একটা-দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ফ্লিকাস কঠিন গলায় বলল, রোবটরা কখনো মানবশিশুকে আটকে রাখতে পারবে না। আমরা সবাই যখন একত্র হব তখন রোবটরা কখনো মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সাহস পাবে না। মানুষের বুদ্ধিমত্তা রোবটদের বুদ্ধিমত্তা থেকে অনেক বেশি, রোবটেরা কখনোই মানুষের সাথে পারবে না।
নিকি জিজ্ঞেস করল, কিন্তু যদি তারা পঞ্চম মাত্রার রোবট তৈরি করে?
পঞ্চম মাত্রার রোবট? ফ্লিকাসকে একটু চিন্তিত দেখায়, সে ভুরু কুঁচকে বলল, পঞ্চম মাত্রার রোবট তৈরি করলে আমাদের একটু সতর্ক হতে হবে, তার কারণ পঞ্চম মাত্রার রোবট মানুষ থেকে বেশি বুদ্ধিমান। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা— ফ্লিকাস কথা শেষ না করে থেমে গেল।
নিকি জিজ্ঞেস করল, তার চেয়ে বড় কথা কী?
তার চেয়ে বড় কথা পঞ্চম মাত্রার রোবটদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার একটা জগৎ আছে। তারা তাদের মতো করে ভাবে। তাদের যদি মনে হয় পৃথিবীতে মানুষের প্রয়োজন নেই, তারাই পৃথিবীকে এগিয়ে নেবে তাহলে তারা পৃথিবী থেকে সব মানুষকে সরিয়ে দিতে পারে।
নির্কির মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া পড়ল, বলল, সর্বনাশ! তাহলে কী হবে?
ফ্লিকাস সহৃদয়ভাবে হাসল, বলল, তুমি কেন ধরে নিচ্ছ পঞ্চম মাত্রার রোবট তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সেটা কী সহজ কাজ নাকি?
ত্রিপি জিজ্ঞেস করল, পঞ্চম মাত্রার রোবট দেখতে কেমন হবে?
ফ্লিকাস মাথা নাড়ল, বলল, আমি জানি না। এখন পর্যন্ত সব রোবট তৈরি হয়েছে মানুষের অনুকরণে, তাদের হাত আছে, পা আছে, মাথা আছে, চোখ আছে। যেহেতু মানুষ অনেক উন্নত তাই শরীরের ডিজাইনটা হয়েছে। মানুষের মতো। কিন্তু–
কিন্তু কী?
যখন পঞ্চম মাত্রার রোবট তৈরি হবে তখন তারা হবে মানুষ থেকেও উন্নত। তাই তখন তাদের শরীর মানুষের মতো হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের কাছে যে ডিজাইনটা বেশি কাজের মনে হবে সেভাবে তৈরি করবে। হয়তো–হয়তো–
হয়তো কী?
মানুষের মতো সামনে দুটি চোখ না থেকে সামনে-পেছনে, ডানে-বামে চোখ থাকবে। দুইপা না থেকে তিনটি কিংবা চারটি পা থাকবে–
নিকি বলল, হয়তো মাকড়শার মতো আটটি পা থাকবে–
ফ্লিকাস আবার মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, হয়তো আটটি পা থাকবে। শুড়ের মতো আঙুল, মস্তিষ্কটি হয়তো শুধু মাথায় না থেকে সারা শরীরে থাকবে। পৃথিবীর নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবার জন্যে এন্টেনা থাকবে। হয়তো অন্ধকারে দেখতে পারবে হয়তো আঙুলের ডগা দিয়ে তীব্র রেডিয়েশন বের হবে। হয়তো—
ত্রিপি বলল, থাক থাক! পঞ্চম মাত্রার রোবটের চেহারার কথা শুনেই আমার গা কেমন কেমন করছে।
ফ্লিকাস বলল, ঠিকই বলেছ। শুধু শুধু পঞ্চম মাত্রার রোবটের চেহারা কল্পনা করে লাভ নেই। পঞ্চম মাত্রার রোবট খুব সোজা ব্যাপার নয়। সত্যিই যদি তৈরি হয় তখন দুশ্চিন্তা করা যাবে।
নিকি বলল, আমরা এতো দুশ্চিন্তা করতে পারব না। যদি দুশ্চিন্তা করতে হয় সেটা করবে তুমি।
ফ্লিকাস হাসার ভঙ্গি করে বলল, ঠিক আছে। তোমাকে আর কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। সব দুশ্চিন্তা করব আমি।
১১. ফ্লিকাস নিকি আর ত্রিপিকে ঘুম থেকে তুলল
ফ্লিকাস নিকি আর ত্রিপিকে ঘুম থেকে তুলল, উত্তেজিত গলায় বলল, এক্ষুণি উঠে যাও। সাংঘাতিক একটা ব্যাপার ঘটেছে।
কী ব্যাপার? নিকি চোখ কচলে বলল, আরো মানুষ চলে এসেছে?
