ক্রিনিটি বাইভার্বালটা মাটি থেকে একটু উপরে তুলে সেটিকে উড়িয়ে নিতে থাকে। নিকি জিজ্ঞেস করল, আমরা এখন কোথায় যাব ক্রিনিটি।
প্রথমে এই শহর থেক বেরিয়ে যাব।
তারপর?
তারপর যাব ইম্পানা নামে নগরে।
সেখানে কী আছে?
শুনেছি সেখানে একজন মানবশিশু আছে।
নিকি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ক্ৰিনিটির দিকে তাকাল। বলল, মানবশিশু? আমার মতো?
হ্যাঁ, তোমার মতো।
তার সাথে দেখা হলে আমি কী বলব ক্রিনিটি?
সেটি নিয়ে এই মুহূর্তে তোমার চিন্তা করতে হবে না। তুমি বরং এখন বাক্সটার ভেতর ঢুকে যাও। আমি চাই না আর কোনো রোবট তোমাকে দেখুক।
ঠিক আছে ক্রিনিটি।
নিকি চলন্ত বাইভার্বালেই গুড়ি মেরে পেছনে গিয়ে বাক্সটার ভেতর ঢুকে গেল।
গভীর রাতে একটি হ্রদের পাশে ক্রিনিটি তার বাইভার্বালটি নামিয়ে আনে। খাবারের কৌটা খুলে কিছু খাবার বের করে সেগুলো একটু গরম করে সে নিকির কাছে নিয়ে যায়। বাইভার্বালের পেছনের বাক্সটি খুলে ক্রিনিটি আবিষ্কার করল নিকি শুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। ক্রিনিটি নীচু গলায় তাকে ডাকল। নিকি ঘুমের মাঝে অস্পষ্ট একটি শব্দ করে পাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
ক্রিনিটি কিছুক্ষণ খাবারগুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর নিচু হয়ে নিকির গলা থেকে মাদুলিটি খুলে নিয়ে বাইভার্বালের মেঝেতে বসে পড়ে। মাদুলির ভেতর থেকে ছোট ক্রিস্টালটা বের করে সে ক্রিস্টাল রিডারে ঢুকিয়ে একটি মাইক্রোফোন টেনে নেয়। রোবটের একঘেয়ে যান্ত্রিক গলার স্বরে সে বলতে থাকে, রোবোনগরীর প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাটি ছিল যথেষ্ট উত্তেজনাময়। মানবশিশু নিয়ে রোবটসমাজের অস্বাভাবিক একধরনের আগ্রহ রয়েছে। নিকি যখন রোববানগরীতে হারিয়ে গিয়েছিল তখন সে দুটি চতুর্থ মাত্রার রোবটের কবলে পড়ে। তাদের একটি ছিল অপরাধকর্মে পারদর্শী। নিকির গলায় মাদুলির আকারে যে ট্রাকিওশানটি রয়েছে সেটির কারণে আমি তাকে খুঁজে পাই। তাকে রক্ষা করার জন্যে আমি কোনো ঝুঁকি নিই নি। অপরাধ করতে পারদর্শী রোবটের কপোট্রনটি সে কারণে আমার ধ্বংস করে। দিতে হয়।
আমি আশা করছি নিকির কথা এই রোবট দুটির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নি। আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি রোবটদের মাঝে নিকির উপস্থিতি মোটেও নিরাপদ নয়। ইস্পানা নগরে যে মানবশিশুটি রয়েছে বলে শুনেছি তার সাথে দেখা করার প্রক্রিয়াটি হবে অনেক বিপজ্জনক।
আজকের দিনটির মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল…
ক্রিনিটি নিখুঁতভাবে পুরো দিনলিপিটি লিপিবদ্ধ করতে থাকে।
০৭. নিকি বাইভার্বালের বাক্সের ভেতর
নিকি বাইভার্বালের বাক্সের ভেতর থেকে গুড়ি মেরে ফের হয়ে এলো। চারপাশে বড় বড় গাছ, তার মাঝে একটি হ্রদ। হ্রদের অন্যপাশে দূরে একটি উঁচু বিল্ডিং। বিল্ডিংয়ের চারপাশে উঁচু পাথরের দেওয়াল। নিকি জিজ্ঞেস করল, আমরা কোথায় এসেছি ক্রিনিটি?
