শেষ পর্যন্ত সে হাল ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি উঠে বসে এবং বাক্সের ডালাটা একটু খুলে বাইরে উঁকি দেয়। বাইরে আবছা অন্ধকার দূর থেকে রঙিন আলোর ভুটা এসে মাঝে মাঝে জায়গাটি একটু আলোকিত করে দিচ্ছে। আশপাশে কেউ নেই শুধু, বাইভার্বালগুলো সারি সারি সাজানো। নিকি কিছুক্ষণ চারদিকে লক্ষ করে, যখন সে দেখল কোথাও কেউ নেই তখন সে সাবধানে বাক্সের। ভেতর থেকে বের হয়ে এল। নিকি কিছুক্ষণ বাইভার্বালের মেঝেতে বসে রইল তারপর সে সেখান থেকে নেমে এল। কাছাকাছি অনেকগুলো বাইভার্বাল, নিকি হেঁটে হেঁটে কাছাকাছি বাইভার্বালটার কাছে দাঁড়ায়। আবছা অন্ধকারে ভালো করে দেখা যাচ্ছিল না তারপরেও বোঝা যায় তাদের বাইভার্বাল থেকে এটি অনেক বেশি সুন্দর, অনেক চকচকে। নিকি হাত দিয়ে স্পর্শ করল, রাইভার্বালের আবরণটি মসৃণ এবং শীতল। নিকি হেঁটে হেঁটে পাশের বাইভার্বালের কাছে গেল, সেটিকেও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করল হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখল। পরের বাইভার্বালটির কাছে গিয়ে সে হতবাক হয়ে যায়। এই বাইভার্বালটি অনেক বড়, পেছন দিকে বড় বড় দুটি জেট, ওপরে একটি পাখা। সামনে অনেকগুলো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। আবছা অন্ধকারে বাইভার্বালটিকে একটা বিশাল দৈত্যের মতো দেখায়। নিকি কাছে গিয়ে বাইভার্বালটিকে স্পর্শ করল।
সাথে সাথে একটি ভয়ংকর ব্যাপার ঘটে যায়। বাইভার্বালটি জীবন্ত প্রাণীর মতো ঝটকা দিয়ে নড়ে উঠে, তীব্র আলোতে চারদিকে ঝলসে উঠে আর তীক্ষ্ণ এলার্মের শব্দে চারদিক সচকিত হয়ে ওঠে। নিকি ভয় পেয়ে লাফিয়ে সরে আসে, বাইভার্বাল থেকে অনেকগুলো সার্চ লাইট তার দিকে ঘুরে আসে, তীব্র আলোতে নিকির চোখ ধাধিয়ে যায়।
নিকি দুই হাতে চোখ ঢেকে ছুটতে থাকে, কোথায় কোনদিকে যাচ্ছে সে বুঝতে পারছিল না, যতক্ষণ পর্যন্ত তীব্র এলার্ম আর আলোর ঝলকানি হতে থাকল ততক্ষণ সে ছুটতে থাকল। যখন এলার্মের শব্দ শেষ পর্যন্ত কমে এলো নিকি তখন থামল এবং তাকিয়ে দেখল সে একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। দূরে আলো জ্বলছে এবং সেই আলোতে দেখা যাচ্ছে নানা আকারের কিছু রোবট ইতস্তত হাঁটছে।
নিকি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাপাতে থাকে। সে তার এলাকায় জঙ্গলের প্রতিটি গাছকে চিনত, এখানে সে কিছুই চেনে না। ক্রিনিটি ফিরে এসে তাকে খুঁজে না পেলে কী করবে সে জানে না। ক্রিনিটি বলেছিল বাইভার্বালের বাক্সটায় শুয়ে ঘুমাতে, নিকি তার কথা শুনে নি, কাজটা মোটেও ভালো হয় নি। নিকির মনে হল সে কেঁদে ফেলবে কিন্তু সে কঁাদল না। ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে একটু শান্ত করে সে যেদিক থেকে হেঁটে এসেছে সেদিকে হেঁটে যেতে শুরু করল।
