নিকি মাথা নেড়ে জানাল যে সে বুঝেছে। ক্রিনিটি আবার তার ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে ছোট বোতামের মতো একটি যন্ত্র বের করে আনল, নিকিকে দেখিয়ে বলল, এটি হচ্ছে একটি কীপার। কেউ হারিয়ে গেলে এর সুইচটা অন করে দেয় তখন এর ভেতর থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি শক্তিশালী সিগন্যাল বের হয়। তবে এখন আমরা গোপনে কাজ করছি এখন আমাদের এটার প্রয়োজন নেই। ভুলেও এর সুইচটা অন করবে না তাহলে সবাই বুঝে যাবে আমরা কোথায় আছি।
নিকি বলল, ঠিক আছে।
ক্রিনিটি আবার তার ব্যাগে হাত দিয়ে একটি ছোট সিলিন্ডারের মতো টিউব বের করল। বলল, এর ভেতরে রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার কার্বন ফাইবার। অসম্ভব শক্ত ফাইবার দুই থেকে তিনশো কেজি কিছু একটি ঝোলালেও এটি ছিড়বে না। এক মাথায় রয়েছে ইলেকট্রোম্যাগনেট, স্টিল যা লোহার সাথে আটকে দেওয়া যায়। আমি তোমাকে দেখাচ্ছি কিন্তু তুমি এখনও এটি ব্যবহার করার জন্যে প্রস্তুত হও নি। বুঝেছ?
নিকি বলল, বুঝেছি।
ক্রিনিটি আবার তার ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে ছোট একটি প্যাকেট বের করল, নিকিকে দেখিয়ে বলল, এটি কী তুমি কী বলতে পারবে?
নিকি ব্যাগটা পরীক্ষা করে বলল, এর ভেতরে খুব ছোট ছোট অনেকগুলো বল। মনে হয় একটি বল খেলে পেট ভরে পানি খাওয়া হয়ে যাবে।
কাছাকাছি বলেছ। এর মাঝে আসলে বাতাস ভরা আছে। মুখে দিয়ে দাতে কামড় দিয়ে এটি ভাঙলে ভেতর থেকে নিঃশ্বাস নেবার মতো বাতাস বের হয়ে আসে। আটাত্তর ভাগ নাইট্রোজেন বাইশ ভাগ অক্সিজেন। পানিতে ড়ুবে থাকতে হলে এটি কাজে লাগে। এটিও ব্যবহার করার আগে একটু শিখতে হয়। পানির নীচে নিঃশ্বাস নিতে হলে নাকটা বন্ধ রাখতে হয়।
নিকির হাত থেকে ছোট প্যাকেটটা নিয়ে সামনে সাজিয়ে রেখে ক্রিনিটি আবার তার ব্যাগে হাত ঢোকাল, এবার তার হাতে উঠে এলো লাল রঙের চতুষ্কোণ একটি ছোট যন্ত্র। তার একপাশে একটি ডায়াল। ক্রিনিটি চতুষ্কোণ বাক্সটা হাত দিয়ে ধরে বলল, এটি তোমাকে কখনোই স্পর্শ করতে দেওয়া হবে না। কাজেই এটি আমি আগেই সরিয়ে রাখি।
নিকি বলল, ঠিক আছে। কিন্তু তুমি আমাকে আগে বল এটি কী?
ক্রিনিটি বলল, এটি হচ্ছে ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরক। সাথে একটি টাইমার লাগানো আছে। কেউ ইচ্ছে করলে টাইমারটি একটি সময়ের জন্যে সেট করে এই বিস্ফোরকটি কোনো জায়গায় রেখে আসতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পরে বিস্ফোরকটিতে বিস্ফোরণ ঘটবে। ক্রিনিটি বিস্ফোরকটি সাবধানে সামনে রেখে বলল, এটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরক, তুমি কখনোই এটিতে হাত দেবে না।
ক্রিনিটি কিছু একটি বের করার জন্যে আবার ব্যাগে হাত দিল, তখন নিকি বলল, ক্রিনিটি তুমি জীবন রক্ষা করার এই ব্যাগটা থেকে অনেক কিছু বের করে আমাকে দেখিয়েছ কিন্তু আমাকে বলছ কোনোটাই আমি ব্যবহার করতে পারব না।
হ্যাঁ। বেশিরভাগ।
তাহলে কেন আমাকে দেখাচ্ছ?
