তুমি কেমন করে জান?
আমি জানি। কারণ আমি একটি গৃহস্থালি রোবট। আমি মানব শিশু দেখেছি।
ছিমছাম রোবটটি বলল, অন্তত লিশুয়ার একটি গান শুনে যাও।
সত্যিকারের মানব শিশু হলে নিশ্চয়ই শুনতাম।
মাত্র দশ ইউনিটে সত্যিকারের মানব শিশুর গান শোনা যায় না।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি রোবট বলল, লক্ষ ইউনিটেও তুমি সত্যিকারের মানব শিশুর গান শুনতে পারবে না। তার কারণ পৃথিবীতে কোনো মানব শিশু নেই।
জরাজীর্ণ একটি রোবট নিচু গলায় বলল, আছে।
তার কথায় অন্য রোবটেরা কোনো গুরুত্ব দিল না, শুধু ক্রিনিটি রোবটটির দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, কোথায় আছে?
জাতীয় গবেষণাগারে। একটি মেয়ে শিশু আছে।
তুমি কেমন করে জান?
জরাজীর্ণ রোবট টি আরো নীচু গলায় বলল, আমি কেমন করে জানি তুমি কেন সেটি জানতে চাইছ?
ক্রিনিটি বলল, আমি তৃতীয় মাত্রার রোবট। আমার বুদ্ধিমত্তা নিম্নস্তরের। আমি নিজে থেকে একটি তথ্যের সত্য মিথ্যা বুঝতে পারি না। আমাকে যাচাই বাছাই করতে হয়।
রোবটটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ক্রিনিটির দিকে তাকাল। ক্রিনিটি বুঝতে পারল সেটি তার কপোট্রনে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। ক্রিনিটি ফায়ারওয়ালটি উজ্জীবিত করে রেখে তাকে তার কপোট্রনের ভেতর ঢুকতে দিল না।
রোবটটি এক ধরনের যান্ত্রিক শব্দ করে বলল, যে নিজের কপোট্রনকে ফায়ারওয়াল দিয়ে ঢেকে রাখে আমি তাকে বিশ্বাস করি না। তুমি নিশ্চয়ই নিরাপত্তা বাহিনীর একজন গুপ্তচর।
ক্রিনিটি বলল, না। আমি গুপ্তচর না।
জরাজীর্ণ রোবটটি গলা উঁচিয়ে বলল, গুপ্তচর। গুপ্তচর।
হঠাৎ করে রোবটদের মাজে একটি হল্লা শুরু হয়ে গেল। মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা ছিমছাম রোবটটা হাত তুলে বলল, থাম। সবাই থাম। কী হয়েছে এখানে?
নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গুপ্তচর এখানে ঢুকে গেছে।
ক্রিনিটি বলল, না। আমি গুপ্তচর না।
তাহলে তোমার কপোট্রন ফায়ারওয়াল দিয়ে ঢেকে রেখেছ কেন?
আমি আমার তথ্য সবাইকে দিতে চাই না।
রোবটগুলো আবার হল্লা করতে শুরু করল। মঞ্চে দাঁড়ানো ছিমছাম রোবটটি বলল, চুপ কর। তোমরা সবাই চুপ কর। তা না হলে আমি জ্যামার সিগন্যাল দিয়ে সবার কপোট্রন জ্যাম করে দেব।
কিছু কিছু রোবট তখন একটু শান্ত হয়। ক্রিনিটি রোবটদের ভিড় ঠেলে বের হয়ে যেতে থাকে। জরাজীর্ণ রোবটটি বলল, তুমি কেনো চলে যাচ্ছ?
এখানে থাকার আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি সত্যিকার মানব শিশু খুঁজছি। এটি সত্যিকার মানবশিশু নয়।
তুমি সত্যিকার মানবশিশু দিয়ে কী করবে?
আমি গৃহস্থালি রোবট। আমি সবসময় সত্যিকার মানব এবং সত্যিকারে মানব শিশুর সাথে কাজ করেছি। কৃত্রিম মানব এবং কৃত্রিম মানবশিশুতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
বুঝতে পেরেছি।
কী বুঝতে পেরেছ?
