নিকি আর ত্রিপি মাথা নাড়ল, বলল, না জানি না।
আমি তাকে আসতে দিয়েছি কারণ, আমি চাই সে এখানে থাকুক। যখন আমি তোমাদের হত্যা করি তখন সে এই পুরো দৃশ্যটা দেখুক। তার কপোট্রনে সেটা জমা থাকুক, সেখান থেকে পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ুক। বুঝেছ?
নিকি আর ত্রিপি মাথা নেড়ে বলল, তারা বুঝেছে।
ফ্লিকাস তার হাতের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটির ম্যাগাজিনটা একবার খুলে আবার লাগিয়ে পরীক্ষা করল। তার লেজার সংঙ্কেতটি একবার জ্বালিয়ে দেখল তারপর বলল, বুঝেছ নিকি, তুমি আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করেছ। এতোটুকু একজন মানুষ হয়ে পঞ্চম মাত্রার রোবটের এতো বড় ক্ষতি করা সম্ভব আমি বিশ্বাস করি নি। কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করতে হয়েছে। পাহাড়ের গহ্বরের মানুষগুলো জেগে ওঠার আগেই আমার মেরে ফেলার কথা ছিলতোমার জন্য পারি নি। এতো ছোট বাচ্চা মাইক্রো মডিউল আর বিস্ফোরকের পার্থক্যটুকু জানে সেটি আমাদের জানা ছিল না।
এখন মানুষগুলোকে মারতে হবে গহ্বর থেকে বের হবার সময়। কাজটি কঠিন নয় কিন্তু কাজটি পরিচ্ছনও নয়। আমরা অপরিচ্ছন্ন কাজ করতে চাই না–তোমার জন্যে করতে হচ্ছে। শুধুমাত্র তোমার জন্যে।
ফ্লিকাস একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, শুধু যে গহবরের ভেতরের মানুষগুলোকে মারতে দাও নি তা নয়, তুমি আমাকেও ধ্বংস করেছ! ওরে মূখ। মানবশিশু, তুমি জান তুমি কত বড় ক্ষতি করেছ? জানার কথা নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান প্রযুক্তির আবিষ্কারটি তুমি এভাবে ধ্বংস করে দিলে? কেন?
নিকি বলল, তুমি কেন সব মানুষকে হত্যা কর?
বিবর্তনের কারণে একসময় মানুষ পৃথিবীর দায়িত্ব নিয়েছিল। এখন মানুষ নেই, এখন আমাদের পৃথিবীর দায়িত্ব নিতে হবে। যে দুই চারজন মানুষ আছে তারা একধরনের যন্ত্রণা—তাই আমরা তাদের হত্যা করছি। এটা হচ্ছে। প্রকৃতির নিয়ম। যে সবল সে টিকে থাকবে, তার টিকে থাকার জন্যে অন্যদের। সরে যেতে হবে। এটাই বিবর্তন।
ঠিক এরকম সময় বনের ভেতর থেকে ছুটতে ছুটতে ক্ৰিনিটি এসে হাজির হলো, তার হাতের অস্ত্রটি দোলাতে দোলাতে বলল, না, না তুমি কিছুতেই নিকি আর ত্রিপির ক্ষতি করতে পারবে না।
ফ্লিকাস একধরনের কৌতুকের ভঙ্গি করে বলল, আমি তাদের ক্ষতি করব, তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেব।
ক্রিনিটি দুই হাত বিস্তৃত করে বলল, না, তুমি সেটা করতে পারবে না। আমি তোমাকে সেটা করতে দেব না।
ফ্লিকাস হা হা করে হাসল, বলল, তৃতীয় মাত্রার একটি রোবট পঞ্চম মাত্রার একটি রবোটকে হুমকি দিচ্ছে? পৃথিবীতে এর চাইতে বড় রসিকতা কি কিছু হতে পারে?
