কিন্তু কী?
কেমন করে যাব? যদি যেতে না পারি, যদি ধরে ফেলে—
সেটি নিয়ে তুমি কোনো চিন্তা করো না। চিন্তা করো না।
কেন? সবসময় সবকিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয়। ভাবতে হয়। একটি সিদ্ধান্ত নেবার আগে তার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিগুলো বিবেচনা করতে হয়।
না। নিকি মাথা নেড়ে বলল, করতে হয় না। যেটি করার দরকার সেটি করে ফেলতে হয়। যদি খুব বেশি চিন্তা কর তাহলে তুমি কিছুই করতে পারবে না।
আর যদি বিপদ হয়?
নিকি মুখ শক্ত করে বলল, হবে না।
যদি হয়?
যদি হয় তাহলে ক্রিনিটি আমাদের উদ্ধার করবে।
ক্রিনিটি?
হ্যাঁ, ক্রিনিটি। ক্রিনিটি আমাকে খুব ভালোবাসে। সে যেভাবে সম্ভব সেভাবে আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে।
মেয়েটি কিছুক্ষণ নিকির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, রোবটরা ভালোবাসতে পারে না।
কিন্তু ক্রিনিটি পারে।
কেমন করে পারে?
আমি ক্রিনিটিকে ভালোবাসি তাই ক্রিনিটিও আমাকে ভালোবাসে।
মেয়েটি একটু অবাক হয়ে নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল, আমাকে তুমি কোনদিন নিয়ে যাবে?
নিকি অবাক হয়ে বলল, কোনদিন মানে? তোমাকে এক্ষুণি নিয়ে যাব।
মেয়েটা আরো বেশি অবাক হলো, বলল, এক্ষুণি?
হ্যাঁ।
কেমন করে? আমি কেমন করে বের হব? দরজায় রোবট পাহারা দিচ্ছে, সিঁড়িতে ইলেকট্রনিক সিকিউরিটি। গেটে বড় বড় তালা—
নিকি হাসল, বলল, কে বলেছে তুমি দরজা দিয়ে বের হবে?
তাহলে কোনদিক দিয়ে বের হব?
এই জানালা দিয়ে।
জানালা দিয়ে? এই জানালায় এই মোটা লোহার শিক—
আমি এক্ষুণি কেটে ফেলব। আমার কাছে ইনফ্রারেড লেজার আছে। নিকি কথা বলতে বলতে তার ব্যাগ থেকে ইনফ্রারেড লেজারটা বের করে বলল, এর মাঝে নিউক্লিয়ার ব্যাটারি। যতক্ষণ ব্যাটারির চার্জ থাকে ততক্ষণ পুরু ইস্পাত কেটে ফেলা যায়।
মেয়েটি জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকাল, তারপর শুকনো মুখে বলল, আমি নিচে নামব কেমন করে? আমি তো তোমার মতো দেয়াল বেয়ে উঠতে পারি না।
নিকি বলল, সেটি নিয়ে তুমি চিন্তা কর না। তোমাকে আমার মতো দেয়াল বেয়ে নামতে হবে না। আমার কাছে কার্বন ফাইবার আছে!
সেটি কী?
