নিকি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আরেকজন মানুষের সাথে দেখা হলে আমি তাকে কী বলব?
আমি তোমাকে বলেছি তোমার সেটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি তখন নিজেই বুঝতে পারবে কী বলতে হবে।
কী মজা হবে তখন, তাই না ক্রিনিটি?
ক্রিনিটি মজা শব্দটি অনুভব করতে পারে না, কিন্তু সে সেটি নিকিকে বুঝতে দিল না।
সন্ধ্যেবেলা রোবোনগরী পৌঁছানোর অনেক আগেই বাইভার্বালের মনিটরে তার উপস্থিতি ধরা পড়ল। সেখানে অনেকগুলো বিন্দু বিন্দু আলো এবং বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের বিচ্ছুরণ দেখা গেল। নিকি সেদিকে তাকিয়ে বলল, অনেক হইচই হচ্ছে। তাই না ক্রিনিটি?
হ্যাঁ।
সেখানে রোবটগুলো কয় মাত্রার?
বেশিরভাগই চার মাত্রার। হয়তো কিছু তিন মাত্রার।
তারা আমাকে দেখলে কী করবে?
আমি এখনও জানি না। সেজন্যে আমি সাবধান থাকতে চাইছি।
কিভাবে তুমি সাবধান থাকবে?
তোমাকে আমি আগেই নিয়ে যাব না। আমি নিজে গিয়ে আগে দেখে আসি।
আমাকে কোথায় রেখে যাবে?
তোমার জন্যে একটি নিরাপদ আশ্রয় বের করে সেখানে রেখে যাব।
আমি একা একা থাকব?
হ্যাঁ।
আমার একা থাকার ইচ্ছে করছে না।
ক্রিনিটি তার কপোট্রনে মৃদু চাপ অনুভব করল। সে চাপটি কমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে জিজ্ঞেস করল, তাহলে তুমি কী করতে চাও?
আমি তোমার সাথে যেতে চাই।
তোমাকে দেখলেই রোববানগরীতে বিশাল উত্তেজনার সৃষ্টি হবে। সেটি ভালো হবে না খারাপ হবে আমি সেটি এখনো অনুমান করতে পারছি না। আমি তোমাকে নিয়ে কখনো কোনো ঝুঁকি নেব না।
ঠিক আছে আমি তাহলে লুকিয়ে থাকব।
কোথায় লুকিয়ে থাকবে?
এই বাইভার্বালের পিছনে যে বাক্সটা আছে তার ভেতরে। তাহলে কেউ আমাকে দেখতে পাবে না।
ক্রিনিটি বলল, বাক্সটা বেশি বড় না, তুমি কি আরাম করে থাকতে পারবে?
হ্যাঁ পারব। আমি গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে যাব। তুমি কোনো চিন্তা করো না।
ঠিক আছে। ক্রিনিটি বলল, আমার মনে হয়, এটি একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে।
কাজেই বাইভার্বালটি থামিয়ে তার পেছনের বাক্সে বেশ খানিকটা জায়গা করে নিয়ে ক্রিনিটি সেখানে নিকিকে শুইয়ে দিল। জিজ্ঞেস করল, তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
না। এখানে খুব আরামে ঘুমানো যাবে। এখন থেকে প্রত্যেকদিন আমি এখানেই ঘুমাব।
ঠিক আছে, তুমি ঘুমাও। আমি বাইভার্বালটিকে নিয়ে রোবোনগরীতে ঢুকি।
রোববানগরের গেটে দুটি ভয়ংকর দর্শন রোবট ক্রিনিটির বাইভার্বালটিকে থামাল। একজন জিজ্ঞেস করল, তুমি এই কিম্ভুতকিমাকার জঞ্জাল নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?
এটি কিম্ভুতকিমাকার জঞ্জাল নয়। এটি বাইভার্বাল।
এটি এতো পুরানো যে এটাকে জঞ্জাল বলা যায়। যাই হোক তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আমি রোববানগরীর ভেতরে যেতে চাই।
তোমার কী লাইসেন্স আছে?
না। আমার লাইসেন্স নেই। আমি অনেকদূর থেকে এসেছি। আমি আগে কখনো রোবোনগরীতে যাইনি।
সেটি আমি তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি। তোমার কপোট্রন থেকে এখনো প্রাচীন কোডিং রেডিয়েট করছে।
আমি কী করতে পারি?
