হ্যাঁ। ত্রিপি মাথা নেড়ে বলল, আমরা বের হয়ে কোনো কথা না বলে সোজা বাইভার্বালে উঠে চলে যাব।
হ্যাঁ। আমরা ফ্লিকাসের সাথে কোনো কথা বলব না। নিকি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এখন কী বের হব?
হ্যাঁ। ত্রিপি বলল, চল বের হই।
নিকি ফ্যাকাসে মুখে বলল, আমার ভয় করছে। ফ্লিকাস যদি এখানকার সব মানুষকে মেরে ফেলতে চায় তাহলে সে তো আমাদেরও মেরে ফেলতে চেষ্টা করবে।
ঠিকই বলেছ।
কিন্তু আমরা তো ভেতরে বসে থাকতে পারব না। আমাদের তো বের হতে হবে।
হ্যাঁ বের হতে হবে। নিকি কিছুক্ষণ চিন্তা করল তারপর নিচু হয়ে পকেট থেকে কয়েকটা বিস্ফোরক নিয়ে নিল।
ত্রিপি জিজ্ঞেস করল, তুমি কী করছ?
কয়েকটা বিস্ফোরক নিচ্ছি।
কেন?
জানি না। যদি কোনো কাজে লাগে সেজন্যে।
ত্রিপি ভীত চোখে নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। নিকি কঠিন মুখে বলল, ফ্লিকাসকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেব না।
নিকি আর ত্রিপি দরজা ঠেলে বের হয়ে দেখল, দরজার ঠিক সামনে ফ্লিকাস দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভয়ে ভয়ে তার মুখের দিকে তাকাল। ফ্লিকাস ভুরু কুঁচকে বলল, তোমরা বের হয়ে এসেছ কেন?
নিকি কী বলবে বুঝতে পারল না, ইতস্তুত করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল হঠাৎ করে সে চমৎকার একটা উত্তর পেয়ে গেল, বলল, ভেতরে খুব ঠাণ্ডা। জমে যাচ্ছিলাম।
ফ্লিকাস বলল, হিমঘর তো ঠাণ্ডা হবেই।
সেজন্যে বাইরে এসেছি।
ত্রিপিও মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। সেজন্যে বাইরে চলে এসেছি।
সগুলো মাইক্রো মডিউল ক্যাপসুলগুলোতে লাগিয়েছ?
হ্যাঁ লাগিয়েছি।
সবগুলোতে?
হ্যাঁ।
ফ্লিকার্সের মুখে একধরনের হাসি ফুটে ওঠে, নিকির মনে হলো হাসিটা খুব ভয়ঙ্কর। সে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি হাসছ কেন?
আনন্দে।
কিসের আনন্দে?
মানুষের নাকি খুব বুদ্ধি! কেউ নাকি তাদের হারাতে পারে না। আমি হারিয়েছি।
ফ্লিকাস কী বলতে চাইছে দুজনেই বুঝে গেল, তারা দুজনেই হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। ফ্লিকাস বলল, তোমরা হচ্ছ নিম্পাপ শিশু! আমি এই নিস্পাপ শিশুদের ব্যবহার করে মানুষের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য ঘাটির প্রত্যেকটি মানুষকে হত্যা করার ব্যবস্থা করেছি।
ফ্লিকাস বলল, আমি জানি তোমরা বিষয়টি বুঝতে চাইছ। বিষয়টি খুবই সোজা। তোমরা ক্যাপসুলে যে মাইক্রো মডিউলগুলো লাগিয়ে আসলে তার প্রত্যেকটা হচ্ছে একটা করে টাইমার লাগানো বিস্ফোরক।
নিকি আর ত্রিপি একজন আরেকজনের দিকে তাকাল, কোনো কথা বলল না। ফ্লিকাস বলল, টাইমারে তিরিশ মিনিট সময় সেট করা আছে। আর ত্রিশ মিনিট পর ভেতরের প্রতিটি ক্যাপসুলে একটা করে বিস্ফোরণ হবে। একটি করে বিস্ফোরণের অর্থ একটি করে মানুষ। ফ্লিকাস হঠাৎ হা হা করে হেসে উঠল। নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কর একধরনের হাসি।
ফ্লিকাস একটু এগিয়ে এসে অনেকটা আদরের ভঙ্গিতে নিকির চিবুক স্পর্শ। করে বলল, এখন রয়ে গেলে তোমরা দুজন। যাদের আমার খুঁজে বের করতে হয় নি যারা নিজেরা এসে আমার হাতে ধরা দিয়েছে। তোমরা মনে হয় এখন আমাকে আর বিশ্বাস করবে না কিন্তু আসলেই তোমাদের জন্য আমার একধরনের মায়া হয়েছে।
ত্রিপি জিজ্ঞেস করুল, তুমি আমাদের কী করবে?
অবশ্যই মেরে ফেলব। কিন্তু এখানে নয়। বাইরে। ফ্লিকস বলল, এই জায়গাটি আমার পছন্দ নয়। এখানে মানুষ মানুষ গন্ধ, মানুষের গন্ধ আমার একেবারে ভালো লাগে না।
একপাশে ক্রিনিটি দাঁড়িয়ে ছিল, সে এবারে এগিয়ে এসে বলল, আমি এদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছি। তুমি কিছুতেই এদের ক্ষতি করতে পারবে না। আমি কিছুতেই–
ক্রিনিটি কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে থেমে গেল, নিকি আর ত্রিপি দেখল, ক্রিনিটির সারা শরীরে অদম্য একটা খিচুনির মতো শুরু হয়েছে, সে কথা বলতে পারছে না এবং থরথর করে কাঁপছে। ফ্লিকাস হা হা করে হেসে বলল, তিন মাত্রার রোবট এসে আমাকে বলছে আমি কী করতে পারব আর কী করতে পারব না! এর চাইতে বড় রসিকতা কী হতে পারে? আমি মুহূর্তের মাঝে তার পুরো সিস্টেম ওভারলোড করে দিতে পারি। দেখেছ?
নিকি আর ত্রিপি কিছু বলল না। ফ্লিকাস বলল, চল আমরা বাইরে যাই। এই বন্ধ ঘর আর ভালো লাগছে না। আমি মানুষ নই, কিন্তু আমার অনেক কিছু মানুষের মতো। যখন আমরা পৃথিবীর শেষ মানুষটিকেও শেষ করে দেব তখন। আমাদের আর এই হাস্যকর মানুষের রূপ নিয়ে থাকতে হবে না। মানুষের। মতো ভাবতে হবে না। মানুষের মতো কথা বলতে হবে না।
নিকি অনেকক্ষণ পর এবারে কথা বলল, তুমি মানুষ না, তুমি পঞ্চম মাত্রার রোবট। তাই না?
সেটা তুমি এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছ?
না। আমি আগেই বুঝেছি।
যথেষ্ট আগে বোঝো নি। তাহলে এতো সহজে আমার পরিকল্পনার অংশ হতে না। যাই হোক বাইরে চল। ভেতরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে নিকি পকেটে হাত দিয়ে পকেটের টাইমারটিতে সময় সেট করে নিল। বিস্ফোরকটি এখন মিনিট পনেরোর মাঝে বিস্ফোরিত হবে। এই বিস্ফোরকটি এখন ফ্লিকাসের শরীরের কোথাও লাগিয়ে দিতে হবে। ফ্লিকাস ঢিলেঢালা একটি পোশাক পরেছে, সেখানে অনেকগুলো পকেট, কোনো একটি পকেটে রেখে দিতে পারলেই আর কোনো চিন্তা নেই। কাজটি সহজ নয় কিন্তু নিকি চেষ্টা করবে।
প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সে হঠাৎ ইচ্ছে করে পা পিছলে পড়ে গেল, সিঁড়ি দিয়ে যখন নীচে পড়ে যাচ্ছে তখন ফ্লিকাস তাকে থামাল। নিচু হয়ে তাকে ধরে যখন টেনে সোজা করছিল তখন সে হাত-পা ছুড়ে মুক্ত হবার অভিনয় করার সময় হাঁটুর কাছে পকেটে বিস্ফোরকটি রেখে দিল। নিকি ভেবেছিল ফ্লিকাস বুঝে ফেলবে কিন্তু ফ্লিকাস বুঝতে পারল না।