বিভৎস দর্শন একটি রোবট বলল, চল, আমাদের সাথে চল। আমাদের কন্ট্রোল রুমে নেটওয়ার্ক সংযোগ আছে।
নিকি বলল, আমি কন্ট্রোল রুমে যেতে চাই না। নেটওয়ার্ক দেখতে চাই।
ক্রিনিটি জিজ্ঞেস করল, তাহলে তুমি কী করতে চাও?
আমি জায়গাটি ঘুরে ঘুরে দেখতে চাই।
এটি অপরিচিত জায়গা। তোমার যদি কোনো বিপদ হয়?
মাঝারি আকারের বিদঘুটে একটি রোবট বলল, আমি মহামান্য নিকিকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদান করব।
সাথে সাথে আরো কয়েকটি রোবট বলল, আমরাও মানব সন্তান মহামান্য নিকিকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে পারি।
ক্রিনিটি বলল, তা হলো আমরা দুইভাগে ভাগ হয়ে যেতে পারি। কয়েকজন আমার সাথে এসো, অন্যেরা নিকির সাথে থাকো।
বিভৎস রোবটটি বলল, ঠিক আছে।
বিশাল একটি বিল্ডিং-এর পাশে একটি কৃত্রিম হ্রদ। হ্রদটি ঘিরে বড় বড় গাছ। সেই গাছে পাখি কিচিরমিচির করছে। নিকি মাথা তুলে পাখিগুলোকে দেখার চেষ্টা করল।
একটি রোবট বলল, মহামান্য নিকি? পাখিগুলোর চেঁচামেচি কী আপনাকে বিরক্ত করছে? আমি তাহলে এই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে পাখিগুলোকে শেষ করে দিতে পারি।
নিকি আঁতকে উঠে বলল, না, না, না! খবরদার পাখিগুলোর কখনো কোনো ক্ষতি করবে না।
আপনার ইচ্ছা মহামান্য নিকি। আপনি যেটি বলবেন সেটিই আমরা মেনে নেব।
নিকি হি হি করে হেসে বলল, আর আমাকে মহামান্য নিকি বলে ডেকো না! যখন আমাকে তোমরা মহামান্য নিকি বলে ডাকো তখন আমার যা হাসি পায় সেটি বলার মতো না। হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যথা হয়ে যায়।
রোবটটি বিড় বিড় করে বলল, হাসি এবং ব্যথা এই দুটিই একটি মানবিক প্রক্রিয়া। আমরা এই প্রক্রিয়াগুলো বুঝি না।
নিকি গম্ভীর হয়ে বলল, ভাগ্যিস ক্রিনিটি এখানে নেই। সে থাকলে বলত তোমাদের বুদ্ধিমত্তা কম! ক্রিনিটি সারাক্ষণ আমাকে শুধু বুদ্ধিমত্তা বোঝানোর চেষ্টা করে।
রোবটগুলো কোনো কথা বলল না। নিকি বলল, আমার কী মনে হয়। জানো?
কী?
ক্রিনিটির নিজেরই বুদ্ধিমত্তা কম।
রোবটগুলো এবারেও কোনো কথা বলল না। নিকি বলল, তবে ক্রিনিটির মনটি খুব ভালো। সে আমাকে খুব ভালোবাসে।
০৫. রোবটগুলো বাইভার্বালটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল
রোবটগুলো বাইভার্বালটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল। ক্রিনিটি ইঞ্জিনটিকে চালু করার সাথে সাথে তারা হাতের অস্ত্র উপরে তুলে চিৎকার করে বলল, জয়, মহামান্য নিকির জয়।
নিকি হাসি মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, বিদায়! আবার দেখা হবে তোমাদের সাথে।
রোবটগুলো গম্ভীরমুখে বলল, মহামান্য নিকি দীর্ঘজীবী হোন।
বাইভার্বালটি মাটি থেকে মিটার খানেক উপরে উঠে একটু কাত হয়ে ঘুরে গিয়ে ছুটে যেতে শুরু করে। নিকি মাথা ঘুরিয়ে দেখল রোবটগুলো তাদের অস্ত্র উপরে তুলে আবার চিৎকার করে বলল, জয়, মহামান্য নিকির জয়।
নিকি ক্রিনিটির দিকে তাকিয়ে বলল, ক্রিনিটি, এরা আমাকে সবসময় মহামান্য নিকি কেন বলে?