তোমার যেন একটি ধারণা থাকে সে জন্যে। মানুষ অসম্ভব বুদ্ধিমান। তারা কখন কোনো তথ্য কিভাবে কাজে লাগাবে সেটি আগে থেকে আমি অনুমান করতে পারি না।
ক্রিনিটি আবার ব্যাগের ভেতর থেকে একটি ছোট কৌটা বের করে কথা। বলতে শুরু করে। নিকি অবাক হয়ে আবিষ্কার করল, ছোট একটি ব্যাগ যেটি কোমরে বেঁধে রাখা যায় সেখানে নানাধরনের ওষুধ রয়েছে, যোগাযোগ করার যন্ত্র আছে, আগুন জ্বালানোর রাসায়নিক আছে, উজ্জ্বল আলো জ্বালানোর টর্চ লাইট আছে, প্রচণ্ড শীতে শরীর গরম রাখার পাতলা ফিনফিনে কম্বল আছে, আগুনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাবার আগে শরীরে লাগানোর তাপ নিরোধক মলম আছে দূরে দেখার জন্যে শক্তিশালী বাইনোকুলার আছে, অন্ধকারে দেখার জন্যে গগলস আছে, নিজের অবস্থান জানার জন্যে রিসিভার আছে, নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবার জন্যে যোগাযোগ মডিউল আছে—এককথায় বেঁচে থাকার জন্যে যা যা প্রয়োজন তার সবই এখানে আছে।
সবকিছু দেখিয়ে ক্রিনিটি যখন আবার সবকিছু ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে রাখছিল তখন নিকি বলল, ক্রিনিটি।
বল।
আমি কখন এই ব্যাগটি ব্যবহার করতে পারব?
এই ব্যাগের নির্দেশিকাতে লেখা আছে আঠারো বছর বয়সের আগে এটি ব্যবহার করার অনুমতি নেই।
কিন্তু আমার বয়স মাত্র সাত।
কিন্তু তুমি যেহেতু একা একা আছ, তোমাকে অনেক কিছু নিজে নিজে করতে হয়। তুমি অনেক কিছু জান যেটি তোমার বয়সী পৃথিবীর বাচ্চা জানত না। তোমার মানসিক বয়স আসলে সাত থেকে অনেক বেশি।
নিকি বড় বড় চোখ করে বলল, তাহলে আমি কি এই ব্যাগটা ব্যবহার করতে পারব?
ক্রিনিটি বলল, আমি জেনে শুনে তোমাকে এটি ব্যবহার করতে দিতে পারি না। কারণ এর মাঝে এমন সব জিনিসপত্র আছে যেটি ব্যবহার করতে গিয়ে একটি ভুল করে ফেললে তুমি এবং তোমার আশপাশে অনেক কিছু ভস্মীভূত হয়ে যাবে।
কিন্তু তুমি যদি না জান?
তখন আমার কিছু করার নেই।
কাজেই পরের দিন নিকি ক্রিনিটিকে না জানিয়ে জীবনরক্ষাকারী ব্যাগটি নিয়ে হ্রদের তীরে হাজির হলো। হ্রদের পানিতে ড়ুব দিয়ে সে দেয়ালের ফুটো দিয়ে অন্যপাশে হাজির হয়। গতকাল যেখানে মেয়েটির সাথে দেখা হয়েছিল ঠিক সেখানে বসে সে অপেক্ষা করতে থাকে। মেয়েটি নিশ্চয়ই দেখা করতে আসবে।
কিন্তু মেয়েটি দেখা করতে এলো না। প্রথমে নিকির সেটি নিয়ে একধরনের ছেলেমানুষী রাগ হলো, তারপর হলো অভিমান। যখন আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসতে থাকে তখন তার ভেতরে একধরনের দুশ্চিন্তা দানা বাঁধে। নিকি তখন তার ব্যাগ থেকে বাইনোকুলারটা বের করে দূরের বিল্ডিংটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে, সে মোটেও ভাবে নি এতো বড় একটি বিল্ডিংএর ভেতর মেয়েটিকে দেখতে পাবে কিন্তু সে চার তলার একটি জানালায় মেয়েটিকে দেখতে পেল। মেয়েটি জানালার শিক ধরে এদিকে তাকিয়ে আছে। নিকি জানে এতা দূর থেকে মেয়েটি দেখতে পাচ্ছে না কিন্তু তবুও তার মনে হলো মেয়েটি বুঝি সোজাসুজি তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির মুখে এমন একটি বিষাদের ছায়া যে সেটি দেখে নিকি গভীর একধরনের দুঃখ অনুভব করল। তার চোখে পানি চলে আসে, সে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে ফিসফিস করে বলল, তুমি মন খারাপ করো না, আমি এসে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাব।