ? তুমি কাকে ধ্বংস করতে চাও?
আমি কাউকে ধ্বংস করতে চাই না। কিন্তু সবসময় একটু সতর্ক থাকতে হয়। এই বনে সব পশুপাখি তোমার বন্ধু। কিন্তু অন্য কোথাও অন্য পশুপাখি তোমার বন্ধু নাও হতে পারে। তারা তোমাকে আক্রমণ করে বসতে পারে—
নিকি মুখ শক্ত করে বলল, না। কখনো কোনো পশুপাখি আমাকে। আক্রমণ করবে না। আমি পশুপাখিকে ভালোবাসি। পশুপাখিও আমাকে ভালোবাসে।
ক্রিনিটি বলল, সেটি সত্যি কথা। কিন্তু আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাই। তুমি হচ্ছ একমাত্র জীবিত মানুষ—তোমার যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেটি আমাকে সবসময় লক্ষ রাখতে হয়।
তুমি বেশি বেশি লক্ষ রাখ।
তা ছাড়া আমরা যখন ঘুরতে বের হব তখন আরো অনেক কিছুর সাথে আমাদের দেখা হবে। তাদের থেকেও বিপদ হতে পারে।
নিকি একটু চিন্তিত সুরে বলল, কার সাথে দেখা হতে পারে?
রোবটদের সাথে।
নিকি এবারে শব্দ করে হেসে ফেলল। রোবট বলতে সে শুধু ক্রিনিটিকে বোঝে, ক্রিনিটি বা ক্রিনিটির মতো কারো কাছ থেকে কোনো বিপদ হতে পারে সেটি এতো অবাস্তব একটি বিষয় যে সেটি কল্পনা করে নিকি না হেসে পারল না। নিকি হাসতে হাসতে বলল, ক্রিনিটি, তুমি বলেছ যে রোবটদের তৈরি করা হয়েছে মানুষদের সেবা করার জন্যে। একটি রোবট কখনো কোনো মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। চেষ্টা করলেও পারে না।
সেটি সত্যি কথা। কিন্তু—
কিন্তু কী?
একসময় পৃথিবীতে মানুষ ছিল তখন রোবটদের জন্যে এই নিয়ম ছিল। এখন তো পৃথিবীতে মানুষ নাই তাই রোবটদের মাঝে এই নিয়মগুলো আছে। কিনা সেটি তো জানি না। এখন এই পৃথিবীতে আছে শুধু রোবট তারা কী করছে কে জানে।
নিকি খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, রোবটদের এখন কোনো কাজ নেই। তাই তারা মনে হয় অনেক মজা করছে।
ক্রিনিটি বলল, সব রোবট মজা করতে পারে না।
কেন ক্রিনিটি? কেন সব রোবট মজা করতে পারে না?
মজা করার জন্যে বুদ্ধিমত্তা থাকতে হয়। সব রোবটের বুদ্ধিমত্তা নেই। যাদের মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা তারা মজা করতে পারে।
তুমি কী মজা করতে পার?
না। আমি পারি না। আমি তৃতীয় মাত্রার রোবট। আমার বুদ্ধিমত্তা মানুষ থেকে কম। চতুর্থ মাত্রার রোবটের বুদ্ধিমত্তা মানুষের বুদ্ধিমত্তার সমান।
আর পঞ্চম মাত্রা?
পঞ্চম মাত্রার রোবট পৃথিবীতে তৈরি হয় নি।
কেন তৈরি হয় নি?
পঞ্চম মাত্রার রোবটের বুদ্ধিমত্তা হবে মানুষ থেকে বেশি সেই জন্যে কখনো পঞ্চম মাত্রার রোবট তৈরি করা হয় নি। পৃথিবীর মানুষ নিজের থেকে বুদ্ধিমান রোবট তৈরি করতে চায় নি।
নিকি কিছুক্ষণ ক্রিনিটির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ক্রিনিটি।
বল।
আমার মনে হয় তুমি যদিও তৃতীয় মাত্রার রোবট কিন্তু তুমি ইচ্ছা করলে মজা করতে পারবে।
ক্রিনিটি তার কপোট্রনে একধরনের চাপ অনুভব করল, সে চাপটুকু কমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে বলল, তুমি তাই মনে কর?
হ্যাঁ।
তুমি কী রকম মজা করার কথা ভাবছ?
বনে একটি গাছে একটু হলুদ একটু লাল রঙের ফল পাওয়া যায় সেটি খেতে খুব মজা। তুমি সেটি খেয়ে দেখতে পার।
মানুষ হচ্ছে স্তন্যপায়ী প্রাণী তার শরীরে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা থাকতে হয়। সেইজন্যে মানুষকে একটু পরে পরে খেতে হয়। আমি রোবট, আমার শরীরে একটি ব্যাটারি লাগানো আছে, আমাকে খেতে হয় না।
নিকি বলল, আমি জানি। কিন্তু আমার মনে হয় এই ফলটি তবু তোমার খেয়ে দেখা উচিৎ। এই ফলটি খেলে তোমার যেটি মনে হবে সেটি হচ্ছে মজা।
ক্রিনিটি কোনো উত্তর না দিয়ে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দুটি লাগানো শেষ করে তার লেজার আলোটি পরীক্ষা করল।
নিকি বলল, গাছের উপর থেকে হ্রদের পানিতে লাফ দিলেও অনেক মজা হয়।
ক্রিনিটি বলল, আমার ধাতব শরীর পানিতে ভেসে থাকতে পারে না।
নিকি বলল, ড়ুবে থাকলে আরও বেশি মজা। পানিতে লাল রঙের কাকড়া থাকে। সেগুলো দেখা যায়।
ক্রিনিটি কোনো কথা বলল না। সে তৃতীয় মাত্রার রোবট হয়েও এই মানব শিশুটির সাথে কথা বলতে পারে, কিন্তু অনেক সময়ই আবিষ্কার করে সে কোনো একটি কথার উত্তরে যৌক্তিক কোনো কথা বলতে পারছে না। তখন সে চুপ করে থাকে।
নিকির হাতে বসে থাকা পাখিটি একটু চঞ্চল হয়ে আকাশের দিকে তাকাল তারপর চাপা স্বরে ডাকল, কঁ কঁ।
নিকি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ঠিক আছে চল।
ক্রিনিটি বলল, কোথায় যাচ্ছ?
কিকি আকাশে উড়বে। আমি ওর পিছু পিছু দৌড়াব।
ও।
আমার মনে হয় পাখিরা মানুষ থেকে বেশি মজা করতে পারে।
কথাটি সত্য নয়, শুদ্ধ করে নিকিকে সেটি বলা উচিৎ ছিল, কিন্তু ক্রিনিটি কোনো কিছু বলল না। দীর্ঘদিন নিকির সাথে থেকে ক্রিনিটি কিছু জিনিস করতে শিখেছে। নিকিকে সে প্রায় সময়েই যুক্তিহীন বা অতিরঞ্জিত কথা বলতে দেয়। ক্রিনিটি জানে কারণে-অকারণে মানুষ অযৌক্তিক কথা বলে। মানুষকে অযৌক্তিক কথা বলতে না দিলে কিংবা অযৌক্তিক কাজ করতে না দিলে তারা মনে হয় পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারবে না।
কিকির পেছনে পেছনে নিকি ছুটতে থাকে। কিকি উড়তে উড়তে আবার নিকির কাছে ফিরে আসে, নিকি তাকে ধরার চেষ্টা করে কিকি শেষ মুহূর্তে উড়ে সরে যায়, এটি দুজনের মাঝে একরকম খেলা। নিকি বারকয়েক চেষ্টা করে কিকিকে ধরে আনন্দে হি হি করে হাসতে থাকে। ক্রিনিটি তার কাজ থামিয়ে নিকিকে লক্ষ করে, নিকিকে বড় করতে গিয়ে সে মানুষের অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছে, কিন্তু হাসির ব্যাপারটি সে এখনো ধরতে পারে নি। মানুষ। কেমন করে হাসে সেই ব্যাপারটি তার কাছে এখনো দুর্বোধ্য। সে যদি তিন মাত্রার রোবট না হয়ে চার মাত্রার রোবট হতো তাহলে সে হয়তো এটি বুঝতে পারত, তিন মাত্রার রোবট হিসেবে সে কখনোই এটি জানতে পারবে না।