বাইভার্বালটি নির্দিষ্ট জায়গায় পার্ক করে ক্রিনিটি পেছনে বাক্সের ভেতরে উঁকি দিল, নীচু গলায় ডাকল, নিকি?
নিকি ফিসফিস করে বলল, বল ক্রিনিটি।
তুমি বলেছিলে ঘুমাবে।
ঘুম পাচ্ছে না।
না পেলেও চুপ করে শুয়ে থাক। আমি শহরটা ঘুরে দেখে একটু খোঁজ। খবর নিয়ে চলে আসব।
ঠিক আছে।
ক্রিনিটি এদিক সেদিক তাকায়, তার ইলেকট্রনিক সিগন্যাল বিস্তৃত করে। আশপাশে কেউ তাদের লক্ষ করছে না বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সে হাঁটতে থাকে। দুটো রাস্তা পরেই দেখা যায় সেখানে বিশাল উত্তেজনা। উজ্জ্বল আলো এবং নানা আকারের রোবোটের অনেক ভিড়। তাদের হইচই চেঁচামেচিতে জায়গাটি মুখরিত হয়ে আছে।
ক্রিনিটি সতর্কভাবে হাঁটতে থাকে। সে টের পায় তার কপোট্রনে অনেক তথ্য জোর করে ঢোকার চেষ্টা করছে, বিষয়টিতে সে অভ্যস্ত নয় তাই ফায়ারওয়াল দিয়ে সে নিজের কপোট্রনে একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রাখে। আশপাশের ঘরগুলো থেকে তাকে রোবটগুলো ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। সংগীতের একটি দোকান থেকে একট রোবট বলল, এই যে রূপবান! আমার ঘরে এস কিনিস্কির নবম সিম্ফোনি শুনে যাও। আজকে ছাড় দিয়েছি, মাত্র আট ইউনিটে পেয়ে যাবে।
ক্রিনটি বলল, আমি তৃতীয় মাত্রার রোবট। সংগীত উপভোগ করার ক্ষমতা নেই।
তাতে কী আছে। কিনে নিয়ে যাও যখন চতুর্থ মাত্রার কপোট্রন বসবে এখন উপভোগ করবে।
চতুর্থমাত্রার কপেট্রনে আপগ্রেড করার মতো ইউনিট আমার কাছে এখন নেই।
এখন নেই তো কী হয়েছে? ভবিষ্যতে হবে।
ভবিষ্যতে যখন হবে তখন আমি বিবেচনা করব।
সংগীতের দোকানের রোবটটি হতাশার মতো শব্দ করে বলল, এই জন্যে তৃতীয় মাত্রার রোবটকে বলে জংধরা জঞ্জাল।
ক্রিনিটি তাচ্ছিল্যটুকু উপেক্ষা করে এগিয়ে যায়। সামনে একটি ঘরের বাইরে অনেক ধরনের উজ্জ্বল আলো জ্বলছে এবং নিভছে। বাইরে উজ্জ্বল রঙের দুটি রোবট একই সাথে ঠিক একইভাবে তাদের যান্ত্রিক হাত নেড়ে কথা বলছে, এসো, আনন্দের ভুবনে এসো। কপোট্রনে সঠিক তরঙ্গ উপস্থাপনের মাধ্যমে মাদকের আনন্দ। সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ বিনোদন, চলে এসো। চলে এসো সবাই।
অনেক রোবট সেখানে ঢুকছে। ক্রিনিটি কয়েক মুহূর্ত ঘরটার সামনে দাঁড়িয়ে রইল তারপর আবার হাঁটতে শুরু করল।
ভয়ংকর ধরনের কিছু অস্ত্রের দোকান, কোল্ড ফিউসান ব্যাটারির একটি দোকান, তারপর কপোট্রন আপগ্রেডের অনেকগুলো দোকান পার হয়ে ক্রিনিটি আরো এগিয়ে যায়। বাইভার্বালের বড় একটি দোকান সে ঘুরে ঘুরে দেখল, নতুন নতুন ইঞ্জিনগুলো চমকপ্রদ তার বাইভার্বালটি নিয়ে নগররক্ষী রোবটগুলো যে তামাশা করেছে তার একটি কারণ আছে।