খানিকদূর হেঁটে নিকি বুঝতে পারল সে ভুল দিকে চলে এসেছে রাস্তায় অনেকগুলো দোকান এবং সেই দোকানের আশপাশে বেশ কিছু রোবট। একটি রোবট তার পাশে দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে লম্বা পা ফেলে হেঁটে হেঁটে চলে গেল। রোবটটি তাকে দেখেছে কিনা নিকি বুঝতে পারল না। নিকি আবার ঘুরে উল্টো দিকে হাঁটতে থাকে খানিকটা নির্জন জায়গা পার হয়ে সে একটি দেয়ালের সামনে এসে দাঁড়াল তখন কোনদিকে যাওয়া উচিৎ সে বুঝতে পারছিল না। যখন সে ডানে-বামে তাকাচ্ছে তখন দেখতে পেল দুটি রোবট লম্বা পা ফেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
রোবট দুটি কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে গেল, তাদের সবুজ ফটোসেলগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠল। ধাতব গলায় একটি রোবট জিজ্ঞেস করল, তুমি কে? কোথা থেকে এসেছ।
নিকি কিছু বলার আগেই অন্য রোবটটা বলল, খেলনা। নিশ্চয়ই খেলনা। দেখছ না কত ছোট?
প্রথম রোবটটা বলল, কিন্তু কোনো রেডিয়েশন নাই। বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ছাড়া কেমন করে চলছে?
খুব ভালো করে সিল করেছে। দামি খেলনা।
প্রথম রোবটটা আরো একটু কাছে এসে বলল, তুমি কে?
নিকি বলল, আমি নিকি।
রোবট দুটি কেমন যেন ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। প্রথম রোবটটা বলল, শব্দের কম্পাঙ্ক ষোল থেকে শুরু করে পঁচিশ কিলো হার্টজ পর্যন্ত গিয়েছে। অপূর্ব সুষম উপস্থাপন!
সত্যিকারের মানব শিশুর মতো।
নিশ্চয়ই অত্যন্ত দামি খেলনা। ভালো কোম্পানির তৈরি।
দ্বিতীয় রোবটটি বলল, কোন কোম্পানির তৈরি?
পিঠে কোম্পানির লোগো আছে নিশ্চয়ই।
দ্বিতীয় রোবটটি তখন খপ করে নিকিকে ধরে ফেলল, এবং সাথে সাথে ছেড়ে দিল। প্রথম রোবটটি জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?
এর ত্বকটি পলিমারের নয়। জৈবিক পদার্থ। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত। গঠন অবিশ্বাস্য।
প্রথম রোবটটি বলল, ব্যাটারিটা খুলে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা যাক।
কানের নিচে সুইচ থাকে। আগে সুইচটি অফ করে নাও।
প্রথম রোবটটা এবারে নিকিকে ধরার চেষ্টা করল, নিকি তখন ছিটকে পেছনে সরে এল। রোবটটা থমকে গিয়ে বলল, একটি খেলনার জন্য এটি যথেষ্ট ক্ষিপ্র!
নিকি একটি দৌড় দেবার চেষ্টা করল কিন্তু তার আগেই রোবটটি তাকে ধরে ফেলেছে। নিকি প্রাণপণে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে করতে বলল, ছেড়ে দাও! ছেড়ে দাও আমাকে।
রোবটটি তাকে ছাড়ল না। শক্ত করে ধরে তার কানের নিচে সুইচ খোঁজার চেষ্টা করতে থাকল।
সেখানে কিছু না পেয়ে তার পিঠে হাত বুলিয়ে ব্যাটারি প্যাক খুঁজতে লাগল। সেখানেও কিছু পেল না, তখন রোবটটি থেমে গেল। নিকির হাতটি শক্ত করে ধরে রেখে বলল, অবিশ্বাস্য। এটি অবিশ্বাস্য।
দ্বিতীয় রোবটটি বলল, কী অবিশ্বাস্য।