তোমার কপোট্রনে মানব শিশু নিয়ে অনেক তথ্য আছে। সে জন্যে তুমি তোমার কপোট্রন ফায়ার ওয়াল দিয়ে আড়াল করে রেখেছে।
ক্রিনিটি তার কপোট্রনে প্রবল একধরনের চাপ অনুভব করে, কিন্তু জরাজীর্ণ রোবটের পরের কথায় তার চাপ দ্রুত কমে আসে। জরাজীর্ণ রোবটটি বলল, আমি এখন বুঝতে পেরেছি তুমি কেন তোমার কপোট্রনটি ফায়ারওয়াল দিয়ে আড়াল করে রেখেছ। সত্যিকারের মানবশিশুর তথ্য অনেক। ইউনিটে বিক্রি হয়। এই তথ্যগুলোকে সবাইকে জানতে দিও না।
ক্রিনিটি বলল, দেব না।
দেখে শুনে বিক্রি করো।
করব।
তৃতীয় মাত্রার রোবটটি হিসেবে তোমার বুদ্ধিমত্তা খারাপ নয়। কিছু ইউনিট পেলে কপোট্রনটি চারমাত্রায় আপগ্রেড করে নিও।
করে নেব।
ভালো কোম্পানি থেকে কপোট্রন কিনবে। কপো-কট কোম্পানিটা ভালো। রক্ষণাবেক্ষণের ভালো প্যাকেজ আছে।
ঠিক আছে।
জরাজীর্ণ রোবটটা উপদেশ দিয়ে আরো কিছু একটি বলতে যাচ্ছিল, ক্রিনিটি তার আগেই জিজ্ঞেস করল, তুমি বলেছ জাতীয় গবেষণাগারে একটি মেয়ে শিশু আছে।
হ্যাঁ বলেছি।
জাতীয় গবেষণাগারটি কোথায়?
নতুন রোবনগরী ইস্পনাতে।
সেটি কোথায়?
বেশি দূরে নয়, এখান থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে। নেটওয়ার্কে ইস্পনার অবস্থান দেয়া আছে। বাইভার্বালে কো অর্ডিনেট ঢুকিয়ে নিও।
চুকিয়ে নেব।
জরাজীর্ণ রোবটটি আরো কিছু একটি বলতে চাইছিল কিন্তু ঠিক তখন মঞ্চের কৃত্রিম মানবশিশুটি তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে হাত-পা নেড়ে তীক্ষ্ণ গলায় গান গাইতে শুরু করে। ক্রিনিটির সংগীত অনুভব করার ক্ষমতা নেই। তাই সে বুঝতে পারল না সেটি ভালো না খারাপ। সে অবশ্যি তার চেষ্টাও করল না, রোবটদের ভীড় ঠেলে বের হয়ে এলো।
রোবনগরীর রাজপথ ধরে হেঁটে হেঁটে ক্রিনিটি তার বাইভার্বালের কাছে ফিরে এলো। জায়গাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং নিরিবিলি। ক্রিনিটি এদিক সেদিক তাকিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে নিল আশে পাশে কেউ নেই তখন সে বাই ভার্বালের পেছনে গিয়ে ছোট বাক্সটি সাবধানে খুলে উঁকি দেয়, সেখানে নিকির ঘুমিয়ে থাকার কথা। কিন্তু ভেতরে কেউ নেই।
ক্রিনিটি তৃতীয় মাত্রার রোবট তার বিচলিত অথবা আতংকিত হওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই সে বিচলিত অথবা আতংকিত হল না। বাইভার্বালের সামনে লাগানো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি খুলে নিয়ে কন্ট্রোল প্যানেলের ওপরে রেখে বিড়বিড় করে বলল, এখন মনে হচ্ছে অস্ত্র নিয়ে আসার সিদ্ধান্তটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।
০৬. ক্রিনিটি চলে যাবার পর
ক্রিনিটি চলে যাবার পর নিকি ছোট খুপরির মতো বাক্সের ভেতর ঘুমানোর চেষ্টা করল। তার চোখে সহজে ঘুম নেমে এল না, যখনি তার চোখে একটু ঘুম নেমে আসছিল ঠিক তখনই কাছাকাছি রোববানগরীর কোনো এলাকা থেকে বিচিত্র একধরনের হল্লার শব্দে সে পুরোপুরি জেগে উঠতে থাকল।