তাদের কপোট্রনে এটি ইলেকট্রনিকভাবে গেঁথে দেয়া আছে। পাকাপাকিভাবে? সবসময় তাদের মানুষকে সম্মান করতে হয়।
সব রোবটরাই কী এরকম?
না। এটি করা আছে শুধু দ্বিতীয় আর প্রথম মাত্রার রোবটে।
তোমার মাঝে নেই?
আমার মাঝে ওদের মতো হার্ডওয়্যার করা নেই। অন্যভাবে আছে। সিস্টেমে রাখা আছে। আমরাও মানুষকে গুরুত্ব দিই।
আর চতুর্থ মাত্রার রোবট?
তারাও মানুষকে গুরুত্ব দেয় কিন্তু তাদের কপোট্রনের দক্ষতা মানুষের মস্তিষ্কের সমান। তাই তারা সমান সমানভাবে গুরুত্ব দেয়।
আর পঞ্চম মাত্রার রোবট?
পৃথিবীতে পঞ্চম মাত্রার রোবট নেই।
কেন নেই?
তৈরি করা হয় নি। আমি তোমাকে বলেছি তাদের বুদ্ধিমত্তা মানুষের। বুদ্ধিমত্তা থেকে অনেক বেশি হবে তাই ইচ্ছে করে তৈরি করা হয় নি। আমার কি মনে হয় জানো?
কী?
পঞ্চম মাত্রার রোবট মানুষকে মনে হয় সম্মান করবে না। তাদের বুদ্ধিমত্তা যদি মানুষ থেকে বেশি হয় তাহলে তাদের সম্মান করার দরকারও নেই। তুমি কী মিক্কুকে সম্মান কর?
নিকি খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, কিন্তু আমি তো মিকুকে অনেক ভালোবাসি। পঞ্চম মাত্রার রোবট মানুষকে ভালোবাসবে না?
মনে হয় ভালোবাসবে। মানুষকে ভালোবাসতে হয়।
ক্রিনিটি বাইভার্বালটিকে একটি হ্রদের কাছাকাছি নিয়ে এলো, হ্রদের তীর ঘেঁষে বাইভার্বালটি গর্জন করে ছুটে যেতে থাকে। বাইভার্বালের শব্দ শুনে অসংখ্য পাখি সচকিত হয়ে উড়ে যেতে থাকে। নিকি পাখিগুলোকে দেখতে দেখতে ক্রিনিটিকে জিজ্ঞেস করল, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ক্রিনিটি?
একটি রোবোনগরীতে।
রোববানগরী কী?
পৃথিবীর সব মানুষ মরে যাবার পরে রোবটেরা পৃথিবীর দায়িত্ব নিয়েছে। তারা নগর তৈরি করেছে। সেই নগরকে বলে রোবোনগরী।
সেখানে কী আছে ক্রিনিটি?
আমি এখনো জানি না। এখানে রোবটদের যে নেটওয়ার্ক আছে সেই নেটওয়ার্কে একটু খোঁজ নিয়েছি। মানুষের শহরে যা যা থাকার কথা মনে হয় তার সবই আছে। সিনেমা হল, আর্ট গ্যালারি, মিউজিক হল, স্টেডিয়াম, দোকানপাট।
সবকিছু রোবটদের জন্যে?
হ্যাঁ। সবকিছু রোবটদের জন্যে।
সেখানে কী আমার মতো কোনো মানুষ আছে?
এখনো জানি না। গেলে বুঝতে পারব। আমার মনে হয় নাই। গেলে। খোঁজ পাব, অন্য কোনো রোবোনগরীতে আছে কি নেই। যতক্ষণ না পাই আমরা খুঁজতে থাকব।
তোমার কি মনে হয় ক্রিনিটি, আমরা কি খুঁজে পাব?
আমার মনে হয় পাব। তুমি যেরকম বেঁচে গিয়েছ সেরকম নিশ্চয়ই আরো কেউ বেঁচে গিয়েছে। তারা নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও আছে।