ক্রিনিটি বলল, এটি ইস্পানা নগর।
যেখানে আরেকজন মানুষের বাচ্চা আছে?
হ্যাঁ।
কোথায় আছে মানুষের বাচ্চাটি?
ঐ যে বিল্ডিংটা দেখছ, সেখানে!
সত্যি?
হ্যাঁ। এই বিল্ডিংটি হচ্ছে জাতীয় গবেষণাগার।
নিকি বাইভার্বাল থেকে নেমে দূরে বিল্ডিংটির দিকে তাকিয়ে রইল। একটু পরে জিজ্ঞেস করল, আমরা বিল্ডিং-এর ভেতর কখন যাব?
ক্রিনিটি তার কপোট্রনে একধরনের চাপ অনুভব করে। সে চাপটি কমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে বলল, সেটি এখনো ঠিক করা হয় নি।
কেন ঠিক করা হয় নি।
তার কারণ রোবটরা যদি তোমাকে দেখে তাহলে তোমাকে ধরে ফেলবে। কখনো বের হতে দেবে না। তাই ভেতরে যদি যেতে হয় তাহলে আমাদের যেতে হবে গোপনে।
গোপনে?
হ্যাঁ। এমনভাবে যেতে হবে যেন কেউ জানতে না পারে।
সেটি কেমন করে হবে?
ক্রিনিটি বলল, আমি এখনও জানি না। আমাদের এই জাতীয় গবেষণাগার নিয়ে প্রথমে সব রকম তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
কেমন করে কবে?
সেটি এখনো জানি না।
যখন তুমি সবরকম তথ্য সংগ্রহ করবে, তখন তুমি কী করবে ক্রিনিটি?
আমি সেটি এখনো জানি না।
নিকি এবারে খুক খুক করে একটু হাসল। ক্রিনিটি জিজ্ঞেস করল, তুমি কেন হাসছ?
আমি তোমাকে যেটিই জিজ্ঞেস করি তুমি তার উত্তরে বল আমি সেটি এখনো জানি না?
ক্রিনিটি বলল, কোনো কিছু না জানার মাঝে হাস্যকর কিছু নেই। তোমাকে নিয়ে আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না।
আমার খুব ভেতরে গিয়ে মানুষের বাচ্চাটিকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু তোমাকে তার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।
আমার অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না।
ক্রিনিটি নিকির দিকে তাকিয়ে বলল, তার পরেও তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ আমি বাইভার্বালটিকে এই বনের মাঝে নামিয়েছি। কেউ যেন আমাদের দেখতে না পারে সেজন্যে। তুমি এই মুহূর্তে বাইরে খোলা জায়গায় বের হয়ো না।
কেন ক্রিনিটি?
খোলা জায়গায় বের হলে তোমাকে দেখে ফেলতে পারে।
ও।
বিল্ডিংটায় চারপাশে দেওয়ালের ওপরে ইলেকট্রিক তার লাগানো আছে। কেউ যেন দেওয়াল টপকাতে না পারে সেজন্যে।
নিকি মাথা নাড়ল, ধলল, ও।
আমি নিশ্চিত সেখানে লেজার লাইট আছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে। কোনোকিছু স্পর্শ করলেই এলার্ম বেজে উঠবে।
নিকি এবারে জোরে জোরে মাথা নাড়ল, রোবনগরীতে একটি বাইভার্বাল শুধুমাত্র ছোঁয়ার সাথে সাথে কী বিকট স্বরে এলার্ম বেজে উঠেছিল সেটি তার এখনো মনে আছে।
ক্রিনিটি বলল, আমি ইতোমধ্যে আমার নেটওয়ার্ক চালু করেছি। রোবটদের কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করছি। ভেতরের ম্যাপটা পেয়ে গেলে বুঝতে পারব। মানবশিশু কোথায় থাকে সেটিও অনুমান করতে হবে।