না। তার থেকেও সাংঘাতিক ব্যাপার।
নিকি আর ত্রিপি তাদের বিছানায় উঠে বসল, কী সাংঘাতিক ব্যাপার?
বলছি, শোনো। ফ্লিকাস একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, তোমরা তো জান আমি পৃথিবীর সব মানুষকে একত্র করার চেষ্টা করছি। সে জন্যে আমি সারাক্ষণ নেটওয়ার্ক বলো, ডাটাবেস বলো, অর্কাইত বলো সবকিছু ঘেঁটে ঘেঁটে দেখছি। ঘাটতে ঘাটতে আমি কী পেয়েছি জানো?
কী?
তোমরা শুনলে বিশ্বাস করবে না।
নিকি আর ত্রিপি উত্তেজিত মুখে বলল, আমাদের বলো দেখি বিশ্বাস করি কী না!
মানুষের খনি!
মানুষের খনি?
হ্যাঁ।
মানুষের খনি কেমন করে হয়?
ফ্লিকাস চোখ বড় বড় করে বলল, পৃথিবীর মানুষ অসম্ভব বুদ্ধিমান। এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে সেটা তারা অনুমান করেছিল। তাই তারা মাটির নীচে দুর্ভেদ্য একটা গহ্বরের মাঝে হিমঘরে অনেক মানুষকে শীতল করে রেখে দিয়েছে। যদি কখনো এরকম হয় যে পৃথিবীর সব মানুষ মরে গেছে তাহলে তাদের বাঁচিয়ে তোলা হবে।
সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি। ফ্লিকাস সুন্দর করে হাসল।
অমিরা এখন এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে তুলব?
হ্যাঁ।
ত্রিপি ভয়ে ভয়ে বলল, তারা অন্যদের মতো মরে যাবে না তো?
ফ্লিকাস মাথা নাড়ল, না, মারা যাবে না। যে ভাইরাসের কারণে এটা ঘটেছে সেটা শেষ হয়ে গেছে। আর আসতে পারবে না। আমি খোঁজ নিয়েছি।
নিকি চোখ বড় বড় করে বলল, তাহলে আমরা একসাথে অনেক মানুষ পাব?
হ্যাঁ পাব?
সব কী বড় মানুষ?
না। তোমাদের মতো ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও আছে।
সত্যি? নিকি আনন্দে চিৎকার করে উঠল, সত্যি?
হুঁ, সত্যি।
আমরা কখন তাদের জাগিয়ে তুলব?
ফ্লিকাস বলল, আমার আর দেরি করার ইচ্ছে করছে না। আমরা এক্ষুণি যাব, এক্ষুণি জাগিয়ে তুলতে শুরু করব।
ত্রিপি হাত তালি দিয়ে বলল, কী মজা! কী মজা!
কিছুক্ষণের ভেতর তারা রওনা দিয়ে দেয়। ফ্লিকাস নিকি আর ত্রিপিকে তার নিজের বাইভার্বালে তুলে নিতে চাইছিল কিন্তু ক্রিনিটি তাদের আলাদা যেতে দিল না। ফ্লিকার প্রথমে একটু আপত্তি করতে চাইছিল তৃতীয় মাত্রার একটি রোবট দুজন মানবশিশুর দায়িত্ব নিচ্ছে সেটা সে ঠিক মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু নিকি আর ত্রিপি তাকে আশ্বস্ত করল, ক্রিনিটি তৃতীয় মাত্রার একটি রোবট হতে পারে কিন্তু তাদের কাছে ক্রিনিটি একটা আপনজনের মতো।