তোমাকে আমি সাময়িক একটি লাইসেন্স দিচ্ছি, চব্বিশ ঘণ্টার। এর মাঝে তোমাকে স্থায়ী লাইসেন্স করাতে হবে।
ঠিক আছে।
রোবটটি তার কিছু যন্ত্রপাতিতে চাপ দিতেই ক্রিনিটি তার কপোট্রনে কিছু তথ্যেরে অনুপ্রবেশ টের পেল। সে কপোট্রনটিকে দ্রুত ফায়ারওয়াল দিয়ে ঢেকে ফেলে। তার কপোট্রনে তথ্য ঢুকে গেলে সমস্যা নেই, কিন্তু কোনোভাবে। সেখান থেকে তথ্য বের করে নিলে তারা নিকির তথ্য জেনে নেবে।
ভয়ংকর দর্শন রোবটটি বলল, যাও। তোমার এই লক্করঝক্কর বাইভার্বালটি নির্দিষ্ট জায়গায় পার্ক করে নিও। আমরা কোডিং দিয়ে দিচ্ছি।
ঠিক আছে। তোমার কাছে কি কোনো ইউনিট আছে?
না নেই।
রোবটটি শীষ দেয়ার মতো শব্দ করে বলল, তাহলে তুমি স্ফূর্তি করবে। কেমন করে। রোববানগরীতে এসেছ ফূর্তি না করে চলে যাবে?
আমি তৃতীয় মাত্রার রোবট। আমার ভেতরে স্ফূর্তি করার মডিউল নেই!
রোবোনগরীতে সস্তায় এই মডিউল লাগানো হচ্ছে। লাগিয়ে নিয়ে স্ফূর্তি করতে পারবে। সত্যি কোনো ইউনিট নেই।
না। তবে—
তবে কী?
আমি একটি মানুষ পরিরারের গৃহস্থালি রোবট হিসেবে কাজ করতাম। সেই পরিরারের অব্যবহৃত কিছু ইউনিট আমার কাছে আছে। খুবই কম।
বল কী? এটি তো সোনার খনি। সোনার খনি?
হ্যাঁ। মানুষের হাতের স্পর্শ পাওয়া ইউনিট রীতিমতো মূল্যবান বস্তু। এর একটি বিক্রি করেই তুমি বড়লোক হয়ে যাবে। মানুষের যে কোনো কিছু খুবই মূল্যবান।
ক্রিনিটি নিজের কপোট্রনে একধরনের চাপ অনুভব করল, সে চাপটি কমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল, তারপর বলল, মানুষের যে কোনো কিছুই মূল্যবান?
হ্যাঁ। মানুষের চুল। নখ। ব্যবহারী কাপড়। এমনকি মানুষের আসল ভিড়িও অনেক ইউনিটে বিক্রি হয়। তোমার কাছে কি কিছু আছে?
আমি গৃহস্থালি রোবট হিসেবে কাজ করেছি, কাজেই আমার কাছে কিছু আছে।
চমৎকার। বিক্রি করে তুমি রাতারাতি ধনী হয়ে যাবে। কপোট্রনের আপগ্রেড করে চারমাত্রায় চলে যেতে পারবে। নতুন পৃথিবী উপভোগ কর।
ক্রিনিটি বলল, আমি চেষ্টা করব।
রোবট দুটি সুইচ টিপে দিতেই ঘরঘর শব্দ করে গেটটা খুলে যায়, ক্রিনিটি তার বাইভার্বালটি নিয়ে রোববানগরীর ভেতর ঢুকল।
রাস্তায় নানা আকারের বাইভার্বাল, আধুনিক এবং স্বয়ংক্রিয়। সেগুলোর তুলনায় তার নিজের বাইভার্বালটি রীতিমতো হাস্যকর একটি যন্ত্র। চতুর্থ মাত্রার কিছু রোবট মাথা ঘুরিয়ে সেটি দেখছে। ক্রিনিটি অনুমান করতে পারে হাসার ক্ষমতা থাকা এই রোবটগুলো নিশ্চয়ই তার বাইভার্বালটিকে দেখে মনে মনে হাসছে।