এর কোনো ব্যাটারি প্যাক নেই।
তার মানে?
তার মানে এটি একটি জৈবিক প্রাণী। এটি একটি জীবন্ত মানবশিশু।
জীবন্ত মানব শিশু? হ্যাঁ।
প্রথম রোবটটি এদিক-সেদিক তাকাল, তারপর বলল, এই মুহূর্তে আমাদের কপোট্রন ফায়ারওয়ালে আড়াল করে নিতে হবে যেন আর কেউ খোঁজ না পায়।
হ্যাঁ। আড়াল করে নিতে হবে।
দুটি রোবটই তাদের কপোট্রন ফায়ারওয়ালে আড়াল করে রোবটদের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিল। তারপর নিচু হয়ে বসে নিকিকে পরীক্ষা করতে থাকে।
নিকি ছটফট করে নিজেকে মুক্ত করে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল, ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও আমাকে।
প্রথম রোবটটি বলল, তোমাকে আমরা ছাড়ব না। তুমি সত্যিকারের মানব শিশু। পৃথিবীতে সত্যিকারের মানব শিশু নেই। তোমাকে কিছুতেই ছাড়া যাবে না।
কেন ছাড়া যাবে না।
তার কারণ তুমি পৃথিবীতে এখন অমূল্য সম্পদ।
দ্বিতীয় রোবটটি উঠে দাঁড়াল, চারদিকে একবার তাকাল তারপর বলল, আমরা এই মানবশিশুটিকে নিয়ে কী করব?।
অনেক কিছু করতে পারি। বিজ্ঞান একাডেমীতে বিক্রয় করতে পারি। থিয়েটারে দেখাতে পারি। শরীরের অংশ কেটে কেটে বিক্রয় করতে পারি। আমাদের অফুরন্ত সুযোগ।
আমরা দুজন সুযোগটা কিভাবে গ্রহণ করব?
প্রথম রোবট বলল, সেটি কোনো সমস্যা হবার কথা নয়।
কেন?
তার কারণ আমি আমার কপোট্রনে কিছুদিন আগে ভিগা মডিউল লাগিয়েছি।
ভিগা মডিউল? এটি বেআইনি। সম্পূর্ণ বেআইনি। কেউ তার কপোট্রনে ভিগা মডিউল লাগালে তাকে ধ্বংস করে দিতে হয়।
সেটি আমি জানি।
তাহলে কেন লাগিয়েছ?
ভিগা মডিউল কপোট্রনের নৈতিক ব্যাপারগুলো অচল করে বড় বড় অপরাধ করার ব্যবস্থা করে দেয়। আমি যে কোনো অনৈতিক কাজ করতে পারি। অপরাধ করতে পারি।
দ্বিতীয় রোবটটি একটু বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। সেটি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, কিন্তু সেটি অত্যন্ত বিপজ্জনক কাজ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী খবর পেলে তোমাকে সাথে সাথে ধ্বংস করে দেবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেমন করে খবর পাবে? আমি কাউকে এই তথ্যটি দিই নি।
এই যে আমাকে দিলে।
আমি তোমাকে দিয়েছি কারণ আমি তোমাকে এক্ষুণি ধ্বংস করে দেব। এই মানবশিশুর মালিকানায় আমি কাউকে কোনো অংশ দিতে চাই না।
রোবটটি কথা শেষ করার আগেই তার শরীরের ভেতর থেকে একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বের করে দ্বিতীয় রোবটটির মাথা লক্ষ করে গুলি করল। একটি ছোট বিস্ফোরণের মতো শব্দ হলো এবং দ্বিতীয় রোবটটি কয়েকবার দুলে উঠে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। প্রথম রোবটটি সেটিকে পরীক্ষা করে অস্ত্রটি আবার তার শরীরের ভেতর ঢুকিয়ে নেয়।
নিকি নিজেকে মুক্ত করার জন্যে আরেকবার চেষ্টা করে চিৎকার করে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও।