আমি তোমাকে দেখাব। এখন তুমি সামনে থেকে সরে যাও। আমি আগে কখনো এই ইনফ্রারেড লেজার ব্যবহার করি নি, উল্টাপাল্টা কিছু না হয়ে যায়।
মেয়েটি সামনে থেকে সরে গেল, নিকি তখন জানালার শিকটাকে স্পর্শ। করে লেজারের বোতামে চাপ দিল। সে একটি সূক্ষ্ম কম্পন অনুভব করে আর জানালার শিকটা দেখতে দেখতে কেটে যায়। যেখানে কাটা হয়েছে সেই অংশটা প্রচণ্ড উত্তাপে টকটকে লাল হয়ে রইল কিছুক্ষণ।
নিকি বলল, এখন উপরে কেটে ফেলব তাহলেই তুমি বের হয়ে আসতে পারবে।
নিকি এক হাতে লোহার রডটা ধরে রেখে অন্য হাতে উপরের অংশটা কেটে ফেলে, তারপর ভারি রড়টা কার্নিশে নামিয়ে রেখে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। মেয়েটি একটু বিস্ময় নিয়ে নিকির দিকে তাকিয়েছিল, আস্তে আস্তে বলল, সাত বছরের বাচ্চা হিসেবে তুমি অনেক কিছু করতে পার।
নিকি বলল, ক্রিনিটি বলেছে আমার মানসিক বয়স নাকি অনেক বেশি।
মেয়েটি বলল, আমার বয়স এগারো কিন্তু আমি কিছুই পারি না।
তুমি যখন আমাদের সাথে যাবে তখন তুমিও সবকিছু শিখে যাবে।
মেয়েটি জানালার কাটা অংশটি দিয়ে নিচে তাকাল, বলল, আমি কিছুতেই এদিক দিয়ে নামতে পারব না।
নিকি বলল, তোমাকে পারতে হবে না, তুমি চুপচাপ বসে থাকবে। আমি তোমাকে নামিয়ে দেব।
আমার ভয় করে। মেয়েটি ফ্যাকাশে মুখে বলল, আমার খুব ভয়। করে।
নিকি বলল, তোমার কোনো ভয় নেই।
আছে। আমার খুব ভয় করে, আমি বের হতে পারব না। কিছুতেই পারব।
নিকি একটু অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর নিচু গলায় বলল, তুমি একটি জিনিস জান?
কী?
আমি এখনও তোমার নাম জানি না।
নাম? আমার?
হ্যাঁ।
রোবটেরা আমাকে মানবশিশু ডাকে।
কিন্তু মানবশিশু তো কারো নাম হতে পারে না। তোমার সত্যি নামী কী?
তথ্যকেন্দ্রে দেখেছি আমার নাম ত্রিপি। কিন্তু কেউ কখনো আমাকে এই নামে ডাকে নি।
আমি ডাকব। নিকি ডাকল, ত্রিপি।
ত্রিপি একটু অবাক হয়ে নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। নিকি তখন আবার ডাকল, ত্রিপি।
ত্রিপি এবারও কিছু বলল না, নিকির দিকে তাকিয়ে রইল।
নিকি হেসে বলল, ত্রিপি, কেউ ডাকলে উত্তর দিতে হয়। তুমি উত্তর দাও।
ত্রিপি থতমত খেয়ে বলল, ও আচ্ছা। হ্যাঁ।
নিকি বলল, ত্রিপি, তুমি বলছ তোমার ভয় করছে। কিন্তু আমি বলছি তোমার কোনো ভয় নেই।
ত্রিপি নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। নিকি তার ব্যাগ থেকে কার্বন ফাইবারের রিলটা বের করে। একটি স্ট্র্যাপ দিয়ে সেটা ত্রিপির শরীরের সাথে বেঁধে নেয়, তারপর কার্বন ফাইবারের হুঁকটা স্ট্র্যাপের সাথে লাগিয়ে ত্রিপিকে বলল, এখন তুমি নাম।
নামব? আমি?
হ্যাঁ। আমি উপর থেকে তোমাকে আস্তে আস্তে নামাব।
সর্বনাশ! আমার ভয় করে।
ভয়ের কিছু নেই। আর যদি ভয় করে তাহলে তুমি চোখ বন্ধ করে থাক। যখন তোমার পায়ের নীচে তুমি মাটি পাবে তখন চোখ খুলবে! ঠিক আছে?
ত্রিপি রাজি হলো। নিকি কার্বন ফাইবারটা একটি রড়ে কয়েকবার পেঁচিয়ে নেয় তারপর আস্তে আস্তে ত্রিপিকে নীচে নামিয়ে আনে। যখন ত্রিপি শক্ত মাটিতে সোজা হয়ে দাঁড়াল, তখন সে কার্বন ফাইবারের রিলটা গুটিয়ে নেয়। তারপর এদিক-সেদিক তাকিয়ে সাবধানে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। ত্রিপি নিঃশ্বাস বন্ধ করে উপরের দিকে তাকিয়েছিল তার চারপাশে যা ঘটছে সে এখনো সেটি বিশ্বাস করতে পারছে না।