বাইভার্বালের দোকান থেকে সে নানাধরনের বিনোদনের আরো কয়েকটি ধর পার হয়ে একটি চিড়িয়াখানা দেখতে পেল অনেক ধরনের পশু সেখানে খা আছে। এরপরে একটি আর্ট গ্যালারি এবং কয়েকটি থিয়েটার। তার ঠিক মুখোমুখি একটি বড় হলঘরের সামনে সে দাঁড়িয়ে গেল। এতক্ষণ ধরে সে যেটি খুঁজছে ঠিক সেটি পেয়ে গেছে, হলঘরের উপরে নানা রঙের আলোর ঝলকানি, সেখানে বড় বড় করে লেখা, বিস্ময়কর মানবশিশু। দর্শনীয় দশ ইউনিট।
ক্রিনিটি তার পুরানো ইউনিট পরিবর্তন করে অনেকগুলো নতুন ইউনিট পেয়ে গেল। সেখান থেকে দশ ইউনিট ব্যবহার করে সে হলঘরে ঢুকে যায়। ভেতরে আবছা অন্ধকার, অনেকগুলো রোবট সেখানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। সামনে একটি বড় স্টেজ, সেখানে চতুর্থমাত্রার ছিমছাম একটি রোবট কথা বলছে, বন্ধুগণ পৃথিবীর বিস্ময় হচ্ছে মানব শিশু। তোমাদের সামনে এখনি উপস্থিত হবে সেই বিস্ময়কর মানবশিশু, তোমরা তাকে দেখবে, তার সাথে কথা বলবে, তার গান শুনবে। মাত্র দশ ইউনিটের বিনিময়ে আর কোথাও এই বিনোদন তোমরা খুঁজে পাবে না।
একটি বিচিত্র শব্দ হতে থাকে এবং পেছনের পর্দাটি ধীরে ধীরে সরে গেল, দেখা গেল মঞ্চের মাঝখানে একটি ছোট টুল সেখানে তিন-চার বছরের ছোট একটি শিশু বসে আছে। মঞ্চে তীব্র আলো, সেই আলোতে শিশুটির বড় বড় চোখ খুলে রোবটগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
ছিমছাম রোবটটি তার গলায় কৃত্রিম একটি আনন্দের ভান ফুটিয়ে নিয়ে বলল, এই মানব শিশুটির নাম লিশুয়া তার জন্ম দক্ষিণের সমুদ্রতীরে ভাইরাসের কারণে তার পরিরারের সবাই মৃত্যুবরণ করলেও রহস্যময়ভাবে সে। বেঁচে যায়। তাই না লিশুয়া?
লিলুয়া নামের শিশুটি মাথা নাড়ল। ছিমছাম রোবটটি বলল, লিওয়া মানুষের কণ্ঠে কথা বলে শোনাবে—গান গেয়ে শোনাবে। নাচবে, খেলা দেখাবে।
উপস্থিত রোবটগুলোর একজন তখন বলল, হাসি দেখতে চাই। হাসি।
অন্য রোবটগুলো প্রতিধ্বনি করল, বলল, হাসি। হাসি।
ছিমছাম রোবটটি ইতস্তত করে বলল, লিশুয়া একা একা বড় হয়েছে, তাই সে হাসতে ভুলে গেছে। তাই না লিশুয়া?
লিশুয়া মাথা নাড়ল। ছিমছাম রোবটটি বলল, তারপরও সে তোমাদের সামনে হাসার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার আগে সে তোমাদের সাথে কথা বলবে। তোমরা প্রশ্ন কর, লিশুয়া সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে। তাইনা লিশুয়া।
লিশুয়া মাথা নাড়ল এবং ক্রিনিটি বুঝতে পারল লিন্ডয়া আসলে সত্যিকারের মানব শিশু নয়। এটি জোড়াতালি দিয়ে মানবশিশুর মতো তৈরি করা একটি নিচু শ্রেণীর রোবট। ক্রিনিটি তখন রোবটদের ভিড় ঠেলে বের হয়ে যেতে শুরু করে।
ছিমছাম রোবটটি বলল, এই যে! এই যে রূপবান! তুমি চলে যাচ্ছ।
কেন?
ক্রিনিটি বলল, এটি সত্যিকার মানবশিশু নয়।