সত্যি?
হ্যাঁ। সে জন্যে আমি সবসময়ই জানতাম আমার অন্য মানুষের সাথে দেখা হবে। তাদের সাথে প্রথম দেখা হলে আমি তাদেরকে কী বলব সেটি অনেকবার মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম।
যখন আমার সাথে দেখা হয়েছিল তখন কী তুমি সেটি বলেছিলে?
নিকি মাথা নাড়ল। বলল, না। তোমার সাথে যখন আমার দেখা হয়েছে তখন আমার সবকিছু উলট-পালট হয়ে গিয়েছিল আমি কী বলব কী করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
ত্রিপি বলল, পৃথিবীতে কী আরো মানুষ আছে?
জানি না। মনে হয় আছে।
তাদের সবাইকে কী আমরা খুঁজে বের করতে পারব।
নিকি গম্ভীর সুরে বলল, মনে হয় পারব।
রোবটরা আমাদের করতে দেবে?
নিকিকে খানিকটা দুশ্চিন্তিত দেখায়। সে মাথা চুলকে বলল, সেটিই হচ্ছে মুশকিল। আমি ভেবেছিলাম রোবটরা আমাদের সাহায্য করে। এখন দেখি ঠিক তার উল্টো—রোবটরা আমাদেরকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।
ত্রিপি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, যদি আমরা একজন বড় মানুষ পেতাম তাহলে ভালো হতো তাই না?
হ্যাঁ।
তাহলে বড় মানুষটি সবকিছু আরো ভালো করে করতে পারত। আমরা তো কখনো মানুষ দেখি নি, তারা কী করে কিভাবে চিন্তা করে কিভাবে কাজ করে কিছু জানি না।
ঠিকই বলেছ।
একটু পর দেখা গেল বিবর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি জনপদের একপ্রান্তে একটি গাছের গুড়িতে দুটি শিশু বসে আছে। তারা শিশুর মতো বড় হয় নি, তারা খুব আশ্চর্য একটি জগতের মানুষ। তাদের ভবিষ্যতে কী আছে তারা জানে না তাদের ভবিষ্যৎ আছে কী না সেটিও তারা জানে না।
অন্ধকার হয়ে যাবার পর বাইভার্বালে করে তারা আবার রওনা দেয়। ভোররাতে তারা বিশ্রাম নিতে থামে। পরদিন সূর্য ওঠার পর আবার তারা রওনা দেয়। বিস্তীর্ণ জনপদ পার হয়ে বিশাল জলাভূমির উপর দিয়ে উড়ে উড়ে শেষ পর্যন্ত তারা তাদের এলাকায় ফিরে আসে। বাইভার্বালটি যখন তাদের পরিচিত খোলা জায়গাটিতে থামল তখন নিকি বাইভার্বাল থেকে লাফ দিয়ে নেমে ত্রিপির দিকে তাকিয়ে বলল, আমি এখানে থাকি।
ত্রিপি চারদিক দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক ভাবে মাথা নাড়ে। দীর্ঘ সতি বছর সে যেখানে বড় হয়েছে তার সাথে এই এলাকার কোনো মিল নেই। তার জীবনের বেশির ভাগ কেটেছে বদ্ধ চার দেয়ালের ভেতর। যখন বাইরে গিয়েছে। সেটাও ছিল দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এখানে চারদিক খোলামেলা। ত্রিপি সাবধানে বাইভার্বাল থেকে নেমে আসে। নিকি তার হাত ধরে টেনে নিয়ে পেছনের গাছগুলোকে দেখিয়ে বলল, ঐ যে বনটা দেখছ সেখানে আমার বন্ধুরা থাকে।
তোমার পশুপাখি বন্ধু?
হ্যাঁ।
তারা এখন কোথায়?
বনের ভেতর কোথাও আছে। আমরা গিয়ে খুঁজে বের করব।
ক্রিভনটি বলল, আমরা অনেক দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। তোমাদের খানিকটা বিশ্রাম নেয়া দরকার।
নিকি বলল, আমরা মোটেও ক্লান্ত নই নিকি।
আমি জানি তোমরা ক্লান্ত নও। কিন্তু আমি বহুদিন থেকে তোমাকে বড় করেছি তোমার শরীরের জৈব অংশটুকু সম্পর্কে আমি তোমার চাইতে বেশি জানি।
নিকি বলল, তুমি কী বলতে চাইছ ক্রিনিটি?।
আমি বলছি যে, তোমরা দুজন একটু বিশ্রাম নাও, সম্ভব হলে খানিকক্ষণ। ঘুমিয়ে নাও। ঘুম থেকে উঠে উষ্ণ পানিতে স্নান করে নতুন পরিচ্ছন্ন কাপড় পর। খাবার টেবিলে বসে গরম ধূমায়িত কিছু খাবার খাও তাহলে তোমাদের মনে হবে তোমরা একধরনের নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছ।
নিকি কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, ঠিক আছে ক্রিনিটি।
ক্রিনিটি বলল, তা ছাড়া তুমি এখন একা নও। তোমার সাথে আছে ত্রিপি। তুমি একভাবে বড় হয়েছ, ত্রিপি সম্পূর্ণ অন্যভাবে বড় হয়েছে। তুমি যদি জোর করে তোমার জীবনযাত্রার পদ্ধতি ত্রিপির ওপর চাপিয়ে দাও সেটি তার পছন্দ নাও হতে পারে।
তাহলে আমি কী করব?
যেটিই করতে চাও ধীরে ধীরে করো। নতুন পরিবেশে ত্রিপিকে মানিয়ে নিতে দাও।
নিকি কিছুক্ষণ চিন্তা করল তারপর বলল, ঠিক আছে ক্রিনিটি। আমার। মনে হয় তুমি ঠিকই বলেছ।
ক্রিনিটি বলল, আমি মানুষ না হতে পারি, কিন্তু মানুষ কিভাবে চিন্তা করে আমি সেটি অনেক সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেছি।
শেষ পর্যন্ত নিকি যখন ত্রিপিকে নিয়ে বের হতে গিয়েছে তখন ক্রিনিটি তাদের দুজনকে থামাল। বলল, তোমরা একটু দাঁড়াও।
নিকি জানতে চাইল, কেন ক্রিনিটি?
নিকি, তোমার গলায় একটি মাদুলি আছে, তাই না?
হ্যাঁ।
কেন আছে বল দেখি?
এটি আমার জন্যে সৌভাগ্য বয়ে আনে। আমাকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে।
ক্রিনিটি বলল, ঠিক বলেছ। এখন যেহেতু ত্রিপিও তোমার সাথে থাকবে তার সৌভাগ্যের জন্যে তাকেও একটি মাদুলি দেওয়া দরকার। তাকেও যেন বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে।
ত্রিপি একটু অবাক হয়ে বলল, প্রাচীনকালে মানুষ এগুলো বিশ্বাস করতো, তাদের শরীরে জাদুমন্ত্র দেওয়া মাদুলি থাকতো! তুমিও কী জাদুমন্ত্র জান ক্রিনিটি?
না। আমি জাদুমন্ত্র জানি না। ক্রিনিটি একটি মাদুলি ত্রিপির গলায় ঝুলিয়ে দিতে দিতে বলল, এই মাদুলিটির মাঝে কোনো জাদুমন্ত্র নেই। কিন্তু কিছু জটিল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি আছে। পথেঘাটে তোমাদের কোনো বিপদ আপদ হলে আমি খবর পাব। তোমাদের রক্ষা করার জন্যে ব্যবস্থা নিতে পারব।
নিকি বলল, সেটিই হচ্ছে জাদুমন্ত্র।
ক্রিনিটি বলল, তুমি ইচ্ছে করলে বিষয়টিকে সেভাবে দেখতে পার। তারপর সে ত্রিপিকে লক্ষ করে বলল, ত্রিপি, তুমি এই মাদুলিটি গলা থেকে খুলবে না।