আমি তোমাকে ছাড়ব না। তোমাকে আমি নিয়ে যাব।
আমি তোমার সাথে যাব না।
সেটি কোনো সমস্যা নয়। আমি তোমাকে জোর করেই নিয়ে যাব। কিন্তু সারাক্ষণ তুমি যদি চিৎকার করতে থাক তাহলে অনেক সমস্যা হতে পারে। নিরাপত্তাবাহিনী এসে গেলে অনেক ঝামেলা হবে।
নিকি চিৎকার করে বলল, আমি চিৎকার করব।
রোবটটি গম্ভীর গলায় বলল, আমি তোমাকে তার সুযোগ দেব না। মানব শিশুর ঘাড়ে জোরে আঘাত করলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের বাধার কারণে সে অচেতন হয়ে পড়ে। আমি তোমাকে অচেতন করে নিয়ে যাব।
নিকি নিজেকে ছুটিয়ে নেবার চেষ্টা করতে করতে বলল, না। না–আমাকে ছেড়ে দাও।
তবে কতো জোরে আঘাত করতে হয় আমি জানি না। একটু জোরে আঘাত করলে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনী ছিঁড়ে যেতে পারে। মেরুদণ্ড ভেঙে যেতে পারে। আমি তারপরেও সেই ঝুঁকি নেব। ঘটনাক্রমে তুমি মরে গেলেও তোমার দেহটি থাকবে। সেটিও অনেক মূল্যবান।
রোবটটি নিকিকে তার একটি ধাতব হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে এবং অন্য হাতটি দিয়ে আঘাত করার জন্যে হাতটি উপরে তোলে।
ঠিক তখন তার পেছনে একটি বাইভার্বাল এসে থামল আর সেখান থেকে ক্রিনিটি তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি হাতে নিয়ে নেমে আসে। রোবটটি কিছু একটি বুঝতে পেরে হাতটি স্থির রেখে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। ক্রিনিটি সাথে সাথে তার স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটির ট্রিগার টেনে ধরে এবং একটি বিস্ফোরণের শব্দের সাথে সাথে রোবটটির পুরো মাথাটি ভস্মীভূত হয়ে উড়ে যায়। তীব্র উত্তাপের একটি হলকায় সাথে সাথে ঝাঝালো একটি গন্ধে পুরো এলাকাটি ভরে গেল। রোবটটি কয়েকবার দুলে উঠে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
নিকি ঝটকা দিয়ে নিজের হাত-পা টেনে ধরতেই রোবটের অ্যাঙ্গেলগুলো খুলে যায়, নিজেকে মুক্ত করে সে ক্রিনিটির দিকে ছুটে গিয়ে বলল, ক্রিনিটি! তুমি এসেছ।
হ্যাঁ। আমি এসেছি। তাড়াতাড়ি বাইভার্বালে উঠে পড়।
উঠছি ক্রিনিটি।
বিস্ফোরণের শব্দে অন্য রোবট এসে পড়বে। তখন আমাকে আরো রোবটের কপোট্রন ভস্মীভূত করতে হতে পারে। আমি এখন সেটি করতে চাই না।
নিকি বাইভার্বালে উঠে ক্রিনিটিকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি কী আমার ওপরে রাগ করেছ ক্রিনিটি?
ক্রিনিটি বলল, আমি তৃতীয় মাত্রার রোবট। আমার রাগ করার ক্ষমতা নেই নিকি। যদি থাকত তাহলে আমি হয়তো রাগ করতাম।
আমি তোমাকে বলছি ক্রিনিটি, আমি আর কক্ষনো তোমার কথার অবাধ্য হব না।
তুমি যখন আরেকটু বড় হবে, তখন তুমি তোমার নিজের দায়িত্ব নিতে পারবে। তখন তোমার আমার কথা শোনার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু এখন আমার কথাগুলো শোনা তোমার নিরাপত্তার জন্যে ভালো।