বাইভার্বালে করে তাদের দীর্ঘসময় যেতে হল। শেষ পর্যন্ত তারা একটা পাহাড়ের কাছাকাছি হাজির হল। বাইভার্বাল বেশ কিছু ঘোরাপথে উড়ে উপরে একটা পাথুরে জায়গায় হাজির হয় ফ্লিকাস বাইভার্বাল থেকে নেমে তার মনিটর পরীক্ষা করে হেঁটে হেঁটে একটা খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে। সে নিচু হয়ে জায়গাটা পরীক্ষা করে, তারপর মাথা নেড়ে বলল, এটাই সেই জায়গা।
নিকি অবাক হয়ে বলল, কোথায়? কিছু তো নাই।
এখানে একটি গোপন দরজা আছে, এটি খুলতে হবে।
কোথায় গোপন দরজা?
এসো খুঁজে দেখি।
সবাই মিলে খুঁজতে খুঁজতে সত্যি তারা একটি ধাতব রিং খুঁজে পেয়ে যায়। উপর থেকে ধুলোবালি সরিয়ে রিংটা ধরে টান দিতেই ঘরঘর শব্দ করে চৌকোণা একটা জায়গা খুলে গেল। সেখানে আবছা অন্ধকার, দেখা যাচ্ছে। একটা সিঁড়ি নীচে নেমে গেছে।
ফ্লিকাস বলল, আমাদের এখন নিচে নামতে হবে। সাবধানে নেমো সবাই। আগে আমি নেমে যাই।
ফ্লিকাসের পিছু পিছু নিকি, নিকির পেছনে ত্রিপি আর সবার শেষে ক্রিনিটি সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। সিঁড়িটা ঘুরে ঘুরে অনেক নীচে নেমে গেছে। আস্তে আস্তে জায়গাটা অন্ধকার এবং শীতল হয়ে আসে। যখন মনে হচ্ছিল নীচে নামা বুঝি কখনো শেষ হবে না তখন হঠাৎ করে তারা একটা ফাঁকা জায়গায় পৌঁছে গেল। নিচে পাথরের মেঝে এবং নিচু ছাদ। কান পেতে থাকলে একটা কম্পন অনুভব করা যায়, বোঝা যায় আশপাশে কোথাও গুমগুম করে একটি ইঞ্জিন চলছে।
ওরা কিছুক্ষণ নিঃশব্দে পঁড়িয়ে থাকে, তখন খুব ধীরে ধীরে সেখানে একটি ঘোলাটে আলো জ্বলে ওঠে। ভেতরে পাথরের কারুকাজ করা দেয়াল এবং সামনে মেঝে থেকে খানিকটা উঁচুতে একটি গোলাকার বেদী। হঠাৎ করে দেখা গেল সেখানে সাদা কাপড় পরা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সবাই প্রথমে। চমকে ওঠে তারপর বুঝতে পারে মেয়েটি সত্যি নয় একটি হলোগ্রাফিক ছবি।
মেয়েটি চারদিকে একবার তাকাল, তারপর বলল, আমাদের এই ব্যালকনিতে কিছু দর্শকের উপস্থিতি অনুভব করে আমি তাদের কিছু তথ্য দেওয়ার জন্যে উপস্থিত হয়েছি। এটি একটি অত্যন্ত গোপন স্থাপনা, এখানে কোনোভাবেই কারো উপস্থিত হওয়ার কথা নয়। এটি অত্যন্ত দুর্ভেদ্য একটি স্থাপনা। নিউক্লিয়ার বোমা দিয়েও এটা ভেদ করা সম্ভব নয়। এখানে যে মানুষদের হিমঘরে শীতল করে রাখা হয়েছে তারা ঠিক সময়মতো হিমঘর থেকে বের হয়ে পৃথিবীতে আসবেন। বাইরের কোনো মানুষ প্রাণী বা যন্ত্রের এখানে এসে সেই প্রক্রিয়াটি প্রভাবান্বিত করার কথা নয়। তারপরও যারা নিজের দায়িত্বে এখানে উপস্থিত হয়েছে আমি তাদের বক্তব্য শুনতে আগ্রহী।
ফ্লিকাস বলল, পৃথিবীতে প্রায় সব মানুষ একটা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। যে অল্প কয়জন বেঁচে আছে তাদের বড় সংখ্যক হচ্ছে শিশু। তাদের যথাযথভাবে লালন করার জন্যে আমাদের এই মুহূর্তে কিছু বড় মানুষ প্রয়োজন।
এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিস্টেম পৃথিবীর এই দুর্ভাগ্যজনিত পরিণতি সম্পর্কে অবহিত। হিমঘরের মানুষকে দ্রুত জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ফ্লিকাস জানতে চাইল, তারা কবে জেগে উঠবে? কবে বের হয়ে আসবে?
এখন থেকে তেত্রিশ দিন পর। তার পরের ব্যাচটি বাহান্ন দিন পর।
কোনোভাবেই কী জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়াটি আরেকটু ত্বরান্বিত করা। যায় না। আমাদের মানুষের খুব প্রয়োজন।
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করা সম্ভব নয়। যদি এর চাইতে তাড়াতাড়ি জাগিয়ে তুলতে হয় তাহলে সেটি ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে করতে হবে।
আমরা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে এটি করতে প্রস্তুত।
এটি করতে পারবে শুধুমাত্র সত্যিকারের মানুষ। কোনো রোবট বা কোনো যন্ত্রকে এটি করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
আমি তোমাকে আশ্বস্ত করে বলতে পারি আমাদের সাথে রোবট থাকলেও যারা মানুষ তারাই দায়িত্ব নেবে।
চমৎকার। মেয়েটি হাসি মুখে বলল, আমি এখন এখান থেকে চলে। যাচ্ছি। যে বা যারা ভেতরে যেতে চায় তাদের একে একে এখানে উপস্থিত হতে অনুরোধ করছি। বিদায়।
সাদা কাপড় পরা মেয়েটি যেভাবে এখানে হঠাৎ করে উপস্থিত হয়েছিল ঠিক সেভাবে সে অদৃশ্য হয়ে গেল।
নিকি ফ্লিকাসের দিকে তাকিয়ে বলল, ফ্লিকাস, তুমি এখন যাও।
ফ্লিকাস মাথা নাড়ল, বলল, না। তোমরা দুজন ভেতরে যাও।
নিকি অবাক হয়ে বলল, আমরা দুজন?
হ্যাঁ।
কেন?
বাইরে একজন পাহারা দেয়া দরকার।
বাইরে ক্রিনিটি পাহারা দিতে পারবে।
ফ্লিকাস কঠোর মুখে বলল, আমি কোনো রোবটকে বিশ্বাস করি না। আমি বাইরে পাহারা দিচ্ছি। তুমি আর ত্রিপি ভেতরে গিয়ে ভেতরের মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলো। মানুষগুলো জেগে উঠে আমাকে দেখে যতটুকু আনন্দ পাবে, তার চাইতে অনেক বেশি আনন্দ পাবে তোমাদের মতো দুজন ফুটফুটে শিশুকে দেখে।
নিকি অবাক হয়ে বলল, কিন্তু–কিন্তু—
কিন্তু কী?
ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে কিভাবে শীতল মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলতে হবে আমরা তার কিছুই জানি না।
ফ্লিকাস বলল, জানার প্রয়োজনও নেই। আমি কাজটি সহজ করার জন্যে কয়েকশ মাইক্রো মডিউল এনেছি। মডিউলগুলো প্রোগ্রাম করা আছে। মানুষগুলো একেকটা ক্যাপসুলের ভেতরে আছে। তোমরা এই মাইক্রো মডিউলগুলো একেকটা ক্যাপসুলের গায়ে লাগিয়ে দেবে। আর কিছু করতে হবে না?
আর কিছু করতে হবে না?
না। মাইক্রো মডিউলগুলো নিজে নিজে ক্যাপসুলগুলোকে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে জাগিয়ে তুলবে।