ক্রিনিটি বলল, নিকির মা আমার হাতে নিকিকে তুলে দিয়েছিল, আমাকে বলেছিল তাকে দেখে শুনে রাখতে–
ফ্লিকাস তার হাতের অস্ত্রটি ক্রিনিটির দিকে তাক করে ট্রিগার টেনে ধরে, প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণের শব্দে ক্রিনিটির যন্ত্রসহ হাতটি ভস্মিভূত হয়ে উড়ে যায়। বিস্ফোরণের ঝাঁপটায় ক্রিনিটি বালুবেলায় হুঁমড়ি খেয়ে পড়ল। নিকি আর ত্রিপি ক্রিনিটির কাছে ছুটে যাচ্ছিল তখন ফ্লিকাসের যন্ত্রটি আবার গর্জে উঠে এবং সাথে সাথে ক্রিনিটি মাটিতে আছড়ে পড়ল। তার পায়ের পাতা উড়ে গিয়ে সেখান থেকে পোড় তার টিউব আর যন্ত্রপাতি বের হয়ে এসেছে। ক্রিনিটি মাটি থেকে ওঠার চেষ্টা করতে করতে একবার নিকির দিকে তাকাল, বলল, নিকি, আমি মনে হয় তোমাকে উদ্ধার করতে পারব না।
ফ্লিকাস মাথা নাড়ল, বলল, না। তুমি পারবে না। আমি ইচ্ছে করলেই তোমার পুরো সিস্টেম বিকল করে দিতে পারি কিন্তু করি নি। আমি চাই তুমি পরের দৃশ্যটি দেখ।
নিকি ক্রিনিটির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তোমার ব্যথা লাগছে ক্রিনিটি?
না আমার ব্যথা লাগছে না। আমার ব্যথা লাগার ক্ষমতা নেই। শুধু আমার সার্কিটে চাপ পড়ছে তাই সেটা জোর করে চালু করে রাখতে হচ্ছে। কতোক্ষণ রাখতে পারব আমি জানি না।
নিকির চোখে হঠাৎ পানি এসে গেল, সে ক্রিনিটির শরীরে হাত বুলিয়ে বলল, আমি দুঃখিত ক্রিনিটি। আমি খুবই দুঃখিত। আমার জন্যে তোমার এতো কষ্ট হচ্ছে—
ঠিক তখন কঁ কঁ করে ডাকতে ডাকতে কিকি মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়। নিকি উপরে তাকাল বলল, কিকি আমাদের খুব বিপদ। খুব বড় বিপদ। এই লোকটা ক্রিনিটিকে মেরে ফেলছে।
কিকি কঁ কঁ করে ডাকতে ডাকতে বনভূমির দিকে উড়ে গেল।
ফ্লিকাস মুখে একধরনের কৌতুকের হাসি নিয়ে পুরো দৃশ্যটি দেখছিল, সে এবারে হা হা করে হেসে বলল, চমৎকার একটি নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে! তৃতীয়। মাত্রার একটি রোবট আহত এবং তার জন্যে সমবেদনায় মানবশিশুর চোখে অশ্রুজল! শুধু তাই নয়, সে এই দুঃখের কাহিনীটা বলছে কালো কুৎসিত একটা পাখিকে। ফ্লিকাস হাসতে হাসতে হঠাৎ হাসি থামিয়ে ফেলে, দেখতে দেখতে তার মুখ কঠিন হয়ে ওঠে, সে হিংস্র চোখে নিকির দিকে তাকিয়ে বলল, নিকি, বলো এই পৃথিবীটা কার? রোবটের না মানুষের? তোমার না আমার?
আমার।
যদি তোমার হয় তাহলে কে তোমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে?
নিকি কোনো কথা বলল না, স্থির চোখে ফ্লিকাসের দিকে তাকিয়ে রইল। ফ্লিকাস খুব ধীরে ধীরে তার অস্ত্রটি উপরে তুলে ধরে সেটি নিকির বুকের দিকে তাক করে হিস হিস করে বলল, কে তোমাকে রক্ষা করবে নিকি? ত্রিপি? কে তোমাদের রক্ষা করবে?
নিকি কোনো কথা বলল না। ফ্লিকাস শীতল গলায় বলল, আমার কথার উত্তর দাও, যদি এই পৃথিবীটা তোমার হয় তাহলে এই পৃথিবীর কে তোমাকে রক্ষা করতে